শিক্ষাবার্তা ডেস্কঃ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেছেন, বোর্ডের আইনে উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ নেই।
এইচএসসি ও আলিমে ফল পুনর্নিরীক্ষণে আবেদন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এই কথা বলেন।
অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, তবে সাধারণত শিক্ষকরা যে চারটি দিকে ভুল করে, সেগুলো যাচাইয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এর সুফলও পাচ্ছে। পুনর্নিরীক্ষণের প্রতিটি আবেদন যথাযথভাবে মনোযোগ দিয়ে যাচাই করা হয় বলে জানান তিনি।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার পুনর্নিরীক্ষণের ফল ১০ মার্চ প্রকাশ করা হবে। ৮ ফেব্রুয়ারি এই পরীক্ষার মূল ফল প্রকাশ করা হয়। এরপর সাত দিন আবেদন নেয় বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড। এ বছর বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডে ৬৫ হাজার শিক্ষার্থী নিজেদের ফল চ্যালেঞ্জ করে আবেদন দাখিল করেছে। যাদের মধ্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডেই আছে সাড়ে ৩১ হাজার শিক্ষার্থী। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করেছে প্রায় ৩ হাজার ছাত্রছাত্রী।
সাধারণত একজন শিক্ষার্থীর একাধিক বিষয়ের ফল চ্যালেঞ্জের সুযোগ থাকে। এছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের বিষয়ে একটির জন্য আবেদন করলে উভয়টি গণনা করা হয়। সেই হিসাবে কেবল দুই শিক্ষা বোর্ডেই উল্লিখিত শিক্ষার্থীরা সবমিলে ১ লাখ ১৩ হাজার ৮৪২টি বিষয়ের উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণ চেয়েছে। তাদের ধারণা, এসব খাতায় তাদের যথাযথ নম্বর দেওয়া হয়নি। সারা দেশে সবমিলে প্রায় ২ লাখ উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষার আবেদন জমা পড়েছে।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এসএম কামাল উদ্দিন বলেন, ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন স্বাভাবিক ব্যাপার। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর এই আবেদন নেওয়া হয়। সাধারণত এক মাস পর ফল দেওয়া হয়। সেই রীতির এবারও ব্যত্যয় হচ্ছে না।
শিক্ষা বোর্ডগুলো জানিয়েছে, পুনর্নিরীক্ষণ আর পুনর্মূল্যায়ন এক নয়। পুনর্নিরীক্ষায় কেবল চারটি দিক দেখা হয়। সেগুলো হচ্ছে-শিক্ষার্থীর দেওয়া প্রতিটি উত্তর মূল্যায়ন করা বা নম্বর দেওয়া হয়েছে কি না। এছাড়া প্রাপ্ত নম্বর ঠিকমতো গণনা করা হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর ঠিকমতো ওএমআর (মেশিনে পাঠযোগ্য) ফর্মে তোলা হয়েছে কি না এবং উঠানো নম্বর অনুযায়ী ঠিকমতো বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে কি না। এই চারটির ব্যত্যয় ঘটলে সেখানে প্রতিকার পায় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থীর একটি প্রশ্নের উত্তরে ৫ পাওয়ার কথা থাকলে সেখানে পরীক্ষক ভুলে ৩ দিলে সেটা পরিবর্তন করা হয় না। এই পরিবর্তনকেই বলে পুনর্মূল্যায়ন।
২০২২ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডে ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৭ জন অংশ নিয়ে পাশ করেছে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন। পাশের হার ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ শিক্ষার্থী। জানা যায়, জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। তারা মূলত দু-একটি বিষয়ে গড়ে ৮০ নম্বর বা জিপিএ-৫ পায়নি। এ কারণেই ফল চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার সেলের প্রধান প্রকৌশলী মনজুরুল কবীর বলেন, ইংরেজি, বাংলা, উচ্চতর গণিত এবং বিজ্ঞানের বিষয়ে আবেদনের সংখ্যা বেশি। ধর্ম ও নৈতিকতার মতো বিষয়েও ফল পুনর্নিরীক্ষার আবেদন পড়েছে বলে জানান তিনি।
দেশে বর্তমানে নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড আছে। এর মধ্যে নয়টি বোর্ডের আবেদনকারীর সংখ্যা জানা যায়নি। তবে এসব বোর্ডে প্রায় ৫৫ হাজার আবেদনকারী আছে বলে টেলিটকের সংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলী জানান। পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন এই রাষ্ট্রীয় মোবাইল সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
এবার ঢাকা বোর্ডে এ পরীক্ষায় এবার ২ লাখ ৭৬ হাজার ৯৩৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ৩১ হাজার ৫৭৪ জন আবেদন করেছে। এই হিসাবে এই একটি বোর্ডেই ফল চ্যালেঞ্জকারীর হার ১১ শতাংশের বেশি। তবে অন্য বোর্ডে আবেদনকারীর হার এত বেশি নয় বলে জানা গেছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৬/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়