শিক্ষক মানে জীবনের আলোকবর্তিকা

নূরে আলম সিদ্দিকী শান্তঃ শৈশব থেকে শুরু করে অনার্স জীবনের শেষ অবধি অনেক শিক্ষকের দেখা পেয়েছি। তাদের মাঝে অনেকেই প্রিয় হয়ে গেঁথে আছেন হৃদয়ে। এখনো মনে পড়ে প্রাইমারি স্কুলের হেডস্যার সাইফুল স্যারের কথা। স্যারকে দেখলে আমরা সবাই ভয়ে থাকতাম। একদিন দুপুরে টিফিন পিরিয়ডে বাইরে অনেক বৃষ্টি। বন্ধুরা সবাই বলল ফুটবল খেলতে যাবে। সবাইকে না করে বললাম, ‘ক্লাস বাদ দিয়ে খেলতে গেলে হেডস্যার সবার খবর করে ছাড়বে!’ কিন্তু কে শুনে কার কথা! ওরা স্কুলের পেছন গেট দিয়ে তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেল। আমারও ইচ্ছা করছিল বৃষ্টিভেজা মাঠে ফুটবল খেলতে! হানিফ আমাকে এক রকম ধরেই নিয়ে গেল। বুকে ভয় থাকলেও কাঁদা জলে ভেজার উল্লাসে সব ভুলে গেলাম। কিছুক্ষণ পরেই হেডস্যার এসে হাজির! ফুটবল রেখে সবাই থমকে দাঁড়াল। স্যার এসে সবার আগে আমাকে ডাকল! ধমক দিয়ে বলল, এদিকে উঠে আয়। কাছে যেতেই একের পর এক সন্ধি বেতের মার পড়ল পিঠে। জ¦রে দুদিন স্কুলে যেতে পারিনি। যেদিন স্কুলে গেলাম স্যার এসে পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ‘বেশি জোরে লেগেছে রে?’ আমি মাথা নেড়ে বললাম, ‘নাহ’। স্যারের চোখ জলে টলমল করছিল। সেদিন বুঝতে পারিনি জলের কারণ। এখন বুঝি ছাত্রের জীবনে শিক্ষকের শাসন কতটুকু দরকার। ক্লাস ফাইভে ওঠার পর স্কুলের স্কাউটিং ক্লাবে হেডস্যার আমাকে বানালেন টিম লিডার। স্যারের সঙ্গে আমরা গেলাম জামালপুরে স্কাউটিং প্রোগ্রামে। ছিলাম সাত দিন। এই সাতটি দিন স্যারের সঙ্গে এমনভাবে মিশে ছিলাম মনে হয়েছে পরিবারের কারও সঙ্গে আছি। আমরা স্টেডিয়ামে তাঁবু টানিয়ে ছিলাম। রাতের বেলা স্যার এসে গায়ের ওপর কাঁথা দিয়ে দিতেন। সবার খাবার নিজের হাতে বেড়ে দিতেন।

একজন শিক্ষক যে বটবৃক্ষের ছায়ার মতো হতে পারেন তা প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম সাইফুল স্যারের ভালোবাসা পেয়ে। হাইস্কুলের ইংরেজি শিক্ষক আলমগীর স্যারের কথা কোনো দিন ভুলব না। স্যার যেমন ছিলেন রসিক, তেমনি রাগী। হেসে হেসে কথা বলার মাঝে কখন যে রাগ করতেন বোঝা মুশকিল। তবে স্যার সবার পরিবারের খোঁজখবর নিতেন। কারও অর্থনৈতিক সমস্যা থাকলে স্যার বই-খাতা কিনে দিতেন। এক দিন সবাই জানতে পারলাম, ছোটবেলায় স্যার ঠিকমতো বই-খাতা কিনতে পারতেন না। এমনও হয়েছে খাতায় পেন্সিল দিয়ে লিখেছেন, আবার সেই লেখা রাবার দিয়ে মুছে কয়েকবার করে লিখেছেন। স্যার যে কষ্ট করেছেন সে কষ্ট যেন আমরা না করি তাই তিনি আমাদের খোঁজখবর রাখতেন। এই কথা শুনে আমার মনে ভীষণ দাগ কেটেছিল। সেদিন বুঝেছিলাম একজন শিক্ষক কতটা মহান হতে পারে। অনার্স জীবনে এসেও পেয়েছি জীবনের আরও পথপ্রদর্শক। যারা জীবনটাকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছেন।

তেজগাঁও কলেজের বাংলা বিভাগের প্রতিটি শিক্ষক আমার জীবনের জন্য বিশেষ পাওয়া। যারা সবসময় শিক্ষার্থীর খুব কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেন। শুধু পুস্তকের শিক্ষা নয়, জীবনের শিক্ষাটাও পেয়েছি অনার্সে এসে। একজন শিক্ষকই পারেন একজন ছাত্রের জীবন আদর্শ করে গড়ে তুলতে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৮/১০/২০২৩    

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়