নরসিংদীঃ প্রতিদিন উপস্থিত থাকে ১০ থেকে ১৫ শিক্ষার্থী। তবে হাজিরা খাতায় উপস্থিতি দেখানো হয় অনেক বেশি। এই অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ২১ শিক্ষক ও পাঁচজন কর্মচারী। এ অবস্থা বেলাব উপজেলার সুটুরিয়া ফজলুল হক খান দাখিল মাদ্রাসার। দীর্ঘদিন ধরে এই মাদ্রাসায় শিক্ষকের তুলনায় অর্ধেক শিক্ষার্থী নিয়েই চলছে পাঠদান।
১৯৮৭ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ইবতেদায়ি থেকে দাখিল শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। শুরুর দিকে অনেক ছাত্রছাত্রী থাকলেও বর্তমানে ঠিক উল্টো চিত্র। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত রয়েছেন ২১ শিক্ষক ও ৫ কর্মচারী। অথচ প্রতিদিনই শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে দশের ওপরে। মাদ্রাসাটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি দেখানোর জন্য অন্য হাফিজিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের এই মাদ্রাসায় দ্বিতীয়বার ভর্তি দেখানো হয়।
জানা গেছে, সুটুরিয়া মাদ্রাসায় বেশি শিক্ষার্থী দেখানোর জন্য পাশের শাহ ইরানি কেরাতুল কোরআন জামিউল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানার বেশ কিছু ছাত্রকে এই মাদ্রাসায় ভর্তি দেখানো হয়েছে।
সম্প্রতি মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি ক্লাসেই শিক্ষার্থী রয়েছে ২ থেকে ৫ জন করে। ২১ শিক্ষক উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও উপস্থিত আছেন ১৪ জন। সাংবাদিক এসেছেন দেখে তাড়াহুড়া করেই শিক্ষকদের পাঠদানে বেড়ে যায় গুরুত্ব। এ সময় পঞ্চম শ্রেণির কক্ষে গিয়ে পাওয়া যায় দু’জন শিক্ষার্থী, দশম শ্রেণির কক্ষে পাওয়া যায় তিন শিক্ষার্থী, নবম শ্রেণির কক্ষে পাওয়া যায় তিন শিক্ষার্থী ও অষ্টম শ্রেণির কক্ষে পাওয়া যায় পাঁচজন শিক্ষার্থী। পুরো মাদ্রাসায় সব মিলিয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিত পাওয়া গেছে ১৩ জন।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মাদ্রাসার খাতাপত্রে ইবতেদায়ি শাখায় মোট শিক্ষার্থী ৮৯ জন। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ১২ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১০, তৃতীয় শ্রেণিতে ২১, চতুর্থ শ্রেণিতে ১৭, পঞ্চম শ্রেণিতে ২৯ জন। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত খাতাপত্রে শিক্ষার্থী আছে ১৫১ জন। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৩৩ জন, সপ্তম শ্রেণিতে ৩০, অষ্টম শ্রেণিতে ৩২, নবম শ্রেণিতে ৩৫ ও দশম শ্রেণিতে রয়েছে ২১ জন শিক্ষার্থী। শিক্ষক রয়েছেন ২১ জন ও কর্মচারী পাঁচজন। খাতাপত্রে ২৪০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও প্রতিদিন উপস্থিত থাকে ১০ থেকে ১৫ জন।
মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য আ. বাতেন মিয়া জানান, প্রতিদিন এই মাদ্রাসায় ছাত্রছাত্রী উপস্থিত হয় ১০ থেকে ১২ জন। কয়েক বছর ধরেই এই হাল।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোস্তফা বলেন, শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষক অনেক বেশি মাদ্রাসায়। শিক্ষার্থীর পরিমাণ কম থাকায় শিক্ষকরা অলস সময় কাটান এখানে।
ইউপি সদস্য আবদুর রশিদের ভাষ্য, শিক্ষক বেশি থাকায় অনেক শিক্ষককে অলস সময় কাটাতে হয়। মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।
মাদ্রাসার সুপার মাওলানা ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, আগে শিক্ষার্থীর পরিমাণ বেশি ছিল। বর্তমানে কিছুটা কম। আমরা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন উপহারসামগ্রী দেওয়ার কথা বলেও শিক্ষার্থী তেমনভাবে ভর্তি করাতে পারছি না। এলাকার মানুষ যদি সহযোগিতা করে, তাহলে শিক্ষার্থীর পরিমাণ বাড়াতে চেষ্টা করব।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহা. মোবারুল ইসলাম জানান, বিষয়টি তাদের জানা ছিল না। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৩/০৯/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়