শিক্ষার গতিশীলতায় গবেষণার বিকল্প নেই

আল-আমীন অরূপ আবির: বর্তমান যুগটাই জ্ঞান বিজ্ঞানের। এই যুগে একটি দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম। আজকের বিশ্বে উন্নয়নে শীর্ষে তাদের অবস্থান সবচেয়ে এগিয়ে যারা জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে। জ্ঞান-বিজ্ঞান কোন নির্দিষ্ট গণ্ডিতে সামীবদ্ধ নয় এর বিস্তার সর্বত্র আর এই জ্ঞান বিজ্ঞানের এত উন্নতির সম্ভব হয়েছে গবেষণা জন্য। গবেষণা জ্ঞান বিজ্ঞানে এনে দিয়েছে অপার সম্ভাবনা যার স্পর্শে আজ বিশ্বে জ্ঞান বিজ্ঞানের অকল্পনীয় উন্নতি ও নতুনত্ব সৃজনশীলতার সৃষ্টি।

গবেষণা হলো সুপরিকল্পিত ও সুসংঘবদ্ধ পদ্ধতিতে ধারাবাহিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করে সেই তথ্যকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোনো সমস্যার নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য সমাধান অনুসন্ধান করা। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের সামনে নানা প্রতিকূলতা এসে দাঁড়ায় আর এই প্রতিকূলতাকে প্রতিহত করতে প্রয়োজন নতুন জ্ঞান তথা গবেষণা। যে জাতির গবেষণার মাত্রা যত উন্নত সে জাতি জ্ঞান বিজ্ঞানে তত উন্নত।

গবেষণার প্রতি নব প্রজন্মের আগ্রহ, কৌতূহল সৃষ্টি হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে কিন্তু যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ব্যবস্থা হয় সিলেবাসের মধ্য সীমাবদ্ধ, নতুন কিছু প্রশ্ন করা যদি হয় অপরাধ প্রতিয়মান তবে গবেষণায় উন্নতি কখনও সম্ভব নয়। প্রাচীনকালের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় পাহাড়ের গাঁয়ে জুম চাষ থেকে আজকের আধুনিক কৃষি ও যোগাযোগে দু চাকার ঘোড়ার গাড়ি, কবুতরের ব্যবহার হতে আজকের আধুনিক যানবাহন ও আধুনিক কমিউনিকেশন সিস্টেমের রূপান্তর গবেষণার ফসল। আজকের শিক্ষা ব্যবস্থার মতো যদি প্রাচীনকালে তাদের জীবণধারণের মধ্যে সীমাবদ্ধতা টানতো তাহলে হয়ত বর্তমান আধুনিক যুগের রূপান্তর হতো না, হতো না জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নতি। জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে আমাদের দেশকে তুলে ধরতে শিক্ষার্থীদের গবেষণাধর্মী শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।

জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়নের সাথে সাথে শিক্ষাক্ষেত্রেও নতুন জ্ঞান সৃষ্টির জন্য গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা গবেষণার মাধ্যমেই শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যে-কোনো সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া এবং নতুন নতুন জ্ঞান ও জ্ঞানক্ষেত্র সৃষ্টি সম্ভব। সিলেবাস ভিত্তিক সীমাবদ্ধতা টেনে জ্ঞানকে যারা সীমাবদ্ধ করে, শিক্ষার্থীদের গবেষণায় তারাই প্রতিকূলতা সৃষ্টি করে। যে জাতির শিক্ষকগণ যত মানসম্পন্ন সে জাতি তত উন্নত। একটা সময় ছিল যখন শিক্ষক শুধু শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সিলেবাস ধরে কিছু পড়াতেন এবং শিক্ষার্থীরা তাই পড়তো।

কিন্তু বর্তমানে শিক্ষার্থীরা নতুন কিছু জানতে খুবই কৌতূহলি, নানা প্রশ্ন জাগে তাদের মনে যার উত্তর শুধু বই হতে দেয়া সম্ভব নয় তাই একজন শিক্ষককে হতে হবে গবেষক ও শিক্ষা ব্যবস্থা হতে হবে গবেষণাধর্মী। আমাদের দেশের শিক্ষা গবেষণা সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে গবেষণা বিনিয়োগ স্বল্পতা, শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের গবেষণায় অনীহা অথচ একটি দেশের সর্বাঙ্গীন উন্নতির জন্য গবেষণা আব্যশক।

আশেপাশে একটু নজর দিলেই বুঝা যায় গবেষণায় অনীহার ফলে আমরা প্রযুক্তিতে কতটা আমদানি নির্ভর হয়েছি অন্য দেশের প্রতি, অথচ আমাদের দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশের জন্য জ্ঞান বিজ্ঞানে অবদান রাখতে পারছে না।

শিক্ষা ব্যবস্থা একরোখা চাকরি ভিত্তিক হওয়ায় শিক্ষার্থীরা নতুন কিছু সৃষ্টির চিন্তাবাদ দিয়ে চাকরির মুখস্ত বিদ্যার পিছু ছুটছে, গবেষণায় অনীহার ফলে জ্ঞান বিজ্ঞানের আমাদের বিচরণ খুবই সংকীর্ণ। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা যখন পাঠ্যবই মুখস্ত করে তখন অন্য অন্য দেশের শিক্ষার্থীরা উন্মুক্ত গবেষণায় জ্ঞান বিজ্ঞানের নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন করছে।

শিক্ষায় গবেষণা বৃদ্ধিকরণ এখন সময়ের দাবি, সময়ের এই প্রবাহে শিক্ষার্থীরা গবেষণার বিপক্ষে নয়। কিন্তু গবেষণায় বিনিয়োগ স্বল্পতা, পাঠ্যপুস্তকের নির্দিষ্ট সিলিবাস, গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে এই কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আলবার্ট আইনস্টাইন, আইজাক নিউটন, গ্যালিলিও গ্যালিলেই, নিকোলা টেসলা, আলেকজেন্ডার গ্রাহাম বেল সহ যত বিজ্ঞানী, গবেষক ছিলেন যারা জ্ঞান বিজ্ঞানে অসামান্য অবদান রেখেছে তারা সবাই ছিলেন একজন গবেষক। তাদের জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সৃজনশীল সৃষ্টিতে যত অবদান তা একমাত্র গবেষণার ফলসরূপ কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষা কার্যক্রম পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ। এই সীমাবদ্ধ জ্ঞান আমাদের জ্ঞান জগৎকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদানেও সীমাবদ্ধতা টেনেছে।

আজকের আধুনিক প্রযুক্তি, গাড়ি, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, প্রতিরক্ষা অস্ত্র, দেশের বড় বড় প্রজেক্টটে অন্যদেশের উপর নির্ভরশীল এর একটাই কারণ গবেষণার অনীহা যার ফলে নতুন জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না, হচ্ছে না নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে না। গবেষণা বিমুখতার ফলসরূপ দেশের উন্নতি ব্যাহত হচ্ছে, অর্থনীতির আমদানি নির্ভর হওয়ায় দেশের অভ্যান্তরে দ্রব্যমূল্যের অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে, বেকারত্ব সৃষ্টি হচ্ছে, অর্থের অভাবে অনেকে জড়িত হচ্ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। নব প্রজন্মকে অব্যশই মুখস্ত পাঠ্যকর্ম হতে সরে এসে গবেষণার মনোনিবেশ করতে হবে।

দেশ ও জাতির উন্নতির স্বার্থে রাষ্ট্রকে গবেষণায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে এগিয়ে আসা অতীব জরুরি। দেশের সর্বজনীন উন্নতির জন্য শিক্ষায় গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। আসুন সবাই সোচ্চার হই, মুখস্ত বিদ্যায় নয় গবেষণার দ্বারা নতুন জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তির অনুসন্ধানি হই।

লেখক: শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৫/০৯/২০২৩     

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়