মহিলা ডেপুটি জেলার পদে পুরুষ প্রার্থীর সুপারিশ পিএসসির
৪০তম নন-ক্যাডার নিয়োগে ভুল সুপারিশের অভিযোগ চার শতাধিক
ঢাকাঃ ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডারে কারা অধিদপ্তরের ডেপুটি জেলার পদে আবেদন করেছেন আবুল কালাম আজাদ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে এই অধিদপ্তর। ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, মহিলা ডেপুটি জেলার পদে তাঁকে সুপারিশ করা হয়েছে। আবার একই পদের জন্য নির্বাচিত নারীকে সুপারিশ করা হয়েছে ডেপুটি জেলার (পুরুষ) পদে।
বিষয়টি জানাজানি হলে তা সংশোধনের পর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন—পিএসসি।
নন-ক্যাডার পদে আজাদের মতো এমন ভুল সুপারিশের অভিযোগ করেছেন ৪০তম বিসিএসের চার শতাধিক প্রার্থী। তাঁরা ফল পুনর্নিরীক্ষণে পিএসসিতে আবেদন করেছেন। এই বিসিএসে যাঁরা ক্যাডার পদ পাননি, তাঁদের পছন্দক্রমের ভিত্তিতে নন-ক্যাডারে নবম থেকে ১৩তম পদে নিয়োগ সুপারিশ করে পিএসসি।
এতে মোট তিন হাজার ৬৫৭ প্রার্থীকে নিয়োগ সুপারিশ করা হয়।
নন-ক্যাডার পদের প্রার্থীসহ সুপারিশপ্রাপ্তদের অভিযোগ, ফলাফল প্রকাশে কারিগরি ও পদ্ধতিগত ব্যাপক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। পুরুষদের কোটায় মহিলা ও মহিলাদের কোটায় পুরুষ প্রার্থীদের সুপারিশ করেছে পিএসসি। আবার এমন সব পদে নিয়োগ সুপারিশ করা হয়েছে, যেখানে যোগদান করার জন্য প্রার্থীদের কাঙ্ক্ষিত উচ্চতা নেই।
কিছু বিষয়ে আবেদনের সুযোগ দিলেও কোড না থাকার কারণে সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন প্রার্থীরা। এ ছাড়া পছন্দক্রমে ব্যাপক ভুলভ্রান্তি, নির্দিষ্ট পদে আবেদন করার পরও ভিন্ন পদে নিয়োগ সুপারিশ ও পছন্দক্রম শূন্য দেখানোসহ বিভিন্ন কারণে অনেকে সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব ত্রুটি উল্লেখ করে পিএসসিতে ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন জানিয়েছেন প্রার্থীরা।
এ বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন করা হচ্ছে। এতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা একেবারে শূন্যের কোঠায়।
এ ছাড়া আমরা সফটওয়্যারের পাশাপাশি ম্যানুয়ালি একজন পিএসসি সদস্য ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে প্রতিটি আবেদন পুনরায় যাচাই করে থাকি।’
অভিযোগগুলোর বিষয়ে সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘এ ধরনের অনেক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তবে আবেদনকারীর নাম আলাদা হলেও অভিযোগের ধরন এক। সুপারিশপ্রাপ্তির পর অনেক প্রার্থী এভাবে অভিযোগ করে থাকেন। অভিযোগগুলো যাচাই করে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি।’
সুপারিশপ্রাপ্তদের অভিযোগ
১১তম গ্রেডে ডেপুটি জেলার পদে নিয়োগ সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন আব্দুর রহমান (ছদ্মনাম)। অভিযোগে তিনি বলেন, ‘আবেদনে শুধু নবম গ্রেড ও টেকনিক্যাল পদগুলো পছন্দক্রমে রাখা হয়েছিল। যে পদে নিয়োগ সুপারিশ করা হয়েছে, সেই পদের জন্য আমার কাঙ্ক্ষিত উচ্চতা নেই। ফলে সুপারিশপ্রাপ্তির পরও চাকরি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না।’
৪০তম বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে আবেদন করেছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘অনলাইনে আবেদনের সময় পছন্দক্রমে শুধু নবম গ্রেড রাখা হয়েছিল। ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, ১২তম গ্রেডে ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ সুপারিশ করা হয়েছে। এ সময় আবেদন কপিতে দেখা যায়, পছন্দক্রমে নবম গ্রেডের পরিবর্তে ১১ থেকে ১৩তম গ্রেড উল্লেখ রয়েছে।’
নিয়োগ সুপারিশপ্রাপ্ত রায়হান কবির বলেন, ‘আমি নবম গ্রেড ছাড়া কোনো পছন্দক্রম দিইনি। কিন্তু আমাকে ১১তম গ্রেডে ডেপুটি জেলারের পদে সুপারিশ করা হয়েছে।’
পিএসসি কর্মকর্তারা জানান, কম্পিউটারের দোকান থেকে অনেক প্রার্থী আবেদন ফরম পূরণ করে থাকেন। সেখানে ভুল হতে পারে। নিজেরা ফরম পূরণের সময়ও কিছু প্রার্থী ভুল করে থাকতে পারেন। আবেদনের সময়সীমা পর্যন্ত ফরমের তথ্য পরিবর্তনের সুযোগ থাকে। সংশোধন করতে গিয়েও কিছু প্রার্থী সঠিকভাবে ফরম পূরণে ব্যর্থ হন। এসব কারণে পছন্দক্রম ভুল হয়ে থাকতে পারে।
অনেক পদ ফাঁকা থাকার শঙ্কা
সুপারিশপ্রাপ্তসহ সুপারিশবঞ্চিত বেশ কয়েকজন প্রার্থী জানান, পছন্দক্রমের শুরুতে প্রার্থীরা ইংরেজি, গণিত, কম্পিউটার, রসায়নসহ জেনারেল পদের পর টেকনিক্যাল পদগুলো রেখেছিলেন। প্রকাশিত ফলে দেখা যায়, এসব পদ ফাঁকা রেখেই নিচের গ্রেডের টেকনিক্যাল পদগুলোতে তাঁদের সুপারিশ করা হয়েছে।
পিএসসি বলছে, এসব পদে সুপারিশ করার মতো যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়নি। এতে ১২তম গ্রেডের সাধারণ পদগুলোর মধ্যে প্রায় ২০০ পদ ফাঁকা থেকে যাবে। প্রার্থীরা বলছেন, ভুল সুপারিশের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এ ছাড়া ৪১তম বিসিএসে ক্যাডার পদ পাওয়া প্রার্থীরা ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডারে নিয়োগ সুপারিশ পেয়েছেন। এসব প্রার্থীসহ সরকারি অন্য চাকরিজীবীদের নন-ক্যাডারে সমপদ বা নিচের গ্রেডে সুপারিশ করেছে পিএসসি। সেই হিসাবে প্রায় ৮০০ প্রার্থী ৪০তম বিসিএসে নন-ক্যাডার হিসেবে সুপারিশ পেয়েও যোগদান না করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, পিএসসির নিয়োগে মেধা স্কোর প্রকাশিত হয় না। ফলে নিয়োগ সুপারিশকে প্রশ্নবিদ্ধ করারও সুযোগ থাকে না। পিএসসির নিজস্ব দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা থেকে সমস্যা চিহ্নিত করা বা সমাধানের উদ্যোগ না নিলে কারো কিছু করার থাকে না। প্রার্থীরা যদি মনে করেন, তাঁদের অভিযোগ সঠিক, তবে শেষ চেষ্টা হিসেবে তাঁরা আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন। এ ছাড়া তাঁদের আর কোনো পথ নেই।
নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়োগ সম্পন্ন করার প্রত্যাশা জানিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, একজন প্রার্থী অনেক কষ্ট করে বিসিএস পরীক্ষা দেন। সোনার হরিণ হাতছাড়া হলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের মধ্যে হতাশা তৈরি হতে পারে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৪/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়