শিক্ষকের মৃত্যুতে দায়ীরাই ছাত্রলীগের নেতৃত্বে

খুলনাঃ ছাত্রলীগ নেতাদের মানসিক নির্যাতনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের নভেম্বরে মারা যান খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক অধ্যাপক সেলিম হোসেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহসভাপতি রুদ্র নীল সিংহ শুভ ও এস এম রাগিব আহসান মুন্নাকে দুই শিক্ষাবর্ষের জন্য ও আবাসিক হল থেকে চিরতরে বহিষ্কার করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় বিভিন্ন ধরনের দণ্ড দেওয়া হয়েছিল মোট ৪৪ জনকে। সমালোচনার মুখে কুয়েট ছাত্রলীগের কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়।

দুই বছর পর গত ১০ অক্টোবর কুয়েটে ছয় সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটিতে রুদ্র নীল সিংহকে সভাপতি এবং রাগিব আহসান মুন্নাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। শিক্ষকের মৃত্যুতে দণ্ডপ্রাপ্তরা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে আসায় হতাশা প্রকাশ করেছেন কুয়েটের শিক্ষকরা।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষক মৃত্যুর ঘটনার আগেও দুই দফা রুদ্র নীল সিংহের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষ। র‍্যাগিং ও হলে ভাঙচুরের অভিযোগে ২০১৬ সালে রুদ্রকে এক টার্ম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। ওই বছরই টেন্ডার দখল করতে গিয়ে আহত হন তিনি। এ ঘটনায় হল থেকেও তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম নিবিড় রেজার বিরুদ্ধে কুয়েটসংলগ্ন যোগীপোল ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগ ছিল। এ ঘটনায় ২০২১ সালে রুদ্র নীল সিংহ ও নিবিড় রেজার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের চিঠি দিয়েছিলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান। তবে নিবিড় রেজা বলেন, ছাত্রলীগ করে নৌকার বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগ ভিত্তিহীন। বিষয়টি আনিসুর রহমানকে ফোন করলে জানা যাবে। আনিসুর রহমান বলেন, তিন বছর আগের বিষয় আমার মনে নেই।

জানা গেছে, রুদ্র নীল ২০১৩-১৪ বর্ষের শিক্ষার্থী। সাধারণ সম্পাদক ২০১৪-১৫ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ২০১৫-১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তাদের শিক্ষাজীবন শেষ হয়েছে বেশ আগেই। কমিটিতে আসতে বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হয়ে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রেখেছেন। নতুন সভাপতি রুদ্র নীল সিংহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সিদ্ধান্ত হাইকোর্ট বাতিল করে দিয়েছে। যেসব অভিযোগ শোনা গেছে, সেগুলো সত্যি নয়। একই বক্তব্য দিয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্নাও।

উচ্চ আদালতের ওই রিটের বিষয় জানতে চাইলে কুয়েটের সহকারী রেজিস্ট্রার (লিগ্যাল) এস এম সাইফুর রহমান বলেন, রেজিস্ট্রারের অনুমতি ছাড়া মামলার বিষয়ে তথ্য দেওয়া যাবে না। রেজিস্ট্রার আনিসুর রহমান ভূঁইয়া ফোন রিসিভ করেননি। তবে কুয়েট প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত শাস্তির বিষয়ে স্থগিতাদেশ দেন এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। গত বছরই তাদের পরীক্ষা দিয়েছে। একটি হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিমকে অপমান করেছিল ছাত্রলীগ নেতারা। সেদিই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর পর বড় ধরনের আন্দোলন শুরু করেন কুয়েটের শিক্ষকরা। তারা তাঁর মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বলে দাবি করেছিলেন। মূলত শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি ও ছাত্র রাজনীতি স্থগিত করা হয়েছিল। শিক্ষক মৃত্যুর ঘটনায় দণ্ড এবং ছাত্রলীগের নতুন কমিটির বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হেলাল আল নাহিয়ান সমকালকে বলেন, ‘অনেক কথাই এখন বলা যায় না। এ বিষয়ে পরে কথা বলব।’ সূত্রঃ সমকাল

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৭/১০/২০২৩    

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়