নিউজ ডেস্কঃ
কলেজের অধ্যক্ষ মাস্টার্স ডিগ্রিধারী এবং শিক্ষকরাও প্রায় সমমানের ডিগ্রিধারী। অথচ কলেজ পরিচালনার জন্য দায়িত্বে থাকা গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো মাপকাঠি নেই। এই সুযোগে প্রাইমারি স্কুলেও যাননি এমন ব্যক্তিরাও গভর্নিং বডির সভাপতি বা সদস্য হচ্ছেন। অযাচিত কর্তৃত্ব খাটাচ্ছেন অধ্যক্ষের ওপর। এতে বিব্রত হচ্ছেন অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা। আবার শিক্ষাগত জ্ঞান না থাকায় কলেজ পরিচালনার ক্ষেত্রেও তৈরি হচ্ছে জটিলতা। মাধ্যমিক স্কুল পরিচালনায় ‘ম্যানেজিং কমিটির’ চিত্রও একই।
এমন প্রেক্ষাপটে গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্যদের নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিতে চায় শিক্ষা বোর্ডগুলো। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. হারুন অর রশিদ গতকাল বলেন, আমরা গভর্নিং বডির নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন ও সংযোজনের কাজ শুরু করেছি। আমরা মনে করি গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অধ্যক্ষ এবং শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সমমান হওয়া উচিত। এমনটি বিবেচনায় এনে এ সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। শিগগিরই চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেওয়া হবে। নিয়ম অনুযায়ী এই নীতিমালা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখানেই এটি অনুমোদন হবে।
২০০৯ সালের ৮ জুলাই জারি করা প্রজ্ঞাপনে কলেজের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয় গভর্নিং বডিকে। নির্বাচনের মাধ্যমে সদস্যরা নির্বাচিত হলেও সভাপতি হন স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশে। এই সুযোগে অশিক্ষিতরাও হন সভাপতি। গভর্নিং বডির অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে, এর মধ্যে অর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মানোন্নয়ন ও সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম নিশ্চিতকরণ, শৃঙ্খলা, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ, বাজেট সভা ও বার্ষিক প্রতিবেদন, ব্যাংক হিসাব পরিচালনা ও বিবিধ কার্যক্রম পরিচালনা।
বিধিমালায় ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডির ১৬টি দায়িত্ব পালনে বাধ্যবাধকতা থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে বই, ল্যাবরেটরি, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণের ব্যবস্থা করে দেয় সরকার। নিয়োগ ও ভর্তি বাণিজ্য এবং প্রতিষ্ঠানের ফান্ড থেকে বেনামে টাকা খরচ করা ছাড়া খুব একটা দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় না তাদের। অন্য দায়িত্বগুলোর প্রতি তাদের আগ্রহ নেই। শিক্ষাবিদ ও শিক্ষিত ব্যক্তিরা গভর্নিং বডির দায়িত্ব নিলে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, ব্যবস্থাপনা কমিটির অশিক্ষিতরা শিক্ষকদের ওপর বেশি কর্তৃত্ব ফলান। শিক্ষকদের সম্মান দেওয়ার মতো শিক্ষিত লোক ব্যবস্থাপনা কমিটিতে নিযুক্ত করার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনার কথা জানান তিনি।
গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণে আপত্তিও রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, সংসদ সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি না থাকলে কেন গভর্নিং বডির সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিতেও দ্বিমত রয়েছে।
তবে ঢাকা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, গভর্নিং বডির সদস্যরা সরাসরি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষকদের ওপর কর্তৃত্ব খাটান। এ কারণে এসব সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ঘাটতি হলে এর প্রভাব পড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের ওপর। এ কারণে গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্যদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতেই হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানী বা বিভাগীয় শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা নজরদারির মধ্যে থাকলেও গ্রাম বা মফস্বল শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকার দলীয় নেতারা গভর্নিং বডিতে ঢুকে পড়েন। ফলে গ্রামের শিক্ষার মানের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। সূত্রঃ ইত্তেফাক