মো: মিজানুর রহমানঃ সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংঘটিত বিবেক বর্জিত, নির্লজ্জ ও গর্হিত কাজের জন্য আমাদের দেশের শিক্ষক, প্রতিষ্ঠান প্রধান, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কিংবা সভাপতি, শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবক বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করছে। যা ভবিষ্যৎ শিক্ষাব্যবস্থার জন্য অশনিসংকেত বলে আশংকা করছেন শিক্ষা সচেতন মহল।
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। আর শিক্ষক জাতি গড়ার সুমহান কারিগর। তাদের প্রাপ্য সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করা না গেলে জাতির প্রত্যাশিত উন্নতি ও সমৃদ্ধি ব্যাহত হবে।
সম্প্রতি দেশের প্রাথমিক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ গুলোতে শিক্ষকদের উপর দুর্বৃত্তদের হামলা আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি কিংবা সদস্যদের হাতে নিগৃহীত হতে হচ্ছে শিক্ষকদের। নারী শিক্ষকরাও এমন হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। শিক্ষকদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনে পিছিয়ে নেই খোদ অভিভাবকরাও!
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ বরাদ্দে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের সিদ্ধান্ত ও ব্যয়িত অর্থের হিসাবনিকাশ নিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সাথে শিক্ষকদের মতবিরোধের জের ধরে শিক্ষকদের উপর চড়াও হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীরা।
এছাড়া, সন্তানের পড়ালেখার উন্নয়নে গৃহীত সিদ্ধান্ত কিংবা যৌক্তিক শাসনের বিপক্ষে কড়া অবস্থান নিয়ে অভিভাবকদের কেউ কেউ বিদ্যালয়ে এসে সবার উপস্থিতিতেই লাঞ্ছিত করছেন সম্মানিত শিক্ষকদের। ইদানীং সেটা শারীরিক আঘাতেও রূপ নিয়েছে। শিক্ষকগণ নিজেদের অর্জিত সম্মান ও স্বকীয়তা অক্ষুণ্ণ রাখতে এসব পরিস্থিতিতে নীরব থেকে হজম করছেন সকল অপমান ও অত্যাচার।
পারিবারিক কিংবা সামাজিক বিরোধের জেরেও রক্তাক্ত হতে হচ্ছে শিক্ষকদের। সন্ত্রাসীরা শিক্ষকদের মাথা, হাত ও পা ভেঙে দিচ্ছে। প্রচলিত আইনের ফাঁকফোকরের সুযোগ আর সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পার পাচ্ছে অপরাধীরা।
সাধারণ শিক্ষকদের উপর জুলুম নির্যাতনে পিছিয়ে নেই প্রতিষ্ঠান প্রধানরাও। তারা ম্যানেজিং কমিটির জোগ সাজোসে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করছে। সম্প্রতি একটি স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের দেওয়া নৈমিত্তিক ছুটির দরখাস্ত গায়েবের অভিযোগ ওঠে খোদ প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়, নৈমিত্তিক ছুটি মঞ্জুর করার পরেও হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত দেখানো হয় এবং ছুটি মঞ্জুরের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে গায়েবকৃত দরখাস্তটি উদ্ধারপূর্বক তাকে প্রদর্শন করলে তিনি চুপ হয়ে যান।
সমাজের প্রভাবশালী ছাড়াও খোদ শিক্ষার্থীরাও চড়াও হচ্ছে শিক্ষকদের উপর। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অনৈতিক দাবি মেনে না নেওয়ায় তারা শিক্ষকদের কে শারীরিক ও মানষিক ভাবে আঘাত করছে। তারা পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপ করতে চায় ফ্রীতে কিংবা অর্ধ ফ্রিতে। পরীক্ষার হলে চায় অনৈতিক সুবিধা। অনৈতিক সুবিধা না পেলে চড়াও হচ্ছে শিক্ষকদের উপর।
শিক্ষকদের উপর এভাবে একের পর এক হামলা আর অপমানের ঘটনা সভ্য, স্বাধীন দেশের জন্য নিশ্চিতভাবে লজ্জাজনক। শিক্ষাগুরুর মর্যাদা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। গল্প, কবিতা, নাটকে এসব বহুবার বহুভাবে বিবৃত হয়েছে। অথচ বাস্তবতা বিপরীত। প্রাথমিক ছাড়াও মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর বিভিন্ন জনের ন্যক্কারজনক হামলার কথা পত্রিকা আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে প্রায় সবারই জানা।
দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ার বীর কারিগরদের সাথে এমন ঘৃণ্য ব্যাপারগুলো রোধ করা না গেলে জাতির সার্বিক সমৃদ্ধি হোঁচট খেতে বাধ্য। ভবিষ্যতে এধরণের অপ্রত্যাশিত ও ঘটনা বন্ধ করতে প্রয়োজন “শিক্ষক সুরক্ষা আইন” প্রণয়ন। এরইসাথে ইতোমধ্যে ঘটা সকল ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক দোষীদের আইনের আওতায় আনা আবশ্যক।
সম্মানিত শিক্ষকদের প্রতি এমন অন্যায় আক্রমণ ও লাঞ্ছনাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে শিক্ষক মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার ব্যাপারে সরকারের কঠোর অবস্থান একান্ত কাম্য।
লেখকঃ শিক্ষক
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৬/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়