নাটোরঃ জেলার গুরুদাসপুরে শোক দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার অপরাধে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষককে এমপি’র নির্দেশে বরখাস্ত করা করেছে জেলা শিক্ষা অফিস।
বুধবার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ গোলাম নবী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে গুরদাসপুর উপজেলার দড়িকাছিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাসুদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
গুরুদাসপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ায় এমপি আব্দুল কুদ্দুসের নির্দেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এর আগে মাসুদুর রহমানেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলে তিনি দোষ স্বীকার ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে ওই শিক্ষকের জবাবের বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে পাঠানো হলে তিনি সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন।
নাটোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ গোলাম নবী বলেন, ‘গুরদাসপুর উপজেলার দড়িকাছিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাসুদুর রহমান রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বলে নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস ঐ শিক্ষককে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন। এমপি মহোদয়ের নির্দেশ পেয়ে ঐ শিক্ষককে প্রথমে শোকজ এবং পরে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
এতে অভিযুক্ত শিক্ষকের মঙ্গলই করেছেন বলে দাবি করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। তিনি দাবি করেন ঐ শিক্ষককে সাময়িক দরখাস্ত করা না হলে জেলার বাইরে বদলি করে দেওয়ার নির্দেশ ছিল এমপির পক্ষ থেকে।
তিনি বলেন, জেলার বাইরে না দিয়ে সাময়িক বরখাস্ত করায় শিক্ষকের জন্য মঙ্গলজনক হয়েছে। এখন তিনি কাজ না করেও বেতন ভাতা পাবেন।
অভিযুক্ত শিক্ষক মাসুদুর রহমান লিখিত জবাবে উল্লেখ করেন, ‘গত ১৪ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টার জাতীয় শোক দিবস যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের প্রেক্ষিতে ও প্রস্তুতি উপলক্ষে প্রস্তুতিসভা ও একটি গণমিছিলে অংশ নেই। মিছিলে আমি দেশপ্রেমে উজ্জীবিত নাগরিক হিসেবে- জয় বাংলা- জয় বঙ্গবন্ধু, ১৫ই আগস্ট সফল হোক, সফল হোক, আজকের এই দিনে- মুজিব তোমায় মনে পড়ে, লাল সবুজের পতাকায়- মুজিব তোমায় দেখা যায়, কে বলেরে মুজিব নাই- মুজিব সারা বাংলায়, জাতির পিতা শেখ মুজিব- লও লও লও সালাম, স্লোগান দেই। এর বাহিরে অন্য কোন স্লোগান আমি দেই নাই। আমার স্লোগানে কোন সরকার বিরোধী কথা ছিল না। তাছাড়া আমি সরকারি কর্মচারী হিসেবে সরকার ঘোষিত সকল জাতীয় দিবসে অংশগ্রহণ করে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করেছি।’
জানা যায়, তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন তিনি।
শিক্ষক মাসুদুর রহমান বলেন, শোক দিবসের ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এবং নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আহম্মদ আলী মোল্লা। এমপি কুদ্দুসের প্রতিপক্ষ নেতার অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেন ওই শিক্ষক।
মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আমার পরিবার পরিজন আছে, অর্ধেক বেতন দিয়ে আমি কিভাবে দিনাতিপাত করবো? আবার শিক্ষা অফিসার বলছেন আমারই নাকি মঙ্গল করেছেন তিনি। আমি এই বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার চাই। আমি জাতির জনকের স্লোগান দিয়ে কোন অন্যায় করিনি।’
এবিষয়ে নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য এবং নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ওই শিক্ষক শোক দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আমার বিরুদ্ধে এবং প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে। আমার নেতাকর্মীরা তাকে মেরে হাত-পা ভেঙে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমি বলেছি শিক্ষককে মারধর করা যাবে না তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।পরে আমি জেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছি ব্যবস্থা নিতে। সূত্রঃ একাত্তর টিভি
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৫/০৮/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়