মোঃ ফয়সাল আলমঃ সাশ্রয়ী, টেকসই ও জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশের মেধা ও পরিশ্রমের জয়গান প্রতিষ্ঠা হবে । । নাগরিক জীবনে এসব প্রত্যাশা পূরণ করবে আগামীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। যা সহজ করবে মানুষের জীবনযাত্রা, হাতের মুঠোয় থাকবে সবকিছু ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ ডিসেম্বর ২০২২ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (BICC) ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২২ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে সর্বপ্রথম “স্মার্ট বাংলাদেশ” গড়ার প্রত্যয়ন ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন আমরা আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে তুলবো এবং বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ । তখন থেকেই দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে “ স্মার্ট বাংলাদেশ” একটি প্রত্যয় একটি স্বপ্নে পরিণত হয় ।
স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ভিত্তি চারটি। এগুলো হচ্ছে—
1. স্মার্ট নাগরিক
2. স্মার্ট অর্থনীতি
3. স্মার্ট সরকার
4. স্মার্ট সমাজ
স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে এ চারটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে অগ্রসর হলে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের কোনো অবশিষ্ট থাকবে না। স্মার্ট নাগরিক ও স্মার্ট সরকার এর মাধ্যমে সব সেবা এবং মাধ্যম ডিজিটালে রূপান্তরিত হবে। আর স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করলে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী টেকসই, জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিদীপ্ত ও উদ্ভাবনী। এককথায় সব কাজই হবে স্মার্ট। যেমন স্মার্ট শহর ও স্মার্ট গ্রাম বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট পরিবহন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট সংযোগ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। অনলাইনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এক শিক্ষার্থী, এক ল্যাপটপ, এক স্বপ্নের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে এর আওতায় সব ডিজিটাল সেবা কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত ক্লাউডের আওতায় নিয়ে আসা হবে । ইতোমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নাম পরিবর্তন করে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ গঠন করেছে বাংলাদেশ সরকার।
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রাথমিক শিক্ষা কাজ করে যাচ্ছে মানস্মত শিক্ষা অর্জনের জন্য ডিজিটাল শিক্ষার পাশাপাশি। শিশুদের গড়ে তোলার সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল তাদের আনন্দ দেওয়া। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হলে সবার আগে তাদের উন্নত চিন্তাজগতের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা একটি শিশুর জীবনে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও জ্ঞানার্জনের মূলভিত্তি তৈরি করে। সে কারণে, শারীরিক ও মানসিকভাবে সুসংগঠিত করে প্রগতিশীল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট সমাজ বিনির্মাণে সব শিশুর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। প্রাথমিক শিক্ষার মূল কাজ হলো, শিশুর সহজাত সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে মানবিক মূল্যবোধ ও মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা। এই কাজটি নিপুণভাবে সম্পাদিত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এজন্য প্রয়োজন একজন দক্ষ,তথ্য প্রযুক্তি অভিজ্ঞ ও স্মার্ট দেশপ্রেমিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের।
পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং বাস্তবায়ন করেছেন। পদক্ষেপসমূহের মধ্যে যেমন রয়েছে ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন তেমনটি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রযুক্তিতে পারদর্শী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে রয়েছে ডিজিটাল হাজিরা চালু, ক্লাসসমূহে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার, প্রতিটি পিটিআই ও পরীক্ষণ বিদ্যালয়, প্রতিটি উপজেলায় ১টি করে স্মার্ট ক্লাসরুম স্থাপন, প্রতিটি বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুমের সরঞ্জামি বিতরণ, পিটিআই গুলিতে অত্যাধুনিক আইসিটি ল্যাব স্থাপন করেছেন।
প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডি, প্রোফাইল প্রণয়ন, ই-মনিটরি, ই-সেবা, ই- নথি ডি-নথি ইত্যাদি উন্নয়নে বর্তমান সরকার ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন । ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধাদির পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে এখন গুণগত মানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। শিশুর মানসিক বিকাশের বড় অংশ নির্ভর করে বিদ্যালয়ের আনন্দঘন পরিবেশ, শিক্ষকের দক্ষতা ও শিখন শেখানো কার্যক্রমের ওপর। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকের শুদ্ধাচার, আন্তরিকতা, ও পেশাগত জ্ঞান আবশ্যক। শিশুরা সংবেদনশীল, আবেগপ্রবণ এবং অনুকরণপ্রিয়।
শিক্ষকদের তারা তাদের জীবনের আদর্শ হিসেবে বরণ করে নেয়। শিক্ষকদের চলা ফেরা, বাচনভঙ্গি , ভূষণ এবং জ্ঞানের গভীরতা শিশুদের মুগ্ধ করে। । সরকার প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শ্রেণিকক্ষে যেসব প্রযুক্তির ব্যবহারে জোর দিচ্ছেন শিক্ষককে তার প্রতিটি যন্ত্রপাতি ব্যবহারে দক্ষ ও পারদর্শী হতে হবে। তাকে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার, কন্টেন্ট তৈরি, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, সর্বোপরি প্রযুক্তির ব্যবহার করে যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। স্মার্ট মানুষের সমস্ত গুণাবলী একজন শিক্ষক সর্বপ্রথমে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করবেন। তিনি অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা শিক্ষার্থীদের মাঝে সঞ্চার করবেন।
দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রয়োজন সুশিক্ষিত স্মার্ট জনশক্তি। আর এ স্মার্ট জনশক্তি তৈরিতে গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের বিকল্প নেই। গুণগত শিক্ষার পূর্বশর্ত হচ্ছে শ্রেণিকার্যক্রমকে বাস্তবমুখী করে শিক্ষার্থীর আনন্দময় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং তাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর বুদ্ধিভিত্তিক জ্ঞান, মানবীয় গুণাবলীর বিকাশ এবং প্রায়োগিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতি অর্থ বছরে পিটিআইগুলিতে ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের ব্যবহার জন্য ১৪ দিনের আইসিটি ইন এডুকেশন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
যার মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম আকর্ষনীয় ও আনন্দদায়ক, শিশুদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বেড়েছে। আনন্দের সহিত শিশুরা শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে , শিক্ষকের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে জ্ঞান সমৃদ্ধ হয়েছে এবং শিক্ষক ২১ শতকের পেডাগজিতে সমৃদ্ধ হচ্ছে । সুতরাং বর্তমান সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রাথমিক শিক্ষার বা শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম ।
লেখকঃ ইন্সট্রাক্টর (কম্পিউটার সায়েন্স), বগুড়া পিটিআই, বগুড়া ।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৮/০৯/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়