শিক্ষায় ‘ফেল’ করা ২ প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষা খাতের চলমান দুই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম। প্রকল্প দুটির মেয়াদ শেষের দিকে হলেও বাস্তব অগ্রগতি খুব সামান্যই। ‘ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিজ’ ও ‘আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাদান’ (২য় পর্যায়) শীর্ষক এ প্রকল্প দুটির মধ্যে প্রথমটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প। প্রকল্প পরিচালক বদল করে প্রকল্প দুটিতে গতি আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর প্রকল্প দুটির এই বেহাল অবস্থার চিত্র উঠে এসেছে খোদ সরকারি প্রতিবেদনেই। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের তৈরি করা ‘অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন’-এ হতাশাজনক এ চিত্র উঠে এসেছে। গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। রাজধানীর জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) আজ দুপুরে এ প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অনুষ্ঠান বিশেষ অতিথি থাকবেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন। অনুষ্ঠানে উন্নয়ন সহযোগী ও সংস্থার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন।

মাউশির অধীনে শিক্ষা খাতের মোট ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। আর কারিগরি সহায়তামূলক প্রকল্প রয়েছে আর একটি। এই ১৫টি প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে মাউশির তৈরি করা এ প্রতিবেদনে। মূল্যায়নের বিভিন্ন ক্যাটাগরি তৈরি করে মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে মূল্যায়ন করা হয়েছে। অন্য প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগই এতে ৮০’র ওপরে নম্বর পেলেও অটিস্টিক একাডেমি নির্মাণ প্রকল্প পেয়েছে মাত্র ২১ দশমিক শূন্য ৭ নম্বর। আর আইসিটির মাধ্যমে শিক্ষাদান প্রকল্প পেয়েছে ১৮ দশমিক ৮৪ নম্বর।

মূল্যায়নে বলা হয়েছে, অটিস্টিক একাডেমি নির্মাণ প্রকল্প ৪২২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে শুরু করা হয় ২০১৪ সালে। ২০১৬ সালে এটি শেষ হওয়ার কথা। অথচ একাডেমি নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ, জমিতে ভবন নির্মাণ, প্রশিক্ষণ উপকরণ ক্রয় ও স্থাপন ইত্যাদি কাজের বাস্তবায়ন হয়নি বিধায় প্রকল্প সংশোধন করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্প কাজের বাস্তব অগ্রগতি বলতে কেবল রাজধানীর পূর্বাচলে অটিস্টিক একাডেমি নির্মাণের জন্য ৩ দশমিক ৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের ব্যয় ও প্রকল্পে কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের মাত্র ১২ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে, এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার জন্য বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাদান (২য় পর্যায়) প্রকল্প সম্পর্কে মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৩৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হয় ২০১৬ সালে। ২০২০ সালে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্পের ৪০৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা মাত্র ব্যয় হয়েছে। পিআইইউ প্রতিষ্ঠা ছাড়া প্রকল্পের আর কোনো অংশের বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে, ডিজিটাইজেশনের জন্য এ প্রকল্পটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। প্রকল্পটির কার্যক্রম আরও গতিশীল করা প্রয়োজন।

প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী উইংয়ের প্রধান মাউশির পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন) অধ্যাপক মো. আমির হোসেন  বলেন, শিক্ষা খাতের প্রকল্পগুলোর ছয় মাসের অগ্রগতি নিয়ে তারা এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। শিগগিরই চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের অগ্রগতি মূল্যায়ন করতে কাজ শুরু করবেন। পরিচালক বলেন, শিক্ষার সম্প্রসারণ ও গুণগত মান বৃদ্ধিতে তাদের এই মূল্যায়ন কার্যক্রম এসডিজি অর্জনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।