নিজস্ব প্রতিবেদক, ঝিনাইদহঃ পাঠ্য বইয়ের বাইরে শিক্ষা বিস্তার, চরিত্র গঠন, লাইব্রেরি মুখিকরণ, শারীরিক ও মানুষিক বৃদ্ধির পাশাপাশি শিষ্টাচারসহ ছাত্রজীবনের তাৎপর্যকে গুরুত্ববহ করতে অফিসের ফাঁকে ফাঁকে নিরন্তর ছুটছেন বিদ্যালয় থেকে বিদ্যালয়ে। শুধুমাত্র সরকারি তদারকির অংশ নয়, শিশু-কিশোরদের যুগোপযোগী গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শন করছেন ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিয়া আক্তার চৌধুরী।
শৈলকুপায় যোগদানের পর থেকে অফিসপাড়াসহ বিভিন্ন মহলের নজর কেড়েছেন তিনি। চলতি পথে অবসরের মাঝে নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করায় বেশ নড়েচড়ে বসেছে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
পরিদর্শনের ভীতি বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে। বেড়েছে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার এবং পাচ্ছেন সন্তোষজনক জবাবদিহিতা। নির্বাহী অফিসারের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে এ বিষয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে সচেতনতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার ঝটিকা অভিযান অব্যাহত থাকায় শিক্ষকদের ক্লাসে উপস্থিতির পাশাপাশি প্রতিটি বিদ্যালয়ে হঠাৎ প্রাণ ফিরে পেয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। তার বিশেষ কিছু বাড়তি পদক্ষেপ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আরও গতিশীল করেছে।
৩নং দিগনগর ইউনিয়নের ১৪নং সিদ্ধি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মনিরা সুলতানা বলেন, বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হঠাৎ উপস্থিতি তাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছে। ইউএনওকে কাছে পেয়ে কচিকাঁচা শিক্ষার্থীগণ আবেগে আপ্লুত হয়ে বেশকিছু আবদার করেছে। তিনি যথাসম্ভব স্কুল কর্তৃপক্ষকে আশ্বস্ত করেছেন।
বিদ্যালয়টি পরিদর্শনকালে ইউএনও রাজিয়া আক্তার চৌধুরী শিক্ষার্থীদের বেঞ্চে বসে তাদের সাথে সহপাঠীর মতো মনোমুগ্ধকর ক্লাস তৈরি করেন এবং পরে চক-ডাস্টার নিয়ে শিক্ষকের ভূমিকায় গণিতের ক্লাস সম্পন্ন করেন। সম্প্রতি গাড়াগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শৈলকুপা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, ভাটই মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্রহ্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তিনি কখনো শিক্ষক আবার কখনো শিক্ষার্থীর ভূমিকায় সময় দিয়ে বিদ্যালয়গুলোতে নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এ উদ্যোগের সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেক অভিভাবক, শিক্ষক, সুধীমহল। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে বদলে যেতে পারে উপজেলার শিক্ষার চিত্র।
লক্ষ্য করা যাচ্ছে, স্কুল-কলেজ কেন্দ্রিক আয়োজিত যে কোন অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি পাঠ্য বইয়ের বাইরে শিক্ষা বিস্তার, চরিত্র গঠন, লাইব্রেরি মুখিকরণ, শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির পাশাপাশি শিষ্টাচারসহ ছাত্রজীবনের তাৎপর্যকে তুলে ধরে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করছেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন জানান, বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বর্তমান ইউএনও ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করায় অনেক বদলে গেছে বাস্তবচিত্র। প্রাথমিক শিক্ষার মান এবং বিদ্যালয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে এ পরিদর্শন খুবই সহায়ক। তবে ৮ জন এটিও’র স্থলে বর্তমানে ৩ জন থাকায় উপজেলার প্রতিটি ক্লাস্টার পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখভাল করা বেশ দুরূহ। এমতাবস্থায় ইউএনও মহোদয়ের আকস্মিক বিদ্যালয় পরিদর্শন অত্যন্ত সুফল বয়ে এনেছে। শিক্ষক সচেতনতার পাশাপাশি সকল ক্লাস্টারের দায়িত্বশীল শিক্ষকগণ আরও গতিশীল হয়েছে এবং প্রচুর উপস্থিতি বেড়েছে।
এ ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিয়া আক্তার চৌধুরী জানান, আধুনিক যুগ চাহিদামত শিক্ষার প্রসার ঘটাতে এবং শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ যথাযথভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কিনা সেটা দেখভাল করা জরুরি। শিক্ষার্থীদের মাঝে মাদক ও বাল্য বিয়ের কুফল, খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা, মোবাইল ফোন ব্যবহারে বিপথগামী হওয়া এবং ঝরে পড়া রোধসহ বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মন জয় করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১১/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়