১০ প্রধান শিক্ষক ও ২৭ সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম!
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
চট্টগ্রামঃ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১০ প্রধান শিক্ষক ও ২৭ সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিজ্ঞপ্তিতে ননএমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আবেদন করার সুযোগ না থাকলেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এমন ছয়জনকে। অপরদিকে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ পাননি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। এতে সেবা সংস্থাটির অন্তত ৫ কোটি টাকা গচ্চা যাবে।
শুধু তাই নয়, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজনের শূন্য পদের স্থলে দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে যোগ্য এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাদ দিয়ে নিয়োগ দিয়েছেন ‘অযোগ্যদের’। এতে চসিক পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সূত্র জানায়, ৪ মে চসিকের ৩২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের ৩৭টি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তির অন্যতম শর্ত ছিল আবেদনকারীকে অবশ্যই এমপিওভুক্ত শিক্ষক হতে হবে। এমনকি আবেদনকারীকে আগের স্কুলের প্রথম ও শেষ এমপিও’র কপি জমা দিতে হবে। এমন বিজ্ঞপ্তি প্রচারের পরও ননএমপিওভুক্ত শিক্ষক কীভাবে আবেদন করলেন ও নিয়োগ পেলেন তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এই ছয় ননএমপিওভুক্ত শিক্ষকের জন্য চসিককে কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হবে। কারণ এই ৬ পদে এমপিওভুক্ত শিক্ষকের পদ যেমন দখল হয়ে গেছে, তেমনি ননএমপিওভুক্ত শিক্ষকের বেতন ও উৎসব ভাতা মিলিয়ে প্রত্যেক জনের জন্য বছরে প্রায় চার লাখ টাকা খরচ হবে। এই হিসাবে ৬ জন শিক্ষকের পেছনে অবসরে যাওয়া পর্যন্ত নূন্যতম ১৫ বছরে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় হবে। অথচ এমপিওভুক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলে প্রত্যেকে গড়ে ৩০ হাজার টাকা করে সরকারের কাছ থেকে পেত। এছাড়া প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে সরাইপাড়া সিটি করপোরেশন উচ্চবিদ্যালয়ে একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য বলা হলেও সেখানে দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেখানেও বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগে রয়েছে। স্কুলের দুই শিফটে পৃথক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ায় করপোরেশনের ভর্তুকি খাতে যোগ হবে আরও কয়েক কোটি টাকা। চসিকের অন্তত ১০ শিক্ষককে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। প্রত্যেকে একাধিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও বাদ দেওয়া হয়েছে তাদেরকে। এর মধ্যে নগরীর সরাইপাড়া সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মৃনাল কান্তি নাথ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত মেনে ৮ স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করেছিলেন। পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত ৮ প্রতিষ্ঠানে (সরাইপাড়া, কাট্টলী, হাজী আবদুল আলী, শহিদ নগর, হোসেন আহম্মদ, বাগমনিরাম, জামালখান কুসুমকুমারী ও দক্ষিণ পতেঙ্গা) লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হন তিনি। তবে অদৃশ্য কারণে এমপিওভুক্ত এ শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। একইভাবে বলুয়ারদীঘি সিটি করপোরেশন উচ্চবিদ্যালয়ের এমপিওভুক্ত সিনিয়র শিক্ষক ৭টি স্কুলে (বলুয়ারদীঘি, পাথরঘাটা মেনকা, চরচাকতাই, হাজী আবদুল আলী, হোসেন আহম্মদ, মহব্বত আলী ও আইয়ুব বিবি) উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ পাননি। এছাড়া হালিশহর মহব্বত আলী সিটি করপোরেশন উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক তপন দেবনাথ পাঁচটি স্কুলে (কাট্টলী, পূর্ব বাকলিয়া, আইয়ুববিবি, অপর্ণাচরণ ও শৈলবালা) এবং পূর্ব বাকলিয়া সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের সিনিয়র শিক্ষক অজয় চক্রবর্তী চারটি স্কুলের (বলুয়ারদীঘি, চরচাকতাই, বাগমনিরাম ও শহীদ নগর) লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও কোনোটিতে নিয়োগ পাননি। অপরদিকে আবেদন করার যোগ্যতা না থাকলেও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ননএমপিওভুক্ত ৬ শিক্ষককে।
নিয়োগ দেওয়া এই ছয়জন হলেন-ফতেয়াবাদ শৈলবালা সিটি করপোরেশন স্কুলে আকতার হোসেন, বলুয়ারদিঘি সিটি করপোরেশন উচ্চবিদ্যালয়ে সৈয়দ করিম, পূর্ব মাদারবাড়ি সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে নুরুল আজিজ, বাগমনিরাম আবদুর রশিদ সিটি করপোরেশন উচ্চবিদ্যালয়ে সেকান্দার পাশা, কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে এটিএম গোলাম মোস্তাফা ও সরাইপাড়া সিটি করপোরেশন উচ্চবিদ্যালয়ে বিলকিস জাহান।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, চসিক শিক্ষা খাতে অনেক ভর্তুকি দিয়ে থাকে। এ কারণে এমপিওভুক্ত শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। তবে ননএমপিওভুক্ত শিক্ষকরাও আবেদনের সুযোগ চেয়ে মেয়রের কাছে অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তাদেরকেও সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সূত্রঃ যুগান্তর
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২১/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়