রেজাউল ইসলামঃ কোনো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘শিক্ষাক্রম’ হলো একটি আয়নাস্বরূপ যার মধ্যে সে দেশের মানুষ তাদের ভবিষ্যৎ দেখতে পায়। এজন্য একটি নিখুঁত শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নের কাজটি সে দেশের নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি নিখুঁত আয়না যেমন একজন ব্যক্তির একটি নিখুঁত প্রতিবিম্ব তৈরি করতে পারে, ঠিক সেভাবে একটি নিখুঁত শিক্ষাক্রম অনায়াসে একটি জাতিকে তার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারে।
অন্য কথায়, শিক্ষাক্রম হলো একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক পরিকল্পনা যা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে অর্জিত হবে সে দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এখন কথা হলো, একটি দেশের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যদি অনেকের মনে সংশয় থাকে, সন্দেহ থাকে কিংবা অস্পষ্টতা থাকে, তবে সেটা নিঃসন্দেহে সে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করবে।
কথা বলছি, বাংলাদেশের”জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২-এর ওপর উত্থাপিত কিছু আলোচনা-সমালোচনা নিয়ে। এখানে উল্লেখ্য,”জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ তার ঐতিহাসিক যাত্রা আংশিকভাবে শুরু করেছে ২০২৩ সালের জানুয়ারির শুরু থেকে প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণী এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণী নিয়ে। শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের এ প্রক্রিয়ায় ২০২৪ সালে যুক্ত হবে প্রাথমিকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণী এবং মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণী। ২০২৫ সালে একই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে প্রাথমিকের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণী এবং মাধ্যমিকের দশম শ্রেণী। ২০২৬ সালে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে একাদশ শ্রেণী এবং সর্বশেষ ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত হবে দ্বাদশ শ্রেণী। এভাবে ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ শিক্ষাক্রমটি এ দেশে চালু হবে। কিন্তু এটি চালু হতে না হতেই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষাবিদ এবং সচেতন নাগরিক মহলের একাংশে কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তারা নানা কথা বলছেন, অভিযোগ করছেন নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে।
এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে:
১. নতুন শিক্ষাক্রমে লিখিত পরীক্ষা না থাকায় শিক্ষার্থীরা বাসায় বই নিয়ে বসছে না। পড়তে বললে উত্তরে তারা বলছে যে পড়ার তেমন কিছু নেই।
২. স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রকমের দলীয় কাজ দেয়া হচ্ছে যা সমাধান করতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নানা ঝামেলা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এসব ঝামেলার মধ্যে আছে: স্কুল ছুটির পর সহপাঠীদের বাসায় গিয়ে দলীয় কাজ সমাধান করা, দলীয় কাজে অনেক সময় ব্যয় হওয়া, দলীয় কাজের উপকরণ ক্রয়ে অনেক টাকা ব্যয় হওয়া, দলীয় কাজের অজুহাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের অনিয়ন্ত্রিতভাবে ডিভাইস ব্যবহার করা ইত্যাদি।
৩. অভিভাবকরা নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় পরিচালিত শ্রেণী কার্যক্রম তেমন বুঝতে পারছেন না এবং এজন্য তারা তাদের শিশুদের পড়ালেখায় সাহায্য করতে পারছেন না।
৪. নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া তাদের কাছে এখনো অস্পষ্ট ও অসম্পূর্ণ মনে হচ্ছে। অভিভাবকরা মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত জানতে শিক্ষকদের শরণাপন্ন হলে তারাও এ বিষয়ে তেমন স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না।
৫. নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের জন্য গভীর জ্ঞান অর্জনের পথ বন্ধ করে ভাসা ভাসা জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে হাতে-কলমে শেখানোর নাম করে কোমলমতি শিশুদের দিয়ে ডিম ভাজি ও আলু ভর্তা করার মতো কাজ শেখানো হচ্ছে।
এসব অভিযোগ বা প্রশ্ন কিন্তু আর ঘরের মধ্যে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনায় সীমাবদ্ধ নেই। এখন ‘সচেতন অভিভাবক’-এর ব্যানারে রাজপথে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভিডিও ফুটেজের কল্যাণে দেখা যাচ্ছে, অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক রাস্তায় নেমে নতুন এ শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন করছেন। তারা অচিরেই এ শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবি করছেন। তারা তাদের আন্দোলনের সপক্ষে এরই মধ্যে সাত দফা দাবি পেশ করেছেন। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে: নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল, ৫০-৬০ নম্বরের অন্তত দুটি সাময়িক পরীক্ষা চালু করা, ত্রিভুজ-বৃত্ত-চতুর্ভুজসহ সব ধরনের চিহ্নভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি বাতিল করে নম্বর ও গ্রেডিং-ভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি ফিরিয়ে আনা, শিখন ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক সব ক্লাসের খরচ স্কুলকে বহন করা এবং স্কুল চলাকালেই প্রজেক্টের সব কাজ শেষ করা, শিক্ষার্থীদের দলগত কাজে মোবাইলসহ সব ধরনের ডিভাইসমুখী হতে নিরুৎসাহিত করে অধ্যয়নমুখী করা ইত্যাদি।
নতুন এ শিক্ষাক্রমের ওপর শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের একাংশের এমন মূল্যায়ন মোটেও অস্বাভাবিক নয়। এটা খুবই সাধারণ ও প্রত্যাশিত ব্যাপার। এতে ঘাবড়ানোর কোনো কারণ নেই। যেকোনো নতুন ধারণা চালুর প্রাক্কালে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা, সমালোচনা ও পর্যালোচনার মুখোমুখি হয়। এসব বিষয়কে নেতিবাচকভাবে না দেখে ইতিবাচকভাবে দেখলে অনেক ধরনের আশাপ্রদ সমাধান বের হয়ে আসে। এই যেমন ধরুন, নতুন এ শিক্ষাক্রমের খারাপ দিক নিয়ে আমাদের অভিভাবকদের একাংশের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া এবং তৎপরতা দেখা যাচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে যে আমাদের অভিভাবকরা শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে মোটেও উদাসীন নয়, বরং তারা আমাদের কোমলমতি শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে বদ্ধপরিকর। তারা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কোনো কিছুতেই নষ্ট হতে দিতে চান না। আমাদের অভিভাবকদের মধ্যকার মূল্যবান এ চেতনা ও সচেতনতাবোধকে সদা জাগ্রত রাখতে হবে যাতে করে একটি সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক দলের যৌথ প্রচেষ্টায় আমরা নতুন শিক্ষাক্রমের একটি সুন্দর ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন দেখতে পারি।
তবে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক-অবকাঠামোগত বাস্তবতায় নতুন শিক্ষাক্রমের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা নিয়ে অনেকেই আলোচনা করার চেষ্টা করেছেন। অভিজ্ঞতাভিত্তিক নতুন এ শিক্ষাক্রমের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে আমার কাছে সবসময় মনে হয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত দুর্বলতা এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের পথে প্রধান অন্তরায়। বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তীব্র শিক্ষক সংকট রয়েছে, রয়েছে শ্রেণীকক্ষের অস্বাভাবিক আকারের মতো মারাত্মক সব সমস্যা। অথচ নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় একটি শ্রেণীকক্ষের শিক্ষার্থীর মোট সংখ্যা কোনো ক্রমেই ৪০-এর বেশি হওয়ার কথা নয়। নতুন এ শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই এবং শিখন-শেখানো কার্যক্রমগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে একটি নির্ধারিত সময়ে একজন শিক্ষক কোনোভাবেই ৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে সুষ্ঠুভাবে নির্দেশনা প্রদান, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করতে পারবেন না।
নতুন এ শিক্ষাক্রমের অভিজ্ঞতাভিত্তিক ও যোগ্যতাভিত্তিক শিখন-শেখানোর ধারণাটি বেশির ভাগ শিক্ষকের কাছে নতুন হওয়ায় তাদের কাছেও বিষয়টি অনুধাবন করা সময়সাপেক্ষ ও জটিল মনে হচ্ছে। শিক্ষকদের মধ্যকার শিক্ষাক্রম অনুধাবনের এ সীমাবদ্ধতা দূর করার একটাই উপায়, তা হলো মানসম্মত ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ। কিন্তু সারা দেশে শিক্ষকরা মাত্র পাঁচদিনের প্রশিক্ষণ পেয়েছেন এ শিক্ষাক্রম বোঝা ও সে অনুযায়ী পাঠদান করার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণ নতুন এ ধারণা বুঝে উঠে পাঠদান করার সক্ষমতা অর্জন করতে আরো অনেক বেশি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে। সেই সঙ্গে নতুন এ শিক্ষাক্রমের ওপরে অত্যন্ত পারদর্শীদের দিয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা জরুরি, যাতে শিক্ষকরা নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় পাঠদানের ওপর সঠিক ধারণা লাভ ও সে অনুযায়ী শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন। কিন্তু আমরা হতাশার সঙ্গে লক্ষ করেছি যে আমাদের বেশির ভাগ শিক্ষক নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করেননি। উল্টো অনেক শিক্ষককে নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর একেবারেই অনভিজ্ঞ প্রকল্পে কর্মরত একাডেমিক সুপারভাইজারদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের পথে বড় চ্যালেঞ্জ।
নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই ও শিখন-শেখানোর কার্যক্রমগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে সেগুলো আগের শিক্ষাক্রমের মতো মুখস্থনির্ভর ও তাত্ত্বিক নয়, বরং এগুলো যোগ্যতাভিত্তিক ও ব্যবহারিক। এ কাজগুলো শ্রেণীকক্ষে বা শ্রেণীকক্ষের বাইরে হাতে-কলমে সম্পাদন করতে শিক্ষার্থীদের প্রচুর পরিমাণে শিক্ষা উপকরণ ও শিক্ষাসহায়ক উপকরণ ব্যবহার করতে হবে যেগুলো ব্যয়বহুল এবং বাংলাদেশের সব প্রান্তে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে সহজলভ্য নয়। গ্রামের বেশির ভাগ পরিবার অসচেতন ও অসচ্ছল হওয়ায় তারা এসব উপকরণ ক্রয়ে আগ্রহ দেখাবে না। আবার এসব উপকরণ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমের শিখন-শেখানো কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করাও সম্ভব নয়। এ সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে উপকরণ সরবরাহের আদেশ দিলেও সব প্রতিষ্ঠানে সেটি তেমন সাড়া ফেলেনি। ব্যয়বহুল শিক্ষা উপকরণ যে এখন নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তা সচেতন অভিভাবকদের বিক্ষোভ থেকেও শক্তভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না হলে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
নতুন শিক্ষাক্রমের দিকে দ্রুতবেগে ছুটে আসা সবচেয়ে বড় সমালোচনা হলো এর মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে। এ মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় সামষ্টিক মূল্যায়নের ওপর জোর না দিয়ে শিখনকালীন বা ধারাবাহিক মূল্যায়নের ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। শিখনকালীন মূল্যায়ন পদ্ধতি মুখস্থনির্ভর সামষ্টিক মূল্যায়নের চেয়ে ভালো পদ্ধতি হলেও বাংলাদেশের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত মান বিবেচনায় এবং অভিভাবক, শিক্ষক, সুধীজনের মধ্যে শিক্ষা নিয়ে যথেষ্ট ভাবনার অভাবে এটি সেভাবে হালে পানি পাচ্ছে না। সেই সঙ্গে এ দেশের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিনের লিখিত পরীক্ষার চল থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। লিখিত পরীক্ষা না থাকায় অনেকের মধ্যে আবার শুদ্ধভাবে লেখার দক্ষতা গড়ে উঠছে না। অনেকে ঠিক বানানে বাক্য লেখার দক্ষতাও তৈরি করতে পারছে না। আগের ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার সংস্কৃতি তাদের সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি এসব ভাষাগত দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করত। ‘লিখিত পরীক্ষা নেই’—এ অজুহাতে পড়তে না বসার প্রবণতা তো অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে আছেই। এ নানা সমস্যার কারণে অভিভাবকদের বড় একটি অংশ এ মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন, যা নতুন এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের পথে একটি দৃশ্যমান বাধা।
এভাবে বলতে গেলে সমালোচনার তালিকাটি লম্বা হবে। তবে আগেই বলেছি, সব শুভ উদ্যোগের পেছনে কোনো না কোনো সমালোচনা থাকবেই। এক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের পথে সমালোচনাকে অন্তরায় হিসেবে না দেখে বরং তাকে নতুন যাত্রাপথের শক্তি হিসেবে দেখতে হবে। সেজন্য নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের পথের এ সমালোচনা-বিভ্রাট দূর করতে সরকারকে অচিরেই কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। পদক্ষেপগুলোর মধ্যে থাকবে নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর উত্থিত সমালোচনাগুলো ভালোভাবে পর্যালোচনা করা এবং সে অনুযায়ী সমালোচনাগুলো দূর করতে সচেষ্ট হওয়া, প্রতিবাদরত বা বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী-অভিভাবক-সুধীজনদের নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসা, তাদের অভিযোগ-অনুযোগগুলো গুরুত্বসহকারে শুনে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া, নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর বিশেষজ্ঞদের দিয়ে বৃহত্তর পরিসরে সভা-সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা, নতুন শিক্ষাক্রমের জটিল ও দুর্বোধ্য বিষয়গুলোর ওপর অত্যন্ত সহজ ও বিশদভাবে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করে তা জাতীয় গণমাধ্যম, সরকারি ওয়েবসাইট এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করা, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের পথে অভিভাবকদের ওপর থেকে অতিরিক্ত খরচের চাপ কমাতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা ইত্যাদি।
ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আনীত অভিজ্ঞতাভিত্তিক ও যোগ্যতাভিত্তিক শিখন-শেখানোর এ ধারণা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হুট করে জনপ্রিয় ও ফলপ্রসূ হবে না। এর জন্য দরকার সাহস, ধৈর্য ও প্রজ্ঞা। শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের পথে হুট করে পরিলক্ষিত হওয়া সমস্যাগুলো সমাধানে ধারাবাহিকভাবে কার্যকরী কৌশল আয়ত্ত ও প্রয়োগ করাও বাঞ্ছনীয়। শিক্ষাক্রম কোনো হেলাফেলার বিষয় নয়। এটা আমাদের ভবিষ্যৎকে নির্ধারণ করবে। তাই নতুন এ শিক্ষাক্রম নিয়ে উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে ত্বরিত ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বাংলাদেশের শিক্ষা প্রশাসনকে।
লেখকঃ সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি), পাইকগাছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, খুলনা।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৮/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়