আমিনুল ইসলাম জুয়েল, পাবনা।।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশীনাথপুরে স্থাপিত ‘পথ পাঠাগার’ সব বয়সী মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের পছন্দের বই সংগ্রহ করে বাড়িতে বসে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। ব্যতিক্রর্মী এ পাঠাগারের মূল উদ্যোক্তা কবি ও প্রভাষক আলাউল হোসেন। তার দুই সহযোগী বন্ধু হলেন প্রভাষক সালাউদ্দিন আহমেদ ও শিক্ষক ফজলুর রহমান।
তারা জানিয়েছেন, সব বয়সী মানুষকে বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য পথ পাঠাগারটি স্থাপন করা হয়েছে। পথ পাঠাগারটি দেখাশোন করেন পাঠাগারের পাশের কয়েকটি দোকান মালিক ও কর্মচারীরা। এমন উদ্যোগে ছাত্র-ছাত্রী ও বিভিন্ন বয়সী মানুষ অন্যদিকে সময় নষ্ট না করে জ্ঞান আহরণ করতে পারবেন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে।
কবি আলাউল হোসেন জানান, রাস্তার পাশে একটি ভবনের দেয়ালে বুক সেলফ স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে সাজিয়ে রাখা রয়েছে হরেক রকম বই। পথ চলতি মানুষ কিংবা শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে বই নিয়ে বাড়িতে গিয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আগ্রহীদের শুধু একটি কাজ করতে হয়। সেখানে রাখা রেজিস্টারে নিজের নাম, বইয়ের নাম আর নিজের মোবাইল নম্বরটি লিখে রেখে যেতে হয়।
গত বছরের জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ থেকে এই পথ পাঠাগারের যাত্রা শুরু হয়। এ পাঠাগারটি স্থাপনে অর্থায়ন করেছে কাশীনাথপুর এলাকার স্কাইলার্ক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রায় ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে পাঠাগারের সেলফটি তৈরি করা হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি হলে যাতে পানি না ঢোকে সেজন্য মোটা থাই গ্লাস দেওয়া হয়েছে সামনের দিকে। নিজের কাছে থাকা নতুন বা পুরাতন বই পাঠাগারে দান করার আহ্বানও করা হয়েছে পাঠাগারের পক্ষ থেকে।
উদ্যোক্তাদের মতে, পাড়া-মহল্লায় এভাবে পথপাঠাগার বা ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার গড়ে তোলা হলে তরুণ প্রজন্ম ‘ভার্চুয়াল ভাইরাস’ থেকে নিজেদের সহজেই মুক্ত করতে পারবে।
কবি আলাউল হোসেন জানান, এই পথপাঠাগারটি গড়ে তোলার উদ্যোগে তার সঙ্গে রয়েছেন স্কাইলার্ক স্কুলের সভাপতি এবং প্রভাষক সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং শিক্ষক ফজলুর রহমান।
তিনি জানান, তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা নতুন-পুরানো মিলিয়ে প্রায় ৫ শতাধিক বই দিয়ে পাঠাগারটির কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর কলি প্রকাশনী ও প্রয়াস পাবলিক লাইব্রেরি থেকে দেওয়া হয় দুই শতাধিক বই। এরপর থেকে প্রায় দিনই এলাকার অনেক মানুষ বই উপহার দিয়ে পাঠাগারটিকে সমৃদ্ধ করে তুলছেন। প্রতিষ্ঠার ১৫ দিনেই প্রায় ১ হাজার বই জমা হয়েছে এ পথ পাঠাগারে।
স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পথ পাঠাগারটি সার্বক্ষণিক দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছেন পাঠাগারের পাশে অবস্থিত একটি দোকানের মালিক সুরুজ আলী ও একটি দোকানের ম্যানেজার আবির মাহমুদ। এছাড়া আশেপাশে স্কুল-কলেজপড়ুয়া কিছু শিক্ষার্থীও স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পাঠাগারটি সবার জন্য খোলা থাকে।
প্রতিদিন ৫০-৬০ জন করে পথচারী নিজেদের পছন্দের বই পাঠাগার থেকে নিয়ে যাচ্ছেন এবং পড়া শেষে আবার ফেরত দিয়েও যাচ্ছেন বলে জানান স্বেচ্ছাসেবকরা।
প্রভাষক আলাউল হোসেন জানান, বইপড়া ছাড়া মানব জীবনের ব্যর্থতা, শূন্যতা ও হতাশা থেকে পরিত্রাণের অন্য কোনো উপায় নেই। আমাদের সময় একাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি সৃজনশীল (গল্পের বই) পড়ে অথবা খেলাধুলা করে সময় কাটাতো অধিকাংশ শিক্ষার্থী। এখন সেই জায়গা দখল করেছে ফেসবুক, স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট, ইউটিউব ইত্যাদি। এতে শিক্ষার্থীদের মননশীল চর্চা একেবারেই কমে গেছে। তাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাড়া জাগাতেই স্কুল-কলেজে যাতায়াতের ব্যস্ততম মোড়ে পাঠাগারটি স্থাপন করা হয়েছে।
পাঠাগারের পাশেই অবস্থিত দোকান মালিক মীর আব্দুল বারেক বলেন, ‘পাঠাগার মানেই কিছু নিয়ম কানুন থাকে। কিন্তু এই পাঠাগারটি সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে বই নিতে বা ফেরত দিতে কারও শরণাপন্ন হতে হচ্ছে না। নেই কোনো সময়ের সীমাবদ্ধতা। এরকম একটি আয়োজন আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পাশেই হবে তা ভাবতেই ভালো লাগছে।’
পথ পাঠাগারের সহযোগী প্রভাষক সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মানুষকে আলোকিত করার স্বপ্ন দেখাতেই এই পথ পাঠাগারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটি তথ্যনির্ভর ও আধুনিক সমাজ বির্নিমাণে নতুন প্রজন্মকে বইপড়ায় সম্পৃক্ত করতে পারলে সহজেই সমাজ পরিবর্তন করা সম্ভব।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১২/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়