মোঃ রিযওয়ানুলঃ প্রতিযোগিতার এ বিশ্বে সবাই সামনে এগিয়ে যেতে চায়, সফল হতে চায়। কথায় আছে সাফল্যের কোনো শর্টকাট রাস্তা নেই। তাই জীবনে সফল হতে হলে জীবনের প্রারম্ভিক সময় থেকেই শক্ত হয়ে নামতে হবে জীবনযুদ্ধে। এ সময়টাতে একটা শিশুর মধ্যে এ উপলব্ধিটা না এলেও তার অভিভাবক যদি সঠিক গাইড লাইন দিয়ে তার সন্তানকে এগিয়ে নিতে পারেন, তবে তার জীবনে সাফল্য আসবেই। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চশিক্ষার সব স্তরেই সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়মাবলি মেনে চললে সাফল্যের পথে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়া যায়। একজন শিক্ষার্থী যখন বছরের শুরুতেই সিলেবাস অনুযায়ী পড়াশোনা শুরু করে, নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে, যথাযথভাবে বাড়ির কাজ সম্পাদন করে, শিক্ষকদের অনুসরণ করে, বাবা-মা তথা অভিভাবকদের কথা মেনে চলে, পাঠের প্রতি মনোযোগী হয়- তাহলেই সাফল্য এসে তার দরজায় আছড়ে পড়বে।
নিয়মিত শ্রেণি উপস্থিতি
একজন শিক্ষার্থীর সাফল্যের প্রথম ধাপ হলো নিয়মিত শ্রেণি উপস্থিতি। নিয়মিত শ্রেণি উপস্থিতি একজন শিক্ষার্থীর মনোবলকে চাঙা করে। পাঠের প্রতি আগ্রহ জাগায়। শিক্ষকদের দৃষ্টির মধ্যে থাকা যায়। আর শিক্ষকদের নজরে থাকা যে কোনো শিক্ষার্থীর জন্য একটি ইতিবাচক দিক। বিদ্যালয়ে নিয়মিত যাতায়াত এটি একটি সুঅভ্যাস। একজন শিক্ষার্থীর যতগুলো সুঅভ্যাস থাকতে পারে, তারমধ্যে এটি অন্যতম। শিক্ষক যখন শ্রেণিতে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করেন, তখন কিছু শিক্ষার্থী তার দৃষ্টিতে এসে যায়। সেসব শিক্ষার্থীই সৌভাগ্যবান যারা শিক্ষকদের নজরে থাকেন। বোর্ড ব্যবহার করানো, দলনেতা সাজানোসহ নানাবিধ কাজ করার সুযোগ এসে পড়ে তার। দলীয় কাজ, জোড়ায় কাজ, একক কাজসহ সব কাজে অগ্রবর্তী ভূমিকায় থাকা যায়। কখনো কখনো শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীকে দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রমও চালিয়ে নিতে পারেন। বিশেষ করে নতুন কারিকুলামে যে শিখন পদ্ধতি রয়েছে- তাতে নিয়মিত শ্রেণিতে উপস্থিত থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পাঠ কার্যক্রম। আর তাতে যে শিক্ষার্থী অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে সে তো সফল হবেই।
শ্রেণির কাজ সম্পাদন
শিক্ষক শ্রেণিতে যেসব শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করেন, বিশেষ করে বোর্ডে কাজ দেওয়া কিংবা একক কোনো কাজ দেওয়া, শিক্ষার্থী যখন তাৎক্ষণিক ওই কার্যক্রমগুলো সম্পাদন করতে পারে- তখন ওই শিক্ষার্থী ওই শ্রেণির ‘স্টুডেন্ট অব দা ক্লাস’ এ পরিণত হয়। আর শিক্ষকের সুদৃষ্টি পড়ে ওই শিক্ষার্থীর ওপর। নিয়মিতভাবেই যখন এ কাজটি চলতে থাকে তখন অন্য শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিও পড়ে তার ওপর। এভাবেই একজন শিক্ষার্থী ওই শ্রেণির শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীতে পরিণত হয়। এভাবেই তার দেখাদেখি অন্য শিক্ষার্থীরা উদ্বুদ্ধ হলে পুরো ক্লাসটাই একটা সেরা ক্লাসে পরিণত হয়ে যেতে পারে। এমনকি একজন শিক্ষার্থীর অনুসরণে একটি বিদ্যালয়ের চেহারাও পাল্টে যেতে পারে।
বাড়ির কাজে আগ্রহ বৃদ্ধি
যখন কোনো শিক্ষার্থী শ্রেণিতে উদ্দীপনা পায়, শিক্ষকের উৎসাহ পায়- তার কাজের আগ্রহ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। শিক্ষকের দেওয়া বাড়ির কাজের প্রতি অধিক মনোযোগী হয়। পরবর্তী দিন তার কাজটি যেন সবার আগে দেখাতে পারে- তার কাজটি যেন সবচেয়ে ভালো হয় সেজন্য পূর্ণ মনোনিবেশের সঙ্গে সে কাজটি সম্পাদন করে। ওই কাজের যখন ভালো স্বীকৃতি অর্জন হয়, তখন তার পাঠ ও কাজের প্রতি আগ্রহ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। ফলে অভিভাবককেও আর অতিরিক্ত পেরেশানি হতে হয় না। এ আগ্রহের ফলে দিন দিন তার পাঠের অগ্রগতি দৃশ্যমান হয় আর কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছার পথ সুগম হয়।
স্বনির্ভরতা অর্জন
আজকাল আমাদের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশকেই দেখা যায় পরনির্ভরশীল হয়ে পড়তে। বাসায় প্রাইভেট টিউটর ছাড়া কোনো কাজই যেন করা যায় না। কিন্তু যখন একজন শিক্ষার্থী শ্রেণির কাজ পুরোপুরি অনুসরণ করে, তখন সে নিজে নিজেই বাড়ির কাজ সম্পন্ন করতে পারে। এর ফলে বাসায় অভিভাবক কিংবা প্রাইভেট টিউটরের ওপর তাকে নির্ভর করতে হয় না।
শিক্ষক যখন মেন্টর
সর্বোপরি একজন শিক্ষার্থীকে সফলভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পরিবেশ একটি বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। বিদ্যালয়ের অনুকূল পরিবেশের পাশাপাশি একজন শিক্ষক মেন্টরের ভূমিকা পালন করতে পারেন। একজন শিক্ষার্থীকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দেওয়াই একজন শিক্ষকের সার্থকতা। বাবা-মার সব দুঃখ কষ্টও লাঘব হয়ে যায় সন্তানের সাফল্যের দরুন। সুশিক্ষা অর্জন, পাশাপাশি নৈতিকতা আর মূল্যবোধের শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে একজন সফল শিক্ষার্থী হতে পারে পরিবার, সমাজ তথা দেশের সম্পদ। এ দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থী এদেশের একেকটি সম্পদে পরিণত হোক- এ প্রত্যাশা রইল।
লেখকঃ সহকারী শিক্ষক, ৭৪নং মাসাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/৩১/০৮/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়