নিজস্ব প্রতিবেদক।।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুই স্কুলছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কলেজ পরিচালনা পর্ষদ। একইসাথে তাকে ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল মালেকের কার্যালয়ে তার উপস্থিতিতে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট এই তথ্য প্রকাশ করেন মহিলা কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি লতিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখ বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজের একটি কক্ষে আটকিয়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুই ছাত্রীকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠে। এ সময় ওই দুই ছাত্রীর চিৎকার শুনে এক ছাত্রীর মা স্থানীয় লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে পুলিশ কলেজ অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কিছু সময় পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ওই দিন দুপুর ১২ টার দিকে স্কুল পড়ুয়া ওই দুই ছাত্রীসহ কয়েকজন শিশু মহিলা কলেজ মাঠে ব্যাডমিন্টন খেলতে যায়। কলেজের অধ্যক্ষ মাঠে থাকা কয়েকজন মেয়ে শিশুকে কলেজ দেখানোর কথা বলে ডেকে ভবনের একটি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তাদের বিস্কুট খাইয়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ওই দুই ছাত্রীকে রেখে সবাইকে বের করে দেন। পরে অধ্যক্ষ কক্ষের দরজা আটকিয়ে ওই দুই ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে স্পর্শকাতর অঙ্গে হাত দিতে থাকেন। এ সময় তারা চিৎকার করলে এক ছাত্রীর মা এগিয়ে এসে কলেজের প্রধান ফটকে তালা আটকানো দেখতে পান। পরে কলেজের অফিস করনিক ইরশাদ আলী গেটের তালা খুলে দেন। এরপর ওই ছাত্রীর মা কলেজের একটি কক্ষ থেকে লুঙ্গি পড়া অবস্থায় খালি গায়ে অধ্যক্ষকে বের হতে দেখেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এর আগেও একটি মেয়েকে ডেকে নিয়ে ওই অধ্যক্ষ তার কক্ষে আটকিয়ে শ্লীলতাহানি ঘটিয়েছিল। এ ছাড়া ওই অধ্যক্ষ কলেজের ছাত্রীদের সাথে অহরহ এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকলেও লোকলজ্জায় তারা অভিযোগ করেন না। তবে এসব কারণে অনেক অভিভাবক তাদের মেয়েদের কলেজ থেকে অন্যত্র নিয়ে গেছেন বলেও স্থানীয়রা জানান।
ওই দুই ছাত্রীর অভিভাবক এ বিষয়ে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল মালেকের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। বিষয়টি টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলামের নজরে আসলে তিনি তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. হারুন অর রশিদকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মশিউর রহমান এবং মহিলা বিষয়ক অফিসার মিনু পারভীন।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত ২৪ জুন মহিলা কলেজ পরিচালনা পরিষদের এক বৈঠক শিক্ষকদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে কলেজের অভিযুক্ত অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত এবং কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। ১৫ দিনের মধ্যে উপযুক্ত কারণ দর্শাতে ব্যর্থ হলে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে বলে কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. জাকির হোসেন মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের অবহিত করেন।