কুমিল্লাঃ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ উপজেলাভিত্তিক। কিন্তু নানা কারসাজির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলাসহ কুমিল্লার অন্য উপজেলা থেকে বদলি হয়ে কুমিল্লা সদরে এসেছেন বিপুল সংখ্যক শিক্ষক।
জানা যায়, কুমিল্লা সদরে কর্মরত প্রায় ৮০ ভাগ প্রাথমিক শিক্ষকই অন্য জেলা-উপজেলা থেকে বদলি হয়ে আসা। বহিরাগত এ শিক্ষকরা বদলি হয়ে আসার কারণে কমে গেছে কুমিল্লা সদরে চাকরির কোটা। এতে কুমিল্লার মহানগর ও সদরের স্থায়ী বাসিন্দারা নিজ এলাকায় চাকরি করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
চলতি বছরে যেসব বহিরাগত শিক্ষকদের কুমিল্লা সদরে বদলির অর্ডার হয়েছে তাদের যোগদান করতে দেওয়া হয়নি। এর প্রতিবাদে তাদের মধ্যে থেকে ১১ শিক্ষক হাইকোর্টে রিট করেন। এদের যোগদানের পক্ষে একটি রুলও জারি করেছে হাইকোর্ট।
এদিকে রুল পাওয়া শিক্ষকদের ছাড় দিতে রাজি নন কুমিল্লা সদর এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার। অন্যদিকে বহিরাগত শিক্ষকরা যোগদানের ব্যবস্থা করতে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিলেন তা স্থগিত চেয়ে গত বুধবার (২০ সেম্টেম্বর) কোর্টে আবেদন করেছেন তিনি। তার পক্ষের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। এ ছাড়া তিনি জেলা শিক্ষাবিষয়ক কমিটিরও সদস্য। এ কারণে তিনি হাইকোর্টের আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে এ আবেদন করেছেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোটার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ হয়ে থাকে। এখন যদি অন্য জেলা থেকে শিক্ষকরা বদলি হয়ে কুমিল্লায় আসতে থাকেন, তাহলে বহিরাগত শিক্ষকদের দ্বারা কোটা পূরণ হয়ে যাবে। এতে কুমিল্লার শিক্ষক নিয়োগপ্রার্থীরা বঞ্চিত হবেন। এ কারণে কুমিল্লার স্থানীয় মানুষের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর আদালতের আদেশ পাওয়ার ৫ দিনের মধ্যে স্বামীর স্থায়ী ঠিকানা কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় বদলি করা ১০ নারী শিক্ষিকাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বদলি করা ১০ নারী শিক্ষিকাসহ ১১ জন শিক্ষকের যোগদানপত্র গ্রহণ না করায় বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না এবং কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় বদলি করা ১১ শিক্ষকের যোগদানপত্র গ্রহণ করার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন আদালত।
১৩ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া।
এ বিষয়ে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. মো. আমিনুল ইসলাম টুটুল বলেন, কুমিল্লা সদরে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাড়ে ৮শ শিক্ষক কর্মরত রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ শিক্ষকই অন্য জেলা- উপজেলা থেকে বদলি হয়ে আসা। এসব মাইগ্রেটেড শিক্ষকদের কারণে কুমিল্লা শহর ও সদরের স্থায়ী চাকরি প্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। কুমিল্লার চাকরি প্রার্থীদের স্বার্থেই আমাদের প্রিয় অভিভাবক বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার (এমপি) নিয়োগ বিধি পরিপন্থি এসব বদলির আদেশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আবেদন অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম দিকে মোট ৩১ জন শিক্ষককে কুমিল্লার সদর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করে অফিস আদেশ জারি করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। কুমিল্লা সদর আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার তাদের যোগদান না করাতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেন। প্রায় দুইমাস পর তাদের মধ্য থেকে ১৬ জনের অর্ডার বাতিল করে বাকি ১৫ জনের অর্ডার বহাল রেখে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গত ১৬ জুলাই নতুন আরেকটি আদেশ জারি করেন। এমপি বাহারের নিষেধাজ্ঞার কারণে নতুন অর্ডার করা শিক্ষকরাও যোগদান করতে পারেননি। তাদের মধ্যে থেকে ১০ নারীসহ ১১ শিক্ষকের যোগদানপত্র গ্রহণ না করায় বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে এবং কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় বদলি করা ১১ শিক্ষকের যোগদানপত্র গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা চেয়ে ১২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে মশিউর রহমান, ফজিলত পারভিন, উম্মে কুলছুম, দিল আফরোজ, আমিনাতুর রহমানসহ মোট ১১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। রিটে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ মোট ৬ জনকে বিবাদী করা হয়।
এদিকে রিটকারী শিক্ষকদের আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, এ কে এম বাহাউদ্দিন বাহার এই রিট মামলায় কোনো পক্ষে না। তাই তিনি এ আবেদন করতে পারেন না। সূত্রঃ কালবেলা
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২২/০৯/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়