স্কুলে যোগ দিয়েই বিদেশ পাড়ি জমালেন প্রাথমিক শিক্ষিকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোরঃ জেলার চৌগাছায় এবার শারমিন সুলতানা জিনিয়া নামে এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা বিধি বহির্ভূতভাবে মেডিকেল ছুটি নিয়ে চীনে অবস্থান করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

শারমিন সুলতানা উপজেলার সিংহঝুলী ইউনিয়নের মাজালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে গত ২৩ জানুয়ারী যোগদান করেন।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারী সর্বশেষ বিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ার পর তিনি চীনে চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী নজরুল ইসলাম। এতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

এরআগে উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের বড়খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিশাত মুনাওয়ারা নামে এক সহকারী শিক্ষিকা মেডিকেল ছুটি নিয়ে আমেরিকায় স্বামীর কাছে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠলে সংবাদ প্রকাশের পর শিক্ষা অফিসের তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হয়।

সোমবার (২৭ মার্চ) সরেজমিনে মাজালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে দেখা যায় ওই শিক্ষক বিদ্যালয়ে নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, গত ২৩ জানুয়ারী প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ে যোগদান করেন জিনিয়া। একমাস শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম করার পর প্রথমে তিন দিনের নৈমত্তিক ছুটি নেন তিনি। এরপর তিনি চীনে চলে গেছেন মাস্টার্সের ব্যবহারিক একটি কোর্স করার জন্য।

তিনি বলেন, জিনিয়া মেডিকেল ছুটি নিয়ে চীনে যাওয়ার জন্য প্রসেস করছিলেন। এরইমধ্যে চীন থেকে তার কাগজপত্র চলে আসায় তিনি চীনে চলে যান। পরে তার বাবা মেডিকেল ছুটির দরখাস্তে আমার সুপারিশ নিয়ে যান। সেসময় তিনি আমাকে জানান, এ বিষয়ে টিও (উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা) এবং এটিও (সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা) সব জানেন। তাদের সাথে আলোচনা করেই ছুটি নেয়া হচ্ছে। তবে ছুটি অনুমোদন হয়েছে কিনা জানিনা।

প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, তারা টিও এবং এটিও স্যারের কথা বলায় আমরা (তিনিসহ অন্য সহকারী শিক্ষিকারা) বিশ্বাস করেছি।

তিনি নিজে বিষয়টি শিক্ষা অফিসে জানিয়েছেন কিনা প্রশ্নে নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা শিক্ষা অফিসে জানাইনি।

তিনিসহ বিদ্যালয়ের সহকারী ৩ জন শিক্ষিকা বলেন, ওই শিক্ষিকা এভাবে দেশের বাইরে অবস্থান করায় বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষিকারা আরো বলেন, জিনিয়া যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেন। পরে স্নাতোকত্তোর করার জন্য চীনে যান। এরমধ্যে করোনা শুরু হয়ে যাওয়ায় কোর্স সম্পন্ন না করেই দেশে চলে আসেন। এরমধ্যে প্রাথমিকের সহকারি শিক্ষক হিসেবে চাকরি পেয়ে যোগদান করেন। এখন করোনা শেষ হয়ে যাওয়ায় কোর্স সম্পন্ন করতে চীনে চলে গেছেন বলে আমরা জেনেছি।

তবে উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ওই শিক্ষিকার ছুটির কাগজপত্র উপজেলা শিক্ষা অফিসে জমা নেই। সদ্য যোগদানকৃত উপজেলা ৯৬ জন সহকারী শিক্ষকের এখনো বেতন হয়নি। তাদের বেতন বিল প্রদানের কার্যক্রম চলছে।

ওই শিক্ষিকার পিতা জাহাঙ্গীর আলম মোবাইলে জানান, জিনিয়া বর্তমানে চীনে অবস্থান করছে। সেখানে সে মাস্টার্সের একটি কোর্স করছে।

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যালয়ে ওই শিক্ষিকা অনুপস্থিত থাকলেও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন ওই ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নিছার উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি এরমধ্যে ওই বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে যাইনি। একারণে বিষয়টি আমার জানা নেই। অথচ নিয়মানুযায়ী মেডিকেল ছুটিতে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার সুপারিশ থাকার কথা রয়েছে। তবে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নিছার উদ্দিন বলেন, এভাবে কেউ ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে যেতে পারেন না।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওই শিক্ষিকা মেডিকেল ছুটিতে আছেন। মেডিকেল ছুটি তো অর্জিত ছুটি, সদ্য যোগদানকৃত শিক্ষক এই ছুটি নিতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিনা বেতনে ছুটি নিতে পারেন।

ওই শিক্ষিকা চীনে অবস্থান করার বিষয় জানেন না বলে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, এখনই ওই শিক্ষিকার বাবাকে (যিনি উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে পিআরএলএ আছেন) ডেকে জানছি।

তবে পরে তিনি বলেন, ওই শিক্ষিকার বাবার সাথে মোবাইলে কথা হয়েছে। তিনি (ওই শিক্ষিকা) চাকুরি থেকে রিজাইন লেটার (অব্যাহতিপত্র) জমা দেবেন।

যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা (ডিপিও) কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, এভাবে ছুটি নিয়ে চীনে অবস্থান করার কোনো বিধান নেই। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে এখনই প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। প্রতিবেদন পেলেই ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ইউনূচ আলী বলেন, শুনেছি একজন শিক্ষিকা চীনে অবস্থান করছেন। বেতন বিল জমা হলে বিষয়টি যাচাই করে দেখা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্বদানকারী কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলেন, একের পর এক এভাবে বিধিবহির্ভূতভাবে শিক্ষকরা বিদেশ চলে যাচ্ছেন। অথচ শিক্ষা অফিস কিছুই জানেন না বলে দায় এড়াচ্ছে। যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। একজন শিক্ষক একমাসেরও বেশি সময় ধরে স্কুলে যাচ্ছেন না। অথচ প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষা কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৭/০৩/২০২৩  

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়