শরীয়তপুরঃ জেলার জাজিরা উপজেলায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোরীকে ধর্ষণচেষ্টার শাস্তি হিসেবে তিন সন্তানের জনককে জুতাপেটা করা হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় (৬ অক্টোবর) বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানাজানি হয়।
গত ৩ অক্টোবর রাতে জাজিরা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড বড় মুলনা তালুকদার কান্দী গ্রামে সালিশ বৈঠকে আবু তালেব ঢালীকে (৪৫) জুতাপেটা করা হয়। আবু তালেব ঢালী বড় মুলনা তালুকদার কান্দি গ্রামের আজিদ ঢালীর ছেলে। সে পেশায় রিকশাচালক।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আবু তালেব ঢালী গত ২ অক্টোবর দুপুরের দিকে তার প্রতিবেশী দরিদ্র পরিবারের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক কিশোরীকে পেছন থেকে মুখ চেপে বাড়ির পাশে বাবুল শিকদারের একটি ফাঁকা ঘরে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় ওই কিশোরীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে আবু তালেব ঢালী পালিয়ে যায়।
বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলে গত ৩ অক্টোবর রাতে ওই এলাকায় সালিশ বৈঠক হয়। সালিশ বৈঠকে এলাকার খোকন তালুকদার, এসকান তালুকদার, মাস্টার মান্নান ঢালী, সোহরাবসহ কয়েকজন সালিশে উপস্থিত ছিলেন। সালিশে ওই কিশোরীকে ধর্ষণচেষ্টার শাস্তি হিসেবে তার মায়ের কাছে মাফ চাওয়া ও ৫০টি জুতাপেটার সিদ্ধান্ত হুকুম দেন সালিশের মাতব্বররা। পরে অভিযুক্তের মা জুতাপেটা করেন।
সালিশকারকদের প্রধান খোকন তালুকদার বলেন, এলাকায় একটা ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে এলাকায় যাতে অশান্তি সৃষ্টি না হয় সে কারণে এলাকার মুরব্বিরা বসে বিষয়টি মিমাংসা করে দিয়েছেন।
ওই কিশোরীর বাবা দুইমাস আগে মারা গেছেন। মা ছাড়া কিশোরীর কেই নেই। মা মেয়ে দুজনেই সরল টাইপের। তারা খুবই গরিব ও অসহায়। মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় চলে তাদের জীবন। ঘটনার পর কিশোর ও তার মা লোকলজ্জার ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
কিশোরী বলেন, আবু তালেব ঢালী এর আগেও কয়েকবার আমাকে উত্যক্ত করছে, কুপ্রস্তাব দিয়েছে। আমি তা মায়ের কাছে বলার পর মা তার পরিবার কাছে বলেছে এরকম আর না করতে। কিন্তু তারপরও সে ভালো হয়নি। আমাকে একা পেয়ে পেছন থেকে মুখ চেপে ঘরে নিয়ে নষ্ট করতে চাইছে। আমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে এলাকার লোকজন সালিশ বৈঠক করে তাকে ৫০টি জুতাপেটার হুকুম দেয়। পরে তার মা তাকে হালকাভাবে কয়কটি জুতা দিয়ে মারে। এ ঘটনার পর আমি আমি লজ্জায় ঘর থেকে বের হতে পারছি না। আমরা গরিব অসহায় বলে সে আমার সঙ্গে এরকম জঘন্য কাজ করতে পারছে।
কিশোরী মা বলেন, আবু তালেব ঢালী আমার মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করার চেষ্টা করছে। এলাকার মাদবররা সালিশ বৈঠক করে তার বিচার করছে। তারা তাকে আমার কাছে মাফ চাইতে বলছে এবং ৫০টি জোতাপেটার হুকুম দিছে। সালিশদের হুকুমে আবু তালেবের মা আবু তালেবকে কোনোরকম হালকাভাবে জুতা দিয়ে করেকটি বাড়ি দিছে। তাদের এ বিচার আমাদের মনপুত হয় নাই। আমরা গরিব অসহায় বলে থানায় গিয়ে মামলা করারও সামর্থ নাই। দুই মাস হয় আমার স্বামী মারা গেছে। এই একটা মাত্র মেয়ে ছাড়া আমার কেউ নাই। মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় এই মেয়েকে নিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি। আমরা গরীব অসহায় বলে আমাদের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করছে। আল্লাহ ছাড়া আমাদের বিচার দেওয়ার মতো কেউ নাই।
অভিযুক্ত আবু তালেব ঢালী বলেন, আমি ওই ঘরে তাস রেখেছিলাম। তাস আনতে ওই ঘরে গিয়ে দেখি ওই মেয়ে ঘরে। তখন আমি ঘর থেকে বের হয়ে যাই। পরে এলাকার লোকজন আমার বিরুদ্ধে বদনাম রটায় আমি নাকি ওই মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করতে গেছি। পরে এলাকার লোকজন সালিশ বৈঠক করে এর বিচার করেছে। আমার মা আমাকে জুতা দিয়ে বারি মারেছে। আমি দোষ না করলেও এখন আমি দুষি। তাই আমি সবকিছু মেনে নিয়েছি। এ বিষয়ে আমার কোন অভিযোগ নাই।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওই কিশোরীর পক্ষ থেকে অভিযোগ নিয়ে থানায় কেউ আসেনি। অভিযোগ নিয়ে আসলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৭/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তা