রংপুরঃ পীরগাছায় মহাপরিচালকের প্রতিনিধি সেজে ছয় প্রভাষকের নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির আবেদন করার তথ্য ফাঁস হয়েছে। প্রভাষকদের নিয়োগে মহাপরিচালকের প্রতিনিধির মনোনয়নপত্রসহ নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করার অপরাধে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলেও ক্ষমা চেয়ে শেষ রক্ষা পেলেন অধ্যক্ষ।
জানা যায়, উপজেলা সদরের হাজী ছফের উদ্দিন দ্বিমুখী আলিম মাদ্রাসায় ছয়জন প্রভাষক নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। বিধি মোতাবেক সব পদে প্রয়োজনীয়সংখ্যক আবেদন জমা পড়ে। বেসরকারি মাদ্রাসার নিয়োগবিধি অনুসরণ করতে গিয়ে অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান নিজে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সেজে, রংপুর কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বিনতে হুসাইন নাসরিন বানুকে নিয়োগ বোর্ডে মহাপরিচালকের প্রতিনিধি হিসাবে দেখানো হয়। এরপর কাগজে-কলমে ভুয়া নিয়োগ বোর্ড করে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপত্র দেন এবং যোগদান করান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিয়োগপ্রাপ্ত একাধিক প্রভাষক বলেন, দর কষাকষির মাধ্যমে আমরা ছয়জন প্রায় ৭৫ লাখ টাকা দিয়ে চাকরিতে যোগদান করেছি।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, নিয়োগপ্রাপ্ত আরবি প্রভাষক আলতাফ হোসেন, উচ্চতর গণিতে শফিকুল ইসলাম, রসায়নশাস্ত্রে সত্যেন্দ্রনাথ বর্মণ, জীববিজ্ঞানে সপ্তমী রানী ও পদার্থবিদ্যায় প্রদীপ কুমার সরকার ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর এবং শফিউল আলম আরবি প্রভাষক হিসাবে একই বছরের ১০ নভেম্বর হাজী ছফের উদ্দিন দ্বিমুখী আলিম মাদ্রাসায় যোগদান করেন। অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান নিজের তৈরি পত্র অনুযায়ী রংপুর কারমাইকেল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর বিনতে হুসাইন নাসরিন বানুকে ডিজির প্রতিনিধি দেখিয়ে তার স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ সম্পন্ন করেন। ভুয়া ডিজির প্রতিনিধি সেজে নিয়োগ দেওয়া সেই ছয় প্রভাষকের এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করেন।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোকসানা বেগমের সন্দেহ হলে ডিজির প্রতিনিধির বিষয়টি যাচাই করার জন্য কারমাইকেল কলেজে পত্র প্রেরণ করেন। পত্রের প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন যাচাই শেষে সঠিক পাওয়া গেল না বলে নিশ্চিত করেন। এরপর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোকসানা বেগম মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে পত্রের মাধ্যমে অবগত করেন।
তিনি তার পত্রে লেখেন, ‘শিক্ষকদের নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধির মনোনয়নসহ নিয়োগ প্রক্রিয়া জাল/জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে, সেহেতু স্বাক্ষর জাল করে শিক্ষক নিয়োগের অপরাধে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।’ এ ধরনের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির অনুরোধ অনুযায়ী বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা থাকলেও তা না করে ক্ষমা করায় অধ্যক্ষ বেপরোয়া হয়ে অনেকেরই স্বাক্ষর জাল ও তার অধীনস্থদের হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে।
জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির আবেদনের বিষয়ে অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সত্য-মিথ্যা মিলে সত্য। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, অতীতে এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল, তবে নতুন করে আবেদন করতে হবে।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৬/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়