নিজস্ব প্রতিবেদক।।
গেল সপ্তাহে পাঁচ কর্মদিবসের এক দিন ছিল হরতাল, তিন দিন ছিল অবরোধ। এই রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে সংঘর্ষ আর গাড়ি পোড়ানোর খবরে শঙ্কিত শামীমা তার মেয়েকে পড়ার জন্য বাইরে বের হতে দেননি।
রোকেয়াদের বাসা ওয়ারীতে। ছেলে মাহাদি হাসান পড়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণিতে। এ ক্লাসটা পার হলেই নবম শ্রেণি, ফলে সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকাটাও নিতে পারছেন না এই মা।
শিক্ষাবার্তা ডটকমকে তিনি বলেন, “এভাবে তো চলতে পারে না- আমরা এই অনিশ্চয়তার মধ্যে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারি না। করোনার ক্ষতির মত আর কোনো বড় ক্ষতি ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় হোক, আমি তা চাই না।”
বেশ কয়েক বছর শান্তিপূর্ণভাবে চলার পর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ফের সহিংস হয়ে উঠেছে দেশের রাজনীতি; বছর শেষে এই অস্থিরতা স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষা কার্যক্রমে শঙ্কা বাড়াচ্ছে।
নভেম্বরের মধ্যে চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষ করার লক্ষ্য থাকলেও চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে উদ্বেগে ভুগছেন অভিভাবকরা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংকট আরও দীর্ঘ হবে কি না, সেই শঙ্কাও তাদের আছে।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে দেশের রাজনৈতিক উত্তাপ চূড়ান্ত রূপ নেয়। সংঘাত শেষে প্রায় ৪ বছর পর আবার হরতাল-অবরোধের চক্রে ঢুকে পড়ে দেশ।
হরতাল-অবরোধে ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি কমে যাওয়ার তথ্য দিয়েছেন শিক্ষকরা। রাজধানীর স্কুলগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচিতে অনেক স্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি নেমে গেছে ৫০ শতাংশের নিচে।
উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. নাসির উদ্দিন শিক্ষাবার্তা ডটকমকে বলেন, তিন দিনের অবরোধের মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীরা এলেও অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের পাঠাননি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক মতবিরোধ, সমাবেশের অধিকার, এজেন্ডা বাস্তবায়নের কর্মসূচিতে শিক্ষার মত বিষয়গুলো যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়- তা দেখার দায়িত্বও রাজনৈতিক দলগুলোর।
গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “শ্রীলঙ্কা দীর্ঘদিন এক ধরনের গৃহযুদ্ধের মধ্যে ছিল, কিন্তু সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কখনও বন্ধ হয়নি। নেপালে যখন উগ্রবাদীদের তৎপরতা ছিল, তখন তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ‘সেইফ জোন’ ঘোষণা করেছিল।”
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক সহিংসতা হতে পারে- এমন শঙ্কা তৈরি হলেই শিক্ষার্থী-অভিভাবক-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবার আগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
“অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। কারণ যাতায়াত যদি নিরাপদ না থাকে, তাহলে অভিভাবক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক সবাই চিন্তিত থাকবেন।”
এ বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের প্রয়োজন বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলানো এই উপদেষ্টা।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “তারা রাজনৈতিক কর্মসূচি দেবে, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্ষতি করতে দেবে না- এই অঙ্গীকারটা আমরা দেখি না। পারস্পরিক দোষারোপের রাজনীতির মধ্যে পড়ে যায় শিক্ষার্থীরা।
“করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষার্থীরা যে হোঁচট খেয়েছে, সেখান থেকে উঠে দাঁড়ানোর পর যখন ক্ষতি পোষানোর জন্য তাদের দৌঁড়ানো প্রয়োজন- তখন শিক্ষার্থীরা আবার হোঁচট খাচ্ছে। এটা কাম্য নয়।”
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৪/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়