স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে যা প্রয়োজন

শাহ বিলিয়া জুলফিকারঃ আমাদের দেশ আধুনিক হচ্ছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর দিকে এগোচ্ছে। সরকার ঘোষণা দিয়েছে, ২০৪১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এ রূপান্তর করবে। আর দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে এবং উদ্ভ‚ত সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে সবচেয়ে বেশি জরুরি কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা।

আমরা জানি শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষার মাধ্যমে একজন মানুষ সত্যিকারের মানুষ হয়। ফলে শিক্ষা ব্যবস্থা হতে হবে শিক্ষার্থীদের অনুক‚লে, যে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তারা নানাবিধ কর্মক্ষেত্রে যেতে পারবে। দেশের উন্নয়নে কাজ করবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা চলনসই। তবে আমাদের পাঠ্যক্রমে আরও কিছু বিষয়ের ওপর জোর দেয়া সময়ের দাবি। যেগুলো শিক্ষার্থীদের এগিয়ে রাখবে কর্মক্ষেত্রে। যেহেতু আধুনিক বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাই শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার শিক্ষা এখন অতি প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। বর্তমানে কর্মক্ষেত্র বা কর্মক্ষেত্রের বাইরে সবর্ত্রই কম্পিউটারের বিস্তার ব্যাপক। তাই বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে কম্পিউটারের দক্ষতা খুব বেশি প্রয়োজন। তাছাড়া ডেটা ব্যবস্থাপনা শিক্ষা কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ দক্ষতা, সেলফ ম্যানেজমেন্ট ও টাইম ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা, নেগোসিয়েশন স্কিল, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে দক্ষতা, টাইপিং দক্ষতা প্রভৃতি আমাদের কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। মোটকথা, যেসব বিষয় আমাদের কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে রাখবে, সেসব বিষয় যদি আমাদের পাঠ্যক্রমে জোরালো করা হয়, তাহলে আমাদের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে থাকবে কর্মক্ষেত্রে এবং বেকারত্ব থেকে মুক্তি পাবে দেশ। আমরা আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারব। আধুনিক পদ্ধতি আয়ত্ত করে স্মার্ট হয়ে উঠতে পারব। শিক্ষার্থীরা স্মার্ট হয়ে উঠলে জনসংখ্যার বিশেষ একটি অংশ পরিণত হবে ‘স্মার্ট সিটিজেন’-এ, যা স্মার্ট বাংলাদেশের বিনির্মাণে অগ্রণী ভ‚মিকা রাখবে। এভাবেই একদিন বাংলাদেশ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এ পরিণত হবে।

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দরকার জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট ইকোনমি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে তারুণ্যের মেধা, উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতার বিকাশ এবং আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলার বিকল্প নেই।

সামগ্রিকভাবে দেশে উদ্ভাবন ও গবেষণার ক্ষেত্রে যখন বিবর্ণ চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে, তখন জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলা এবং উদ্ভাবনী জাতি গঠনকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ মাস্টারপ্ল্যান তৈরির উদ্যোগ সুবিবেচনাপ্রসূত ও প্রশংসনীয়। প্রাকৃতিক সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা সত্তে¡ও বিজ্ঞান, কারিগরি ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ এবং দক্ষ জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের অন্যতম বড় অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশে পরিণত হওয়া সম্ভব, যার বাস্তব চিত্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় টাইগার অর্থনীতির দেশগুলো। এ দেশগুলো জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির পথে হেঁটেই তাদের অর্থনীতিকে দ্রæত বিকশিত করে রোল মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছে উদ্ভাবন ও গবেষণা। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বুদ্ধিবৃত্তিক অর্থনৈতিক জাগরণ সৃষ্টির নিজস্ব উদ্যোগের অভাব প্রকট। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে আমাদের দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এ রূপান্তর করার লক্ষ্যে দেশে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবন ও গবেষণাকে গুরুত্ব দিয়ে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি বাস্তববায়ন সময়ের দাবি।

২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে প্রযুক্তিনির্ভর দেশ। ফলে এখন থেকেই প্রযুক্তির উৎকৃষ্ট ব্যবহার করতে হবে। এরই মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ গঠনের পাশাপাশি একটি নির্বাহী কমিটিও গঠিত হয়েছে, যারা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরি করবে। তাছাড়া সরকার প্রযুক্তি খাতে বিভিন্ন প্রণোদনা প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করতে। বর্তমানে প্রচলিত প্রযুক্তির আধুনিকায়নের পাশাপাশি উন্নততর প্রযুক্তির ব্যবহার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, ইন্টারনেট, রোবোটিকস, ই-ব্যাংকিং ও ফাইভ-জি সেবা নিশ্চিত করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের জন্য বহুমুখী কার্যক্ষমতাসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ স্থাপনের পাশাপাশি সরকারের উচিত উচ্চ গতির ইন্টারনেট সেবা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া। এসব প্রযুক্তির উৎকৃষ্ট ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন দক্ষতা, প্রয়োজন যথোপযুক্ত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা। কেননা প্রযুক্তি শুধু একটি দেশকে স্মার্ট আর উন্নতই করে না, বরং সেদেশের মানুষের জীবন-যাপন ও চলাচলও সহজ করে। বাংলাদেশে প্রযুক্তি খাতে যথাযথ উন্নয়ন দরকার, যা এদেশকে উন্নত করার পাশাপাশি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে পরিণত করতে সাহায্য করবে। শিক্ষার্থীদের অনলাইনভিত্তিক ক্লাস, টেলিমেডিসিন সেবা, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে মানুষের পরিবর্তে রোবোটিকস, কৃষকের কৃষিকাজে প্রযুক্তি প্রভৃতির ব্যবহার চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

যেহেতু প্রযুক্তির ব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং সংখ্যাটা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে, তাই আমাদের দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে রূপান্তর করতে সাইবার নিরাপত্তার ওপর জোর দিতে হবে। কেননা বর্তমান পৃথিবী তথ্যপ্রযুক্তির পৃথিবী। আজ ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বিচরণ ব্যতীত আমাদের জীবন কল্পনা করা যায় না। তবে একটু কঠিনভাবে কল্পনা করতে গেলে ইতিহাসের আর্কাইভ থেকে আমাদের দুচোখের ক্যানভাসে ভেসে আসে আদিম শতকের আগুনের দৃশ্যপট, গুহার ছবি, কিংবা কোনো বনমানুষের জীবন! এ তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বিচরণ করে আমরা প্রয়োজনীয় কাজ অল্প সময়ে অনায়াসে করে নিতে পারি। কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার করা প্রযুক্তিসমূহের নিরাপত্তার অভাবে মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে বিষম বিপদ! অন্যতম হেতু হলো: এই ভার্চুয়াল জগতে অনেক হ্যাকার সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তারা বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের সিস্টেমের মধ্যে অবৈধভাবে প্রবেশ করে আমাদের ব্যক্তিগত ডেটাগুলোর অবৈধ ব্যবহার করতে পারে, আমাদের নানাবিধ ক্ষতি করতে পারে! আমাদের যেন অনাকাক্সিক্ষতভাবে এসব সমস্যার মুখোমুখি হতে না হয়, আমাদের ফাইল, ডেটা, নেটওয়ার্ক, সার্ভার, কম্পিউটার, ডিভাইসগুলো যেন অসাধু হ্যাকারদের কবল থেকে সুরক্ষিত থাকেÑসেদিকে সরকারের নজরদারি রাখতে হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আর সাইবার নিরাপত্তা জোরালো করা হলে বাংলাদেশ অতিশিগগিরই পরিণত হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এ।

লেখকঃ  শিক্ষার্থী, আইন ও বিচার বিভাগ,জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২০/১১/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়