স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা

নিউজ ডেস্ক।।

সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোটের টানা কর্মসূচিতে শিক্ষাঙ্গনে বাড়ছে অস্থিরতা। ইতোমধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। লাগাতার হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচিতে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর শেষ প্রান্তিকের মূল্যায়নও পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। ৫ নভেম্বরের পরিবর্তে এই দু’টি শ্রেণীর নতুন শিক্ষাক্রমের বার্ষিক মূল্যায়ন আগামী ৯ নভেম্বর ধার্য করা হয়েছে।

কিন্তু গ্রামের তুলনায় শহরের স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন স্কুলপ্রধানরাও। অবশ্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে জানানো হয়েছে যেসব শিক্ষার্থী হরতাল কিংবা অবরোধে স্কুলে আসতে পারছে না তাদেরকে স্কুলে অনুপস্থিত দেখানো যাবে না। বরং ক্লাসে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস করাতে হবে।

যদিও আগে থেকেই মাউশির পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল যে, শিক্ষাবর্ষের শেষ প্রান্তিকে এসে বাড়তে পারে রাজনৈতিক অস্থিরতা। আর এমন আশঙ্কায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী নভেম্বর মাসের মধ্যেই শেষ করার কথা ছিল বার্ষিক পরীক্ষা।

কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে নভেম্বর মাসের আগে থেকেই (গত ২৮ অক্টোবর থেকে) শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। এর ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম এক অনিশ্চয়তা। এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে শিক্ষা সেক্টরেও আরো অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা করছেন অনেকেই। ফলে চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকে শিক্ষার্থীদের বড় কোনো ক্ষতি হয় কি সেই শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

সরকারের পরিকল্পনা ছিল এবারের জাতীয় নির্বাচনের কারণে সব স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা একমাস এগিয়ে নিয়ে আসার। সেই আলোকেই নভেম্বরের মধ্যেই শেষ করতে হবে সব পরীক্ষা ফলাফল প্রকাশের কাজ। হঠাৎ করেই রাজনীতির মাঠ গরম করার মতো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি থাকার কারণে এই অনিশ্চয়তা আরো বেড়েছে।

এদিকে হিন্দুদের শারদীয় দুর্গাপূজার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টানা ১০ দিন বন্ধ থাকার পর গত রোববার থেকে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু স্কুল খোলার প্রথম দিনেই হরতালের কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতে নিরাপদ বোধ করছেন না অনেক অভিভাবক।

অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশির) নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন কারিকুলামে পাঠদান শেষে শিক্ষার্থীদের শেষ প্রান্তিকের মূল্যায়নের জন্য ভিন্ন পদ্ধতির কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো সেই মূল্যায়নপদ্ধতির বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত নির্দেশনা আসেনি।

ফলে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক কেউই এখনো নিশ্চিত নন যে মূল্যায়ন কিভাবে হবে। এছাড়া অনেক স্কুলে তাদের সিলেবাসও এখনো শেষ করতে পারেনি।

অনেকে প্রস্তুতি নিয়েছিল পূজার ছুটির পর তারা সিলেবাস শেষ করবেন। কিন্তু এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হলে সেই সুযোগও তারা আর পাবেন না। চলতি বছরের শুরু থেকেই নতুন কারিকুলামে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে পাঠদান চলছে। এ দুই শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নও হবে নতুন পদ্ধতিতে। আগেই জানানো হয়েছে যে এবার কোনো প্রচলিত পরীক্ষা বা মডেল টেস্ট হবে না।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, ষাণ্মাসিক মূল্যায়নের পর এবার আসছে বছরের সামষ্টিক মূল্যায়ন। এরই মধ্যে বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে।

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর এ মূল্যায়ন নির্দেশিকা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হবে। নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আগাম নির্দেশনায় জানানো হয়েছে।

এদিকে শিক্ষাবর্ষের শেষ প্রান্তিকে এসে রাজনৈতিক সূত্রগুলো আগামীতে আরো কঠোর কর্মসূচির আভাসই দিচ্ছে। এতে বছরের শেষে এসে এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষাবর্ষ এলোমেলো হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

যদিও জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশের বিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন নভেম্বর মাসেই শেষ করার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়ে রেখেছে শিক্ষা বিভাগ।

কিন্তু এরই মধ্যে রাজধানীর কিছু স্কুলে প্রাথমিকের পরীক্ষা ১ নভেম্বর থেকে পিছিয়ে ৫ নভেম্বর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আগামী ৫ নভেম্বর থেকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর নতুন শিক্ষাক্রমের বার্ষিক মূল্যায়ন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ৯ নভেম্বর নেয়া হয়েছে। পিছিয়ে দেয়া হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজের নিয়মিত পরীক্ষা।

অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে এবং হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দফায় দফায় বাড়তে থাকলে প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষা, নতুন শিক্ষাক্রমের বার্ষিক মূল্যায়ন ও স্কুলগুলোর বার্ষিক পরীক্ষা যথাসময়ে আয়োজন কঠিন হবে। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে নভেম্বরের মধ্যে স্কুলগুলোতে নতুন পাঠ্যবই পাঠানোর প্রক্রিয়া।

এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের বার্ষিক ও টার্ম পরীক্ষাও ঝুলে যেতে পারে। এরই মধ্যে অবরোধকালে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছে।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের স্কুল-কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল নগণ্য। শিক্ষাপঞ্জি ঠিক রাখা নিয়ে তাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। আর অনিশ্চয়তা ভর করেছে প্রায় চার কোটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভাবনায়।

অবরোধকালে রাজধানীর একাধিক স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে ফিরে গেছেন। কোথাও কোথাও ক্লাস হলেও শিক্ষার্থী ছিল কম। অনেক কলেজে শিক্ষকদের উপস্থিতিও ছিল হতাশাজনক। মাউশির সূত্রও বলছে ঘোষিত সময়েই বার্ষিক পরীক্ষা ও সামষ্টিক মূল্যায়ন নেয়ার সিদ্ধান্ত আছে।

তবে এরপর পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী হয়তো নতুন পদক্ষেপ নেয়া হবে। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নভেম্বরে স্কুলগুলোর বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করতে না পারলে ডিসেম্বরে নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হবে না। আগামী বছর আরো তিনটি শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর যে পরিকল্পনা রয়েছে সেটাও যথাসময়ে শুরু করা কঠিন হবে।

যদিও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আশাবাদী মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। এ বিষয়ে অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, স্কুলগুলোতে ৯ নভেম্বর থেকে বার্ষিক মূল্যায়ন শুরু হবে।

তাই এখনই অন্য কোনো বিষয় ভাবার সময় আসেনি। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করতে হবে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০২/১১/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়