হিরো আলম ব্যর্থতার চিত্র নির্মাণের সফল পরিচালক

কাকন রেজা :

মানুষ কতটা অসহায় হলে হিরো আলমে মুক্তি খোঁজে। অ্যাস্টাব্লিশমেন্টের সমুখে বুক চিতিয়ে কথা যে বলে তাকেই মানুষ হিরো হিসেবে মেনে নেয়। এই জয়টা মূলত হিরো আলমের নয়, এটা সামগ্রিক ব্যবস্থার পরাজয়। সংসদ হলো দেশের ভবিষ্যত বিনির্মাণের জায়গা। সেখানে জায়গা হবার কথা তেমন মানুষদেরই যারা ভবিষ্যত বিনির্মাণের যোগ্যতা রাখেন। সেই সংসদে যখন হিরো আলম প্রার্থিত হয়ে ওঠেন তখন কারা পরাজিত হয় তা সামান্যতম বুদ্ধি থাকলেও অনুমেয়।

স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, হাল সময়ে হিরো আলম সত্যিকার অর্থেই হিরো। তিনি মূলত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন আমাদের ব্যর্থতার জায়গাগুলো। তিনি স্বীকার করেন, তিনি অভিনয় পারেন না, গান পারেন না, তবু তিনি করেন। তিনি প্রমাণ করে দেন, আমরা নিজেরা কতটা ব্যর্থ হলে তা গ্রহণ করি। তিনি অকপটে বলেন, অন্যরা অভিনয় করে, খেলে, গান গেয়ে সংসদে যেতে পারলে তিনি পারবেন না কেন। তার এই প্রশ্নের উত্তর দেবার সক্ষমতা আমাদের নেই। তিনি এক্ষেত্রেও আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন আমাদের মানসিক অসম্পূর্ণতা ও ব্যর্থতার নজির। আমরাই প্রমোট করেছি অসংসদীয় চিন্তাকে রাজনৈতিক প্রজ্ঞাহীন ব্যবসায়ী, গাইয়ে, নাচিয়েদের সমর্থন করে।

জবরদস্তির প্রমাণও হিরো আলম। হিরো আলম প্রমাণ করে দেন, তার মতো মানুষকেও প্রতিকূলতার সম্মুখিন হতে হয়। তার বিপরীতে যারা তারা তাকেও হিসেবে নেয়। তারা কাউকেই ছাড় দিতে রাজী নন। তিনি প্রমাণ করে দেন তার বিপক্ষের ক্ষুদ্রতা। এখানেও হিরো তিনি। তিনি পুরো ব্যবস্থার ব্যর্থতার সামান্যতম অংশ অন্তত সামনে আনতে পারেন। দ্বীপ দেখে বোঝা যায় নিচে তার ডুবোপাহাড় রয়েছে। মূলত হিরো আলম সেই দ্বীপ, দ্বীপ মানেই ডুবোপাহাড়ের চূড়া।

মানুষের প্রতিবাদের প্রকাশ নানা ভাবে হয়। প্রতিবাদ যখন বাধাপ্রাপ্ত হয় তখন মানুষ বেছে নেয় কমেডিকে। কমেডি হয়ে ওঠে তাদের প্রতিবাদের ভাষা। একবার সিলেটে ছক্কা ছয়ফুর নামে একজনকে জনতা উপজেলা চেয়ারম্যান বানিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ সেখানে যারা প্রার্থী ছিলেন, তারা কেউই আমজনতার মনের মতন ছিলেন না, তাই তারা প্রতিবাদ স্বরূপ ছক্কা ছয়ফুরের মতন মানুষকে চেয়ারম্যান বানিয়েছিলেন। যিনি কিনা প্রতিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেন। এমনকি যখন রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা ছিলো তখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও বাদ দেননি। ছক্কা ছয়ফুরকে নির্বাচিত করা ছিলো প্রতিবাদেরই অংশ। যে প্রতিবাদ জবরদস্তির বিরুদ্ধে। অবশ্য তখন সেটুকু পরিবেশ ছিলো বলেই এমন প্রতিবাদ সম্ভব হয়েছিলো। এখন হিরো আলমকে সমর্থন করাটাই প্রতিবাদের অংশ মনে করছেন কেউ কেউ।

মূলত হিরো আলম আমাদের সামগ্রিক চিত্রের দৃশ্যরূপ। আমাদের প্রতিটি অক্ষমতার বিপরীত চিত্র। তিনি তার ব্যর্থতাকে স্বীকার করেই সফল হবার চেষ্টা করছেন। হিরো আলম অন্তত এটুকু দেখিয়েছেন তার লড়ার সাহস রয়েছে, যার প্রচণ্ড অভাব আমাদের। ভয়ের কাছে আমাদের আত্মসমর্পণের সেই দিকটাকেই দৃশ্যমান করেছেন হিরো আলম। বলতে পারেন আমাদের ব্যর্থতার চিত্র নির্মাণের সফল পরিচালক হিরো আলম। আর সে কারণেই হিরো আলম ক্রমাগত সত্যিকার হিরো হয়ে উঠছেন।

ফুটনোট : হিরো আলম কতটা সফল এ লেখা দিয়েই তা প্রমাণ হয়। আমাকেও ভর করতে হচ্ছে হিরো আলমের উপর, আমাদেরই অক্ষমতার চিত্র তুলে ধরতে।

লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।