১০ ছাত্রী পড়িয়ে বেতন নিচ্ছেন ১২ শিক্ষক

বড়ালঘাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

নাটোরঃ জেলার বাগাতিপাড়ায় এক বিদ্যালয়ে ১২ জন শিক্ষক পড়াচ্ছেন মাত্র ১০ জন শিক্ষার্থীকে। বিদ্যালয়টির নাম বড়ালঘাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

জানা যায়, সেখানে ১০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন ১২ জন শিক্ষক। কাগজে-কলমে ১৪৫ জন শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করা থাকলেও বাস্তবে রয়েছে ১০ জন ছাত্রী।

উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া এলাকায় ১৯৯৫ সালে ১২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। শর্ত পূরণ ও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১৪০ জন শিক্ষার্থী থাকায় ২০০২ সালে সাত শিক্ষক ও তিন কর্মচারীসহ এমপিওভুক্ত হয়। ২০১০ সালে নবম ও দশম শ্রেণির পাঠদানের অনুমতি মেলে।

২০১৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় দুজন শিক্ষার্থী এ প্লাসও পায়।

তার পর থেকে শিক্ষক, কর্মচারী ও পরিচালনা কমিটির দ্বন্দ্বে শিক্ষার্থী হারাতে থাকে বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জানায়, নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় একটি শ্রেণিকক্ষেই চারটি শ্রেণির মোট ১০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান চলে। সব শ্রেণির শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে না। অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে। আবার কোনো শ্রেণিতে শিক্ষার্থীই নেই।

শিক্ষার্থীরা জানান, বিদ্যালয়টির নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় একটি শ্রেণিকক্ষেই চারটি শ্রেণির মোট ১০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান চলে। সব শ্রেণির শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে না। অনেকের বিয়ে হয়েছে। আবার কোনো শ্রেণিতে শিক্ষার্থীই নেই। এমনকি কম শিক্ষার্থী নিয়েও শিক্ষকরা নিয়মিত পাঠদান করেন না বলে অভিযোগ করেন তারা।

স্থানীয় অভিভাবকরা বলেন, শিক্ষকদের অনিয়মের কারণে শিক্ষার্থী হারাচ্ছে বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মেয়েরাই অন্য বিদ্যালয়ে পড়ে। বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক জুলফিকার আলী বলেন, ‘নতুন ভবনের নির্মাণকাজ চলমান। তাই কক্ষ সংকটে একই কক্ষে চলছে পাঠদান। ভবন নির্মাণ শেষ হলে এই সমস্যা থাকবে না।’

বড়ালঘাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গণেশ চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘সাবেক প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে পরিচালনা কমিটির সদস্যদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ছিল। চলতি বছর মে মাসে অবসরগ্রহণের পর বিদ্যালয় নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেন সাবেক প্রধান শিক্ষক। এতে বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। তবে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ফেরাতে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘অবসরে যাওয়ার পরে আগের হিসাব চাওয়ায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পাঠাতে বাধা সৃষ্টি করছেন সাবেক প্রধান শিক্ষক। এ ছাড়া নানা ষড়যন্ত্র করছেন তিনি।’

এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে সাবেক প্রধান শিক্ষক মুনছুর রহমান বলেন, ‘আমি কোনো অনিয়ম করিনি। বিদ্যালয় ছাড়ার আগে সব হিসাব-নিকাশ মিটিয়ে এসেছি। বিদ্যালয়টি নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে না। শিক্ষকদের অবহেলায় সঠিক পাঠদান ব্যাহত হয়ে শিক্ষার্থী হারাচ্ছে বিদ্যালয়টি।’ ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও করেন তিনি।

এ বিষয়ে বাগাতিপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বড়ালঘাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০১/১০/২০২৩   

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়