শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব লেখাপড়া যেখানে গৌণ

শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ দেশে সরকারি ও বেসরকারি দুই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শতভাগ পরিচালিত হয় শিক্ষা বিভাগের অধীনে। বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদরাসা পরিচালনায়ও কিছুক্ষেত্রে সরকার জড়িত থাকে। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত অর্থাৎ এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় শিক্ষা বিভাগ ও স্থানীয়ভাবে গঠিত কমিটির ব্যবস্থাপনায়। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত নয়, সেগুলো পরিচালিত হয় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে। তবে শিক্ষা কারিকুলাম ও সিলেবাসে রয়েছে সরকারের নিয়ন্ত্রণ।

দেশের শিক্ষাবিদদের একটি পর্যবেক্ষণ এই- এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি-বেসরকারি যৌথ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হওয়ায় ওই সব স্কুল-কলেজ-মাদরাসায় স্বার্থের দ্বন্দ্ব সব সময় লেগে থাকে। নানা পক্ষে বিভক্ত হয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা পরিচালনা কমিটির লেজুড়বৃত্তি করে দলাদলিতে লিপ্ত হয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেন।

এর সর্বশেষ নজির রাজধানীর নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মনিপুর উচ্চবিদ্যালয়। এখন উচ্চমাধ্যমিকও চালু হয়েছে। শিক্ষার্থী প্রায় ৪০ হাজার। শিক্ষক আছেন আট শতাধিক। এটি এমপিওভুক্ত হয় ১৯৮৩ সালে। অথচ একজন ‘অবৈধ অধ্যক্ষকে’ রক্ষায় নানামুখী চেষ্টা ও কিছু ব্যক্তির ‘স্বার্থের দ্বন্দ্বে’ সমস্যায় পড়েছে শিক্ষার্থীর সংখ্যার বিবেচনায় রাজধানীর অন্যতম বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।

মাউশি, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, সরকারের নীতিমালা উপেক্ষা করে ৬০ বছর বয়স হওয়ার পরও ফরহাদ হোসেনের (অধ্যক্ষ) চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়। মাউশি ও ঢাকা বোর্ডের তদন্তে বেরিয়ে আসে, ফরহাদ হোসেনের মেয়াদ বাড়ানো বিধিসম্মত হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) পৃথক তদন্তে উঠে আসে, নিয়ম না থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি, সদস্যসচিব ও সদস্যরা মিলে ছয় বছরে সম্মানীর নামে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন খাতে কোটি কোটি টাকা তারা নয়ছয় করেছেন।

একটি সহযোগী দৈনিকের এক প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষকের বরাতে জানানো হয়, এমপিওভুক্তি বাদ দিয়ে পরিচালনা কমিটির সাথে যুক্ত একাধিক ব্যক্তি ও অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসা ফরহাদ হোসেন মিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একটি ট্রাস্টের অধীনে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেন। তখন থেকে (২০১৬) সমস্যার শুরু হয়। দীর্ঘদিন ধরে চলা এ সঙ্কট এখন এতটা তীব্র যে প্রতিষ্ঠানের দু’পক্ষ পাল্টাপাল্টি ছুটি ঘোষণা, মামলা-মোকদ্দমার মধ্য দিয়ে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে হাজারো শিক্ষার্থী।

শিক্ষক ও একাধিক অভিভাবকের অভিযোগ- সরকারের একাধিক সংস্থার তদন্তে ‘অবৈধ’ হওয়া অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন এবং পরিচালনা কমিটির সাথে যুক্ত একাধিক ব্যক্তির নানা পদক্ষেপের কারণে মূলত সমস্যাটি প্রকট হয়েছে।

স্মরণযোগ্য যে, রাজধানীর মনিপুুর উচ্চবিদ্যালয়েই শুধু নয়, এমন ঘটনা এর আগে ঢাকার ভিকারুননিসা, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ আরো কিছু নামী প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষের পদে বসানো না বসানো নিয়ে বিরোধের ঘটনা ঘটেছে। বিশৃঙ্খলা ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার এমন লড়াই সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমান সরকারের আমলে আমরা দেখতে পেয়েছি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে এমন বিবাদ-বিসম্বাদের পেছনে যে কারণগুলো বিদ্যমান তার অন্যতম হলো- এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ-মাদরাসার অর্থনৈতিক অবস্থা যা-ই থাকুক না কেন, এর পরিচালনার সাথে যুক্ত হলে রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়ে। এ ছাড়া কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রয়েছে প্রচুর অর্থ-সম্পদ। সেই অর্থ হাতিয়ে নেয়ার মতলবে অনেকে মরিয়া হয়ে এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ-মাদরাসার পরিচালনা কমিটিতে স্থান করে নেন। তাদের সাথে অশুভ আঁতাত করেন প্রতিষ্ঠানপ্রধান। দুইয়ে মিলে তৈরি হয় দুষ্টচক্র। এতে অনেকে বঞ্চিত হয়ে গড়ে তোলে প্রতিপক্ষ। এভাবে স্বার্থের দ্বন্দ্বে ডুবছে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

এ অবস্থার অবসানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নীতিনির্ধারকদের নতুন করে ভাবতে হবে। প্রণয়ন করতে হবে একটি টেকসই পরিচালন-ব্যবস্থাপনা। তা না হলে সারা দেশে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রসাতলে যাবে। এতে হাজারো শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার ক্ষতিকর প্রভাব শেষ পর্যন্ত পুরো জাতিকে বহন করতে হবে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১১/০৩/২০২৩   

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়