রাজশাহীঃ জেলার সরকারি তিনটি কলেজের অধ্যক্ষ একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলের পদেও আছেন। সরকারি চাকরি বিধিমালা লঙ্ঘন করে তাঁরা দলীয় পদে থেকে নানা অনিয়ম করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
তিন অধ্যক্ষের একজন দুর্গাপুর উপজেলার দাওকান্দি সরকারি ডিগ্রি কলেজের মোজাম্মেল হক। তিনি একই সঙ্গে দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
তাঁর দলীয় পদে থাকা নিয়ে এরই মধ্যে লিগ্যাল নোটিশ করেছেন ওই কলেজের এক ছাত্রী।
আরেকজন মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন কবিরাজ। তিনি মোহনপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ। তৃতীয় জন বানেশ্বর সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ একরামুল হক রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
দলীয় ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত করা হয় দাওকান্দি সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হককে। কলেজটি ২০১৮ সালে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়। গত মার্চ মাস থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরাও সরকারি কলেজের স্কেলে বেতন পাচ্ছেন।
অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকের পদটি কেন অবৈধ নয়, তা জানতে চেয়ে ওই কলেজের মিতালী খাতুন নামের এক ছাত্রী গত ২০ জুলাই আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।
এতে বলা হয়, দাওকান্দি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হওয়া সত্ত্বেও তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত, যা গণকর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯-এর ২৫ ধারার পরিপন্থী। তা ছাড়া অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক দিনের পর দিন কলেজে অনুপস্থিত থাকলেও হঠাৎ একদিন কলেজে গিয়ে হাজিরা খাতায় সই করে শতভাগ উপস্থিতি দেখান।
এ বিষয়ে দাওকান্দি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমি আগেও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলাম। এবার দল আমাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত করেছে। সংগঠনের স্বার্থে কেন্দ্রীয় নেতারা চাইলে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি নেব।
আইনি নোটিশ পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক দাবি করেন, ‘আইনি নোটিশটি ভুয়া। বাস্তবে ওই নামে কোনো ছাত্রী নেই।’
এ ছাড়া মোহনপুর উপজেলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মফিজ উদ্দিন কবিরাজ ২০২২ সালের মে মাসে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। এর আগেও তিনি ওই পদে ছিলেন। অথচ ওই কলেজটিও ২০১৮ সালে সরকারি হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়। কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা গত মার্চ মাস থেকে বেতন পাচ্ছেন সরকারি কলেজের স্কেলে।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মফিজ উদ্দিন সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। দল থেকে সেটি গ্রহণ করা হয়েছে কি না জানি না। তবে আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই।’
আর ২০১৯ সালে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহসভাপতি হন বানেশ্বর সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ একরামুল হক। এর এক বছর আগেই কলেজটি সরকারীকরণ হয়। বানেশ্বর ডিগ্রি কলেজ মাঠে হাট বসানো এবং নিয়োগসহ নানা খাতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ আছে একরামুল হকের বিরুদ্ধে। তবে এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য একরামুল হককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকারি চাকরি করে কেউ দলীয় কর্মকাণ্ডে এমনকি ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত থাকতে পারবেন না। এটি যদি করে থাকেন তাহলে তিনি অন্যায় করছেন। গোপনে বা প্রকাশ্যে দলীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকা সরকারি চাকরিবিধির লঙ্ঘন।
ওই তিন নেতার বিষয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেন, ‘গণকর্মচারী বিধি লঙ্ঘন করে অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকসহ তিনজন জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের পদে আসীন আছেন এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। সারা দেশেই এ বিষয়টি নিয়ে সাংগঠনিক জটিলতা তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৫/০৯/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়