শিক্ষার্থীকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতেই হবে বাকৃবিকে

ঢাকাঃ চার দশকের আইনি লড়াই চালিয়ে পেয়েছিলেন শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ। সেই সনদ পেয়ে দায়ের করেন ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের মামলা। সেই ক্ষতিপূরণের মামলার রায় এসেছে সিরাজগঞ্জ সদরের চিলগাছা গ্রামের প্রয়াত জিল হোসেনের পক্ষে। এমনকি গত মার্চ মাসে দেশের উচ্চ আদালত রায়ে ক্ষতিপূরণের মামলা দায়েরের দিন থেকে ঐ মোট অর্থ এবং ঐ অর্থের বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে যায় কর্তৃপক্ষ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চ রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন খারিজ করে দেন।

জিল হোসেনের পরিবারের সদস্যদের পক্ষে মামলাটি লড়েন অ্যাডভোকেট চঞ্চল কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘রায় স্থগিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এখন ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য নিম্ন আদালতে মামলা জারি করতে হবে।’

মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৭১-১৯৭২ শিক্ষাবর্ষে জিল হোসেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি (অ্যাগ্রি) স্নাতক দ্বিতীয় পর্বের চতুর্থ বর্ষের পুরোনো পাঠ্যক্রমের চূড়ান্ত পরীক্ষার্থী ছিলেন। ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফলে তাকে অকৃতকার্য ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ফল পুনর্বিবেচনা চেয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে আবেদন করেন তিনি, কিন্তু বিফল হয়ে ১৯৭৫ সালে তিনি আবার পরীক্ষায় অংশ নেন। তখন তাকে বহিষ্কার করা হয়। এসবের প্রতিকার চেয়ে ঐ বছরের ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহের প্রথম মুন্সেফ আদালতে তিনি মামলা করেন।

মামলায় দাবি করা হয়, তার প্রাপ্ত নম্বরের (১৯৭৩ সালে দেওয়া পরীক্ষায়) সঙ্গে ভগ্নাংশ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নম্বরের সঙ্গে ভগ্নাংশ যোগ না করে তাকে অকৃতকার্য ঘোষণা করেছে। এ মামলায় ১৯৭৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় আদালত। একই সঙ্গে ভগ্নাংশ নম্বর যোগ না করে তাকে অকৃতকার্য করাকেও বেআইনি ঘোষণা করে।

রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ১৯৭৬ সালের ৩১ জানুয়ারি এই আদালতের দেওয়া রায়ে জিল হোসেনকে বহিষ্কারাদেশ বেআইনি ঘোষণা করা হয়। ঐ বছরই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে কর্তৃপক্ষ। হাইকোর্ট ১৯৭৬ সালের ২৪ আগস্ট মামলাটি পুনর্বিচারের জন্য প্রথম মুন্সেফ আদালতে পাঠায়। শুনানি শেষে ১৯৭৮ সালের ২৪ জানুয়ারি মুন্সেফ আদালত ভগ্নাংশ নম্বর যোগ করে ৩০ দিনের মধ্যে জিল হোসেনের পরীক্ষার ফল প্রকাশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়।

এই রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল করা হয়। সেই আপিল নামঞ্জুর করে আদালত। এরপর হাইকোর্টে আসে কর্তৃপক্ষ। হাইকোর্ট ১৯৮৩ সালের ১৬ জানুয়ারি বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখে। এই রায়ের পর ১৯৮৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর জিল হোসেনের একটি আবেদন গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। পরে তাকে পাশ নম্বর দিয়ে ১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর নম্বরপত্রের সনদ দেওয়া হয়। তখন জিল হোসেনের বয়স ৪৭ বছর, কিন্তু রায় বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে তার সরকারি চাকরির বয়স পেরিয়ে যায়, কিন্তু তিনি দমে না গিয়ে ২০০০ সালের ১৮ অক্টোবর কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে নিম্ন আদালতে মামলা করেন।

এতে দাবি করা হয়, ১৪ বছর ৯ মাস পর হাইকোর্টের রায় কার্যকর করায় তার জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ক্ষতিপূরণ মামলায় ২০০৮ সালের ২৬ আগস্ট রায় দেন ময়মনসিংহের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত। রায়ে ৩০ দিনের মধ্যে ২ কোটি টাকা জিল হোসেনকে দিতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ঐ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে হাইকোর্টে আপিল করে কর্তৃপক্ষ। চূড়ান্ত শুনানির পর গত মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের আপিল খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। এই রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে কর্তৃপক্ষ। সেই আবেদন রবিবার খারিজ হয়ে যায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মামলা শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১২/১০/২০২৩     

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়