শিক্ষক ফজলু মিয়া এখন ফেরিওয়ালা

মৌলভীবাজারঃ  ‘একটা সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের একত্র করে পড়াতেন। কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক না হলেও সমাজের ঝরেপড়া প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পড়ানো তার ছিল নেশা। টাকার দিকে না তাকিয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সন্তানদের পড়াতেন মাসে মাত্র দুই টাকার বিনিময়ে। এলাকায় তাই তার পরিচিতি দুই টাকার শিক্ষক হিসেবে।’

এই দুই টাকার শিক্ষক যে একজন বড় মনের মানুষ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বয়সের ভারে তিনি কাবু হয়ে গেছেন অনেকটাই। স্ত্রী-বিয়োগের পর মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে নিয়ে কাহিল। ছাত্র পড়ানোর শক্তিও আর নেই তার। ফলে সংসারে ভীষণ অনটন চলে তার; কিন্তু প্রচণ্ড আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন মানুষটি কারও কাছে কিছু চাইতে নারাজ। এখনো জীবিকার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের কাছে শিক্ষা সামগ্রী বিক্রি করছেন দরদি এই শিক্ষক। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার সারমপুর গ্রামে জন্ম ফজলু মিয়ার। ১৯৮৫ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি; কিন্তু জটিল রোগের কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। এরপর থেকেই তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ানো শুরু করেন।

ফজলু মিয়া বলেন, ‘লেখাপড়ার প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বেশি লেখাপড়া করতে পারিনি। তাই টাকার অভাবে বাচ্চারা লেখাপড়া করতে পারছে না দেখলে খুব কষ্ট হয়। সেজন্যই তাদের পড়াতাম। তাদের যেন মনে না হয় যে, বিনা পয়সায় পড়ছে, তাই দুই টাকা সম্মানী নিতাম। এখন বয়স হয়েছে। ছাত্র পড়ানোর ধৈর্য্য আর নেই। কষ্ট হয় খুব।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য জুনেদ মিয়া বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি ফজলু মিয়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াতেন। তার এই মহতি উদ্যোগে উপকৃত হয়েছেন সমাজের পিছিয়ে থাকা পরিবারের শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে ফজলু মিয়া মানবতের জীবনযাপন করছেন।’

জাকারিয়া নামে ফজলু মিয়ার এক ছাত্র বলেন, ‘কেউ টাকা না দিতে পারলেও স্যার পড়ানো বাদ দিতেন না। বিশেষ করে গণিত ও ইংরেজি তিনি খুব ভালো পড়াতেন।’

ফজলু মিয়ার ছাত্র ও পাঁচগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মনসুর আলী বলেন, ‘স্যারের কল্যাণে আমরা অনেকে পড়ালেখা করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি প্রকৃতই একজন সৎ ও ন্যায়পরায়ণ শিক্ষক।’

তিনি জানান, তারা কয়েকজন ছাত্র মিলে স্যারের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে স্যারের থাকার জন্য একটা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। আরও সহযোগিতার চেষ্টা করবেন। তবে সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে ভালো হতো।

মৌলভীবাজার জেলার সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান  বলেন, ‘যদি তিনি ভাতাভোগী না হয়ে থাকেন, তাহলে দ্রুত ফজলু মিয়াকে ভাতার আওতায় আনা হবে। তা ছাড়া সরকারিভাবে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা এলে তাকে দেয়া হবে।’

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৯/১০/২০২৩    

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়