সেশনজটে ধুঁকছে ইবি শিক্ষার্থীরা: প্রথম বর্ষেই তিন ব্যাচ

কুষ্টিয়াঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা সেশনজটে ধুঁকছেন। পাঁচ বছরের কোর্স সাত বছরেও তারা শেষ করতে পারছেন না। ফলে তাদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষকদের উদাসীনতা ও কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে সেশনজট হচ্ছে বলে অভিযোগ। এজন্য প্রশাসনিক জটিলতাসহ বিভিন্ন বিষয়কে দায়ী করছে বিভাগগুলো।

স্বাভাবিক নিয়মে ইবির একটি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে পাঁচটি ব্যাচ থাকার কথা। কিন্তু সেখানে একসঙ্গে সাতটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করছেন। এরই মধ্যে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকটি বিভাগে সময়মতো নতুন শিক্ষার্থীরা যুক্ত হলেও নিয়মমাফিক আগের শিক্ষার্থীরা বের হতে পারছেন না। প্রথমবর্ষেই তিন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করছেন। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। নবীনদের মাঝেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সমস্যা সমাধানে বিভাগগুলো একাধিকবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও কার্যত কোনো সুরাহা হয়নি।

বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পরিসংখ্যান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, আইন, আল-ফিকহ এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগে ২০১৬-১৭ থেকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত সাতটি ব্যাচ একসঙ্গে অধ্যয়ন করছেন। আটটি বিভাগের মধ্যে সাতটি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর এক সেমিস্টার শেষ হয়েছে। একটি বিভাগের দুই সেমিস্টারই বাকি। এসব বিভাগ ছাড়াও তিনটি বিভাগের স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা শেষ হলেও ফল প্রকাশ হয়নি। একই শিক্ষাবর্ষের অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা এক বছর আগে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। ফলে সেশনজটে পড়া শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিভাগগুলোতে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেশনজটে পড়েছেন প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরাও। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

পিছিয়ে পড়া বিভাগগুলোর শিক্ষার্থীরা জানান, অন্য বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এক বছর থেকে দেড় বছর আগে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। কিন্তু আমরা এখনো রয়ে গেছি। এতে চাকরির বাজারে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। পরিবারও চিন্তার মধ্যে আছে। তাদের দাবি, সান্ধ্যকালীন কোর্স ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে অধিক গুরুত্ব দেওয়া, যথাসময়ে ক্লাস-পরীক্ষা না নেওয়া ও রাজনীতিতে শিক্ষকদের ব্যস্ততাসহ নানান কারণে সেশনজট তৈরি হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনিক দায়িত্বের দোহাই দিয়ে অনেক শিক্ষক ক্লাস না নেওয়ায় সময়মতো পরীক্ষা হচ্ছে না। উত্তরপত্র মূল্যায়নেও অতিরিক্ত সময় নেওয়ায় ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। সবচেয়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে বিভাগীয় শিক্ষকদের গ্রুপিং। ফলে পরীক্ষা শেষ হলেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মাসের পর মাস খাতা আটকে রাখা হয়। শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে শিক্ষার্থীরা বলি হলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্য কোনো উপায়ে প্রতিবাদ করলেও শিক্ষকদের রোষানলে পড়তে হয়।

বাংলা বিভাগের সভাপতি প্রফেসর গাজী মাহবুব মুর্শিদ বলেন, সমস্যাগুলো দীর্ঘদিনের। রাতারাতি এটা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। শিক্ষকদের গাফিলতি অস্বীকার করা যায় না। নিয়মিত ক্লাস না নেওয়া ও পরীক্ষার খাতা দেখতে দীর্ঘদিন লাগালেও কোনো জবাবদিহিতা নেই। প্রত্যেকের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড থাকায় কেউ কাউকে কিছু বলতে পারে না।

কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. রবিউল ইসলাম বলেন, প্রশাসনিক জটিলতায় একটু সমস্যা হচ্ছে। ফাইলগুলো প্রশাসনের টেবিলে টেবিলে যাওয়ায় একটা বড় সময় নষ্ট হয়। তিনি আরও বলেন, তার বিভাগের ১৭ জন শিক্ষকের মধ্যে সাতজন ছুটিতে আছেন। মাস্টারপ্ল্যান করে কাজ করার চেষ্টা করছি।

অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. আবদুল মুঈদ বলেন, একজন শিক্ষক চাইলে খুব সহজভাবে একটি সেমিস্টার যথাসময়ে শেষ করতে পারেন। শুধু শিক্ষকদের উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষকদের ভাবতে হবে-তাদের কারণে যেন কোনো শিক্ষার্থী ক্ষতির মুখে না পড়ে। শিক্ষকরা আন্তরিক ও দায়িত্ববান হলে সেশনজট থাকবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, বিভিন্ন বিভাগের পিছিয়ে পড়া প্রশাসনের বিষয় নয়। এটা বিভাগের নিজস্ব বিষয়। পরীক্ষাসহ একাডেমিক বিষয়গুলো বিভাগ দেখে। এরপরও আমরা বিষয়গুলো দেখব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, শিক্ষকদের ক্লাস-পরীক্ষা না নেওয়ার বিষয়ে বিভাগীয় সভাপতি প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া সেশনজটে থাকা বিভাগগুলো নিয়ে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৬/০৯/২০২৩

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়