সাবেক অধ্যক্ষের যোগসাজশে ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ অফিস সহকারীর
খোকসা সরকারি কলেজ
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ কলেজ জাতীয়করণ করা হয়েছে ২০১৮ সালে তবে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জাতীয়করণের জন্য ব্যয় করা হয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। শুধু তাই নয় এমন অগনিত ব্যয়ের হিসাব রয়েছে যেখানে কোন খাতে কত ব্যয় করা হয়েছে তার কোনো বিল ভাউচার নেই। এমনকি কোন লেনদেনই ব্যাংকের মাধ্যমে করা হয়নি। এভাবে কলেজ ফান্ডের প্রায় ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এমনই অভিযোগ উঠেছে কুষ্টিয়ার খোকসা সরকারি কলেজের অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী মোঃ নাজমুল হুদা রাসেলের বিরুদ্ধে। আর এই হিসাব সহকারীর নেপথ্যে রয়েছে কলেজটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ (অবসর প্রাপ্ত) মুহঃ আনিছ-উজ-জামান।
অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী মোঃ নাজমুল হুদা রাসেলের দাবি তিনি কলেজটির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহঃ আনিছ-উজ-জামান যে অর্থ তাকে ছাড় করতে বলেছেন তিনি শুধু তা করেছেন। কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে তা তিনি বলতে পারবেন না। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে যে নির্দেশনা দেবেন তিনি তা পালনে বাধ্য।
গত ১৫ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে কলেজটির অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটির কাছে মোঃ নাজমুল হুদা রাসেলের যে হিসাব দাখিল করেছেন তা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে কলেজটি নির্ভযোগ্য সূত্র বলছে, আয়-ব্যয়ের যে হিসাব তিনি জমা দিয়েছেন তার চেয়ে অনেক বেশি আত্মসাৎ করা হয়েছে।
শিক্ষাবার্তা’র হাতে থাকা গত ১৫ অক্টোবর মোঃ নাজমুল হুদা রাসেল কর্তৃক স্বাক্ষরিত ঐ হিসাবের খাতায় দেখে গেছে, ২০ অক্টোবর ২০২২ ইং তারিখ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ইং তারিখ পর্যন্ত সময়কালে কলেজের মোট আয় ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪১ টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৫১৩ টাকা। দেখানো ব্যয়ে শিক্ষকদের ঢাকা যাতায়াত খরচ, কলেজ উন্নয়ন, পিকনিক, আলমারী ও ক্যাবিনেট মেরামত, দুই দফায় জাতীয়করণ খরচ ৫ লাখ ৫২ হাজার , সাবেক অধ্যক্ষ মুহঃ আনিছ-উজ-জামানের নামে কয়েক লাখ টাকা খরচ সহ একাধিক খরচ দেখানো হয়েছে যার কোন বিল ভাউচার পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ১২ টি সোনালী সেবার যে ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে সেখানেও উল্লেখ করা হয়েছে ভুলক্রমে ফাইল নোটের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়নি। আয়ের প্রায় বিশ লাখ টাকাই ব্যয় দেখানো হয়েছে ব্যয় ভাউচার ছাড়া।
গত ৭ মে ২০২৩ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (সরকারি কলেজ শাখা-২) মোঃ তানভীর হাসান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ সূত্রে জানা গেছে, কলেজটির সাবেক অধ্যক্ষ মুহঃ আনিছ-উজ-জামান ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তারিখে অবসরজনিত কারণে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। কলেজটির জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুশারে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মোঃ বেলাল উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা হয় এবং চলতি বছরের ৭ মে ইং তারিখে তাকে আর্থিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়।
সাবেক অধ্যক্ষ মুহঃ আনিছ-উজ-জামান ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ইং তারিখে অবসরজনিত কারণে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করলেও অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী মোঃ নাজমুল হুদা রাসেল কর্তৃক ২০ অক্টোবর ২০২২ ইং তারিখ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ইং তারিখ পর্যন্ত সময়কালের যে হিসাব সাবেক অধ্যক্ষ মুহঃ আনিছ-উজ-জামানের নামে দেখানো হয়েছে সেখানে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার ব্যয় দেখানো হয়েছে। অর্থ্যাৎ সাবেক অধ্যক্ষ মুহঃ আনিছ-উজ-জামান দায়িত্ব না থাকলেও তার নামে বিনা বিল ভাউচারে প্রায় সারে পাঁচ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এছাড়াও সাবেক অধ্যক্ষ মুহঃ আনিছ-উজ-জামান এর দায়িত্বকালীন সময় থেকে সদ্য শিক্ষা ক্যাডার অধ্যক্ষ যোগসানের আগ পর্যন্ত কলেজের ছাত্র/ছাত্রীদের নিকট থেকে গৃহীত যাবতীয় ফিসাদির অনলাইন ব্যাংকিংয়ে সাবেক অধ্যক্ষ মুহঃ আনিছ-উজ-জামান এর পরামর্শে অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী মোঃ নাজমুল হুদা রাসেল নিজের ব্যক্তিগত একাউন্ট নম্বর দিয়ে উত্তোলিত অর্থ সম্পূর্ণ রুপে আত্মসাৎ করেছেন যার কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। কলেজটির সদ্য সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে একাধিকবার অনলাইন ব্যাংকিং পিন, পাসওয়ার্ড একাউন্ট নম্বর দিতে বলা হলেও তা বুঝিয়ে দেননি।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কলেজটির জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব এবং আর্থিক ক্ষমতা পাওয়ার পর থেকেই তিনি অফিস সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মোঃ নাজমুল হুদা রাসেলকে একাধিকবার মৌখিকভাবে হিসাব বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বললেও রাসেল তা কর্ণপাত না করায় গত ৩০ জুলাই ২০২৩ তারিখে তাকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে কলেজের সকল আয়ের হিসাব, আগত তহবিলসহ হালনাগাদ খোকসা সরকারি কলেজের ছাত্র বেতন সহ সকল উৎস হতে প্রাপ্ত অর্থ প্রাপ্তির রশিদ, উহার যথাযথ রেকর্ড বহি, বৈধ ব্যয়ের সকল ভাউচার এবং বায়ের সকল রেকর্ড বহিসহ সকল ক্যাশ বহি স্বাক্ষর গ্রহণ করা ও ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট হতে অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আসায় কৃত ফিসাদি জনতা ব্যাংক লিমিটেড, খোকসা শাখায় খোকসা সরকারি কলেজের সাধারন তহবিল এর হিসাব নম্বর – ০১০০১৫১২৭৬৭৬২ তে জমা প্রদানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইন আনুনাগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, অধ্যক্ষের এই চিঠির সূত্র ধরে কলেজ নিরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও সহকারী অধ্যাপক (সমাজকর্ম বিভাগ) মোঃ আব্দুর রাজ্জাক অফিস সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মোঃ নাজমুল হুদা রাসেলকে চিঠি প্রদান করেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, খোকসা সরকারি করেজের সেপ্টেম্বর ২০২৩ হতে আজ পর্যন্ত ও তৎ পূর্ববর্তী (২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ এর পূর্বে) মাসের আয় ব্যয় হালনাগাদ নিরীক্ষা করার জন্য পত্র পাওয়া গেছে। পত্র মোতাবেক আগামী ০১/০৯/২০২৩ তারিখের মধ্যে অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অত্র কলেজের ছাত্র/ছাত্রীদের নিকট থেকে গৃহীত যাবতীয় ফিসাদির (ছাত্র বেতন, ভর্তি, নিবন্ধন, পরীক্ষা সেশন চার্জ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ফিস) দৈনিক অনলাইন ব্যাংক বিবরণীর ফিস আদায়ের রেজিষ্ট্রার বহি, সকল ক্যাশ বহি, ব্যংক বিবরণী, ব্যয় ভাউচার, ব্যয় অনুমোদন নোটশীট, ব্যবহৃত/অব্যবহৃত সকল চেকবই সমূহ, জনতা ব্যাংক লিমিটেড খোকসা শাখার হিসাব সমূহের অর্থ জমা প্রদানের রশিদ অথবা আদেশ নামা পত্র, অনার্স সহ বিভিন্ন শ্রেণীতে ভর্তির নিশ্চায়ন পত্র, বিভিন্ন পরীক্ষার রোলশীট, ব্যয় নীতিমালার সরকারি আদেশনামা ইত্যাদি নিম্ন স্বাক্ষরকারীর নিকট জমা দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হইল এবং সশরীরে উপস্থিত থেকে নিরীক্ষা কাজে সার্বিক তথ্য সহযোগিতা প্রদানের জন্য বলা হল।
তবে কলেজ থেকে বেধে দেওয়া তারিখে তিনি কোনো জবাব দেননি। এরপর দীর্ঘদিন পরে গত ১৫ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে বিগত ২০ অক্টোবর ২০২২ ইং তারিখ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ইং তারিখ পর্যন্ত সময়কালের কলেজ ফান্ডের অর্থের আয়-ব্যয়ের একটি মনগড়া হিসাব দাখিল করেন। বাস্তবে দাখিল করা এই হিসাব উল্লেখিত সময়েরই নয়। বাস্তবে এটা সাবেক অধ্যক্ষ মুহঃ আনিছ-উজ-জামান এর দায়িত্বকালীন সময়ের।
অফিস সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মোঃ নাজমুল হুদা রাসেল যে আয় ব্যয়ের হিসাব দাখিল করেছেন সেখানে দেখা গেছে, কলেজটির সাবেক অধ্যক্ষ (অবসরপ্রাপ্ত) মুহঃ আনিছ-উজ-জামান অবসরের পর অর্থ নেওয়া হয়েছে কয়েক লক্ষ টাকার যার কোনো বিল ভাউচার নেই। তারিখ আলাদা সময়ের দেখানো হলেও এই পরিমাণ অর্থ বা তারও বেশি মুহঃ আনিছ-উজ-জামানের সময়েই নেওয়া হয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিশ্চিত করেছেন কলেজটির একাধিক শিক্ষক।
জানতে চাইলে কলেজটির সাবেক অধ্যক্ষ মুহঃ আনিছ-উজ-জামান শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, আমি কলেজের দায়িত্ব থাকাকালীন কোন ধরণের আর্থিক হিসেব বিল ভাউচার ছাড়া হয়নি এবং ব্যাংকের মাধ্যমে হয়েছে। দায়িত্ব হস্তান্তরকালীন সব হিসাব বুঝিয়ে দিয়েছি। যে অর্থের কথা হিসাব সহকারী দিয়েছেন সে বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমি এর সাথে জড়িত নই। যে হিসাব দিয়েছেন তাকে ধরুন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অফিস সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মোঃ নাজমুল হুদা রাসেল শিক্ষাবার্তা’র প্রতিনিধিকে পালটা প্রশ্ন করে বলেন, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটির কাছে দেওয়া আমার হিসাব আপনি পেলেন কিভাবে ? আমাদের বার্তা কক্ষে যেভাবেই আসুক সেটা গোপনীয় বললে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগত কাজে এই অর্থ ব্যয় করিনি। আমার পদবী অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী। কলেজের যখন যে অধ্যক্ষ থাকেন তিনি আমাকে যে নির্দেশনা দেন সেই মোতাবেক আমি এই অর্থ প্রদান করি। কোন খাতে তারা ব্যয় করবেন সেটা তো আর আমাকে বলে না।
তিনি বলেন, আসলে কলেজটি সরকারি হলেও এতদিন চলেছে বেসরকারি নিয়মে। তাই এই অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে না হয়ে নগদ লেনদেন করা হয়েছে। ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ের মধ্যে ১৯ লাখ টাকাই বিল ভাউচার ছাড়া জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে আমি জবাব দেব। সাবেক অধ্যক্ষ (অবসরপ্রাপ্ত) মুহঃ আনিছ-উজ-জামান এর নামে বিনা বিল ভাউচারে যে অর্থ উত্তোলন দেখানো হয়েছে তা তিনি নেননি বলে শিক্ষাবার্তা’কে জানিয়েছেন। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তিনি নিয়েও যদি অস্বীকার করেন তাহলে আমার কিছু বলার নেই। তবে যে যে টাকা নিয়েছে তার হিসাব আমি কমিটির কাছে আজ দাখিল করব। তখন খোলাসা হবে অর্থ নিয়েছেন কি’না।
কলেজের শিক্ষার্থীদের বেতন-ফির অর্থ নিজের একাউন্টে নিয়ে তার ইউজার-পাসওয়ার্ড সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ বেলাল উদ্দিন একাধিক বার আপনার কাছে চাইলেও তা বুঝে দেননি জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, শিক্ষা ক্যাডার থেকে আসা নতুন অধ্যক্ষ স্যারকে আমি বুঝিয়ে দিয়েছি।
তিনি রোষানলের শিকার উল্লেখ করে বলেন, যারা আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে এখন তারাই নিজেরা অনিয়মের হাত থেকে বাঁচতে আমাকে ফাঁসাচ্ছে। আমি আমার কাছে থাকা সকল ডকুমেন্ট কমিটির কাছে দিব। সেখান থেকে তারাও পার পাবেন না।
অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটির কাছে আয় ব্যয়ের যে হিসাব প্রদান করেছেন তা সঠিকভাবে হয়েছে কি’না জানতে চাইলে নিরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও সহকারী অধ্যাপক (সমাজকর্ম বিভাগ) মোঃ আব্দুর রাজ্জাক গতকাল সোমবার শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, নিরীক্ষার কাজ এখনো চলমান। আজকেও আমি তার হিসাবের সম্পূর্ণ বিল ভাউচার চেয়েছি সে আগামীকাল পর্যন্ত সময় চেয়েছেন।সাবেক অধ্যক্ষ মুহঃ আনিছ-উজ-জামান ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ইং তারিখে অবসরের যান। এরপর কিভাবে এত টাকা তিনি উত্তোলন করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবসরের পর কিভাবে টাকা নিলে সেটাও তার (হিসাব সহকারী) কাছে জানতে চেয়েছি। এছাড়াও যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের কাছ থেকেও লিখিত নিব। কলেজটি জাতীয়করণ হয়েছে ২০১৮ সালে কিন্তু ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জাতীয়করণের জন্য সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা কিভাবে ব্যয় করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয়করণের জন্য কোনো টাকা ব্যয় করা হয়নি। কিভাবে তিনি এটা দেখালেন সেটা আমি জানতে চেয়েছি। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে তাকে হিসাব বুঝে দিতে সাত দিন সময় দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে দিতে না পারলে আইনুনাগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করা হলেও তিনি হিসাব দাখিল করেছে ১৫ অক্টোবর এ বিষয়ে তিনি বলেন, অসুস্থতার জন্য কাল ক্ষেপন করেছেন। আর কতদিন তাকে সময় দিবেন সম্পূর্ণ হিসাব বুঝে দিতে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগামীকাল পর্যন্ত তিনি সময় চেয়েছেন। যত দ্রুত সম্ভব নবাগত অধ্যক্ষ মহোদয় অডিট প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন। যথাযথ হিসাব না পেলে সেইভাবেই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। এখানে কারচূপীর কোনো সুযোগ নেই।
অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী যে সময়কালের হিসাব দাখিল করেছেন এ সময়ে কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মোঃ বেলাল উদ্দিন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই একাধিকবার তার কাছে থাকা অনলাইন ব্যাংকিং হিসাব বুঝে দিতে বললেও তিনি কর্ণপাত করেননি। নিজের নামে একাউন্ট করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যে কোম্পানির সাথে চুক্তি করে একাউন্ট নম্বর ব্যবহার করেছেন তাঁদের কাছেও আমি গিয়েছি তারা বলেছেন অফিস সহকারীর কাছে যাবতীয় আছে তার থেকে বুঝে নেন। এছাড়াও আমার সময়কালের যে হিসাব তিনি দেখিয়েছেন আদতে সেটা আমি দায়িত্ব পাওয়ার আগের হিসাব।
এ বিষয়ে কলেজটির সদ্য যোগদান করা শিক্ষা ক্যাডার অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহা. আব্দুল লতিফ গতকাল সোমবার শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। ঘটনা আমি আসার বেশ আগের। বিষয়টি আমার নজরের আসার পর আমি আজ থেকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছি। যেহেতু আমি আসার আগেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে সেই কমিটিকে এই নির্দেশনা দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেব। তারা যদি মনে করেন পুনরায় তদন্ত করা প্রয়োজন করবেন নাহলে এই প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নেবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন বিশ্বাস শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা এবং যে আয় ব্যয়ের হিসাবের কথা বলছেন সে বিষয়ে আমি জানি না। তবে এর আগে আমি মিনিস্ট্রি অডিটের জন্য তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে চিঠিও দিয়েছিলাম। নতুন অধ্যক্ষ আসার আগে হয়ত তড়িঘড়ি করে একটি অডিট কমিটি করা হয়েছে। জাতীকরণের জন্য সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ের কথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন, জাতীয়করণ তো সরকারি প্রক্রিয়া এখানে কোনো অর্থ ব্যয় হয়না। তবে এই অফিস সহাকারি কাম হিসাব সহকারির বিরুদ্ধে অভিযোগ পুরনো। তিনি এর আগেও শিক্ষার্থীদের বেতন-ফির অনলাইনে জমার ইউজার পাসওয়ার্ড নিজের কাছে রেখে নিজের একাউন্টে টাকা নিয়ে তা আত্মসাৎ করেছেন সেই অভিযোগও রয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আমি খোঁজ নিয়ে দেখব। বর্তমান শিক্ষা ক্যাডার অধ্যক্ষ আসছেন। তিনি আমার কাছে যে কোনো সহযোগীতা চাইলে আমি করব।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/৩১/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়