সিলেটঃ সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি রাজন দাসসহ দুই শিক্ষককে বরখাস্তের ঘটনা নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানা আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। ফলে অস্থিরতা বাড়ছে লিডিং ইউনিভার্সিটিতে। শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রতীকী ক্লাস নেওয়া সুশীল সমাজের মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি চলছে ওই বহিষ্কারের প্রতিবাদে।
কর্তৃপক্ষ গত ৯ অক্টোবর পেশাগত অসদাচরণের কারণ দর্শানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নোটিস দেয় স্থপতি রাজন দাসকে। রাজন দাস সময় দাবি করলে কর্তৃপক্ষ সময় মঞ্জুর না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক চাকরি থেকে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়ে ৭০তম সিন্ডিকেট সভায় স্থপতি রাজন দাসের বহিষ্কারাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের ২৩তম সভায় তড়িঘড়ি করে ১২ অক্টোবর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য কাজী আজিজুল মাওলা এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন। ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়ে গত ১২ অক্টোবর স্থাপত্য বিভাগের প্রধান স্থপতি রাজন দাস এবং শিক্ষক স্থপতি সৈয়দা জেরিনা হোসেনকে বরখাস্ত করেন।
রবিবার তিনি দেশে ফিরে জানান, বরখাস্তের এ আদেশ পুরোপুরি অবৈধ। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে কারণ দর্শানোর নোটিসের পর তদন্ত কমিটি করে তাদের সুপারিশ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হয়। এ দুটি বরখাস্তের ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানা হয়নি।
উপাচার্য কাজী আজিজুল মাওলা আরও বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কাউকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রেগুলারিটি বডি ইউজিসিকে অবগত করতে হবে। আমি ইউজিসিকে অবহিত করে অন ডিউটি দেশের বাইরে ছিলাম, কাউকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়ে যাইনি। ফলে অন্য কারও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করাটাও বৈধ নয়।
২০০৭ সালে সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন রাজন দাস। পরবর্তীতে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং স্থাপত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধানসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শহিদ মিনার, লিডিং ইউনিভার্সিটির শহিদ মিনার, মদনমোহন কলেজের শহিদ মিনারের নেপথ্যের কারিগর স্থপতি রাজন দাস।
রাজন দাস শিক্ষক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে খুবই জনপ্রিয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান নানা অনিয়মের বিরোধিতা করেছিলেন এ দুই শিক্ষক। এ কারণে ট্রেজারারের নেতৃত্বে একটি গোষ্ঠী অন্যায়ভাবে তাকে বহিষ্কার করে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রেজারার বনমালী ভৌমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পিআরও আলমগীর হোসেন। বলেন, পূজার ছুটির কারণে ট্রেজারার ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বনমালী ভৌমিক মৌলভীবাজারে অবস্থান করছেন। বরখাস্তসহ সার্বিক বিষয়ে দায়িত্বশীলরা কথা বলবেন।
এ ব্যাপারে স্থপতি রাজন দাস বলেন, কারণ দর্শানোর জবাব দেওয়ার জন্য আমি ১০ দিন সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে মাত্র তিন দিন সময় দেওয়া হয়। শোকজের কাগজ ৯ তারিখে
স্বাক্ষরিত হলেও আমি ই-মেইল পাই ১১ তারিখ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বনমালী ভৌমিকের ব্যবহৃত মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ
বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, ২০১৪ সাল থেকে লিডিং ইউনিভার্সিটির কামাল বাজারে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ ও বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হন স্থপতি রাজন দাস। ঠিকাদারের সঙ্গে মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ কোটি টাকার নির্মাণ কাজের বিপরীতে ১১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন ঠিকাদার, স্থপতি রাজন দাসসহ একটি চক্র।
এ অভিযোগ প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, রাজন দাসের অর্থ আত্মসাতের কোনো সুযোগই নেই। লেনদেনের যাবতীয় দায়িত্ব ট্রেজারার পালন করেন। তবে রাজন দাসের দাবি, বহিষ্কারের চিঠিতেও এ ধরনের কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। একটি চক্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ ধরনের অপপ্রচার করছে। এদিকে ১৮ অক্টোবর সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটি থেকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে প্রতীকী ক্লাস নেন স্থপতি রাজন দাস। এতে বিশ্বদ্যিালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। মঞ্চের দেয়ালে রাজন দাসের ছবিসহ ‘প্রতীকী ক্লাস’ লেখা একটি ব্যানার টানানো ছিল। এ ছাড়া একটি হোয়াইট বোর্ড ছিল সেখানে।
প্রতীকী ক্লাসে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী অনিক কর্মকার বলেন, রাজন স্যারকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই আমরা শহিদ মিনারে। এই ক্লাসের আয়োজন করেছি।
দুই শিক্ষককে বরখাস্তের প্রতিবাদে ১৫ অক্টোবর বিকালে সম্মিলিত নাগরিক সমাজ এর ব্যানারে সিলেট নগরীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধন ও সমাবেশ করা হয়। ১৪ অক্টোবর দক্ষিণ সুরমার কামাল বাজার এলাকার ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়