নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন চলছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ২০২৩ সালে এ দুই শ্রেণির পরীক্ষা আর প্রচলিত পদ্ধতিতে হবে না। প্রচলিত পরীক্ষার বদলে কী হবে এ নিয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরাও মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে দোটানায়। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) মূল্যায়নের জন্য একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করবে বলে বলা হয়েছে। তবে গাইডলাইন এখনও করা হয়নি। এনসিটিবি বলছে, নতুন শিখন-শেখানো কার্যক্রম চালু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক এবং বার্ষিক পরীক্ষার বদলে ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও সামষ্টিক মূল্যায়ন (পরীক্ষা) পদ্ধতি চালু হচ্ছে। ইতিমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) চলতি শিক্ষা বছর চালু হওয়া ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রমে কোনো ধরনের মডেল টেস্ট বা পরীক্ষা নেওয়া যাবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছে। যদি কেউ এর ব্যত্যয় ঘটায় তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নতুন শিক্ষক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিখনকালীন মূল্যায়ন ৬০ শতাংশ ও সামষ্টিক মূল্যায়ন (বছর শেষে পরীক্ষা) ৪০ শতাংশ। বাকি বিষয় জীবন ও জীবিকা, তথ্যপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি (বিদ্যমান বিষয়- চারু ও কারু কলা) শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ। আর নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিখনকালীন মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ আর সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৫০ শতাংশ। নবম ও দশম শ্রেণির বাকি বিষয়গুলোর শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ।
মাউশির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিখন-শেখানো ও মূল্যায়ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এনসিটিবি প্রণীত শিক্ষক সহায়িকা এবং শিক্ষাক্রমের নির্দেশনা অনুসারে সম্পাদন করতে হবে। এ দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রচলিত কোনো পরীক্ষা বা মডেল টেস্ট গ্রহণ করা যাবে না। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়ে এনসিটিবি থেকে যে গাইডলাইন পাওয়া যাবে তা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। মাউশি আরও জানিয়েছে, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষক, প্রতিষ্ঠান প্রধান, উপজেলা বা থানা একাডেমিক সুপারভাইজার, উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার, আঞ্চলিক উপ-পরিচালক এবং আঞ্চলিক পরিচালকদের নিয়মিত পরিবীক্ষণ জোরদার করতে হবে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেষ্ট ও সচেতন থাকতে হবে।
প্রচলিত মূল্যায়ন বা পরীক্ষা পদ্ধতির বদলে যে পদ্ধতি চালু হচ্ছে তা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে এখনও হয়তো অনেকের অনেক রকম সন্দেহ-সংশয় রয়েছে। অধিকাংশ মানুষ ভালো বলছেন, আবার অনেকেরই সংশয় রয়েছে।
কেউ কেউ বলছেন পরীক্ষা থাকবে না। তাহলে কেমন হলো? পরীক্ষা থাকবে না, আসলে তা ঠিক নয়। অনেক পরীক্ষাই থাকবে, আবার অনেক পরীক্ষা থাকবে না। কিন্তু পরীক্ষা থাকবে না এর মানে মূল্যায়ন থাকবে না, তা নয়। ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। দীপু মনি বলেন, কেউ কেউ বলছেন শিক্ষকদের হাতে ধারাবাহিক মূল্যায়নের যে অংশ থাকবে, তাহলে কি শিক্ষকদের হাতে জিম্মি হয়ে যাব? শিক্ষকদের প্রতি আমাদের যেমন সম্মান থাকতে হবে, তেমনি আস্থাও রাখতে হবে। হ্যাঁ, কোথাও কোথাও আস্থাহীনতা ঘটে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেখানে যেন সমস্যা না হয়, সেটা দেখেই আমরা শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে চাই।
এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান বলেন, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাসে নিয়মিত মূল্যায়ন চলছে। ছয় মাস পর সামষ্টিক একটি মূল্যায়ন করা হবে। তিনি বলেন, প্রচলিত পদ্ধতির পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। ঘণ্টা বাজে এরপর শিক্ষার্থীরা ৫টি, ৭টি কিংবা ১০টি প্রশ্নের উত্তর লেখে। নতুন শিক্ষাক্রমে সে রকম পরীক্ষা নেই। আমরা এ পদ্ধতিকে বলছি নিয়মিত মূল্যায়ন। একটি প্রকল্পের সমস্যা সমাধান কী হবে তা লেখা এবং তা থেকে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা। অভিভাবকদের মূল্যায়ন, কমিউনিটির মূল্যায়ন, শিক্ষকদের মূল্যায়ন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ছয় মাস ধরে ক্লাসে যে ধরনের কাজগুলো শিক্ষার্থীরা করেছে, তার আলোকে সমস্যার সমাধান বের করতে হবে।
প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান বলেন, শিশুরা নিজেদের মতো করে প্রশ্নের উত্তর দেবে এ জন্য সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেল শিক্ষকরা নোট-গাইড বই থেকে উত্তর শেখাচ্ছে। ছয় মাস পর সামষ্টিক মূল্যায়নের জন্য এখনই গাইডলাইন দিয়ে দিলে এবারও নোট-গাইড বই বের হয়ে যাবে।
দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এখনই এ ধরনের শিক্ষাক্রম শতভাগ কার্যকর করার যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। মেট্রোরেলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবাই উঠতে পারবে এ আশা করলে তা চালু করা সম্ভব হতো না। তেমনি পদ্মা সেতু উদ্বোধনকালে কয়েক দিন বিশৃঙ্খলা হয়েছে। শুরুতে কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়।
প্রফেসর মশিউজ্জামান বলেন, নতুন শিখন-শেখানো কার্যক্রমের উপকরণ কিনতে কিছু লোকের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ১০-১২ বছর আগেও শিক্ষার্থীদের বই কিনে পড়তে হতো। এখন সরকার বিনামূল্যে পাঠ্যবই দিচ্ছে। শিখন-শেখানো উপকরণ আগামীতে বিনামূল্যে সরকার দেবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রাথমিক থেকে নতুন শিক্ষাপদ্ধতি চালু করতে পারলে ভালো হতো। তবে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের জন্য এখনই এ পদ্ধতি চালু করা জরুরি ছিল। ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়ায় এ পদ্ধতিতে পড়ানো হচ্ছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২১/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়