শ্রেণিকক্ষে ক্লাস বাদ দিয়ে চলে শিক্ষকদের জুয়ার আসর!

নীলফামারীঃ শ্রেণিকক্ষে ক্লাস বাদ দিয়ে জুয়া খেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে মাদ্রাসা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নে অবস্থিত ভেড়ভেড়ী কামাল উদ্দিন মাদ্রাসার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উত্থাপন করেছেন পুটিমারী ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান আবু সায়েম লিটন। তার অভিযোগ সংবলিত একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে উপজেলাজুড়ে।

ভিডিওতে চেয়ারম্যান আবু সায়েম লিটন বলেন, ওই মাদ্রাসার বর্তমান কমিটি অবৈধ, এই কমিটির কোন সদস্যর সন্তান এখানে পড়াশোনা করে না। এরা যেনতেনভাবে কমিটি পাশ করিয়ে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ বাণিজ্য করছে। এটি একটি অকেজো মাদ্রাসা। গত ১৫ বছরে আমি এখানে কোনো ছাত্রের উপস্থিতি দেখিনি। শিক্ষকরা মাদ্রাসায় এসে জুয়া খেলেন ।

জানা গেছে, গত ১৩ অক্টোবর ভেড়ভেড়ী কামাল উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসায় অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তা প্রহরী ও আয়া পদে তিনজনকে নিয়োগ দেয়ার জন্য নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি বিধি-বিধান অনুসরণ না করায় এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেন। তারা পরীক্ষা স্থগিত করার জন্য মাদ্রসার কমিটিকে অনুরোধ করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী সাজানো নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধের দাবিতে মাদ্রাসা মাঠে হট্টগোল করতে থাকেন। লোক দেখানো এ নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি থাকলেও স্থানীয়দের তোপের মুখে গাড়ি থেকে না নেমে চলে যান ডিজির প্রতিনিধি। পরবর্তীতে আবারও পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সকালে মোট ৩টি পদে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার, নিরাপত্তা প্রহরী ও আয়া পদে লোক দেখানো এ নিয়োগ সম্পন্ন করেন তারা। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য সাংবাদিকদের টাকা সাধেন মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মোখলেছার রহমান।

সরজমিনে উক্ত প্রতিষ্ঠান গিয়ে দেখা যায়, সকাল আটটায় পরীক্ষা নেওয়ার কথা থাকলেও আটটা ত্রিশ মিনিট পর্যন্ত কেউ মাদ্রাসায় উপস্থিত হননি। সকাল প্রায় নয়টার সময় ডিজির প্রতিনিধি মাদ্রসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাজিবুল আহসান ও মাদ্রাসা সুপার নূহু ইসলাম একটি মাইক্রোবাসে প্রতিষ্ঠানে আসেন। এসেই তড়িঘড়ি করে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করেন। নিয়োগ পরিপত্রে বলা আছেন প্রতিষ্ঠানে এসে পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি করতে হবে। পরীক্ষা শুরুর আগে ২ জন প্রার্থী ছাড়া অন্যদের প্রবেশপত্র সাথে ছিল না। নিয়ম মাফিক কোনো পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়নি।

একটি সূত্র জানায়, ডিজির প্রতিনিধি ১৯ অক্টোবর রাতে সৈয়দপুর এয়ারপোর্টে অবতরণ করেন। সেখান থেকে তিনি রাত্রীযাপনের জন্য নীলফামারী সার্কিট হাউসের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এবং রাতের মধ্যে ভেড়ভেড়ী কামাল উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মোখলেছার রহমান ও সুপারের উপস্থিতে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি করেন তারা। এবং ২০ অক্টোবর সকালে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য উত্তরপত্র তৈরি করা হয়। এরকম নানা অভিযোগ স্থানীয়দের মুখে ছড়িয়ে পড়েছে।

পুটিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সায়েম লিটন জানান, এই প্রতিষ্ঠানে কোন ছাত্রছাত্রী দেখি না আমরা। এখানে ওনারা সবাইকে চাকরি দিতে চেয়ে টাকা নেন। তিনটি পদের বিপরীতে টাকা নিয়েছেন ১৩ জনের কাছে।

মাদ্রাসা সুপার নূহ ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে (০১৩০৯১২৫০৩৮) জানতে চাইলে, সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ব্যস্ত আছি বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

টাকার বিনিময়ে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগের ব্যাপারে জানতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাজিবুল আহসানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকার পরেও আপনি কীভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেন, এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি ডিজির প্রতিনিধি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়াতে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম রুহুল আমিন বলেন, এটা কমিটির ব্যাপার। এখানে আমার কিছু করার নেই। মাদ্রাসার অবকাঠামোগত সমস্যা থাকায় শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম বলে শুনেছি। তবে শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে বসে জুয়া খেলার বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/১০/২০২৩    

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়