মো. নাজমুচ্ছাকিবঃ বর্তমান সময়ে চলছে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনা সমালোচনা। দেশের অধিকাংশ মানুষ শিক্ষাক্রম পছন্দ করেন নাই। আর শিক্ষকদের নানান কাজ নিয়ে নানান সমালোচনা তো অনেক আগে থেকেই হয়। অধিকাংশের অভিযোগ, বর্তমান সময়ের শিক্ষকগণ শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন। তাদের সেই নীতি ও আদর্শ থেকে সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে এসেছেন। আর যদি হয় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির কথা বলি তবে তো কোনো কথাই নেই। কথাগুলো আংশিক অর্থে সত্য হলেও কিছু স্থানে আমরা এর ভিন্ন চিত্র দেখতে পাই। এখনো দেশে অনেক নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক আছেন যারা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিলিয়ে সুখ খুঁজে পান।
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম। ১৯৮৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ডক্টর মফিজুল ইসলাম পাটোয়ারি স্যারের হাত ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। ডক্টর মফিজুল ইসলাম স্যারের স্বপ্ন ছিল একজন ছাত্র যেন নামমাত্র মূল্যে ভালোমানের পাঠদানের পরিবেশ ও সনদ পেতে পারে। সেই ১৯৮৬ সাল হতে বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজ লক্ষ্য ও আদর্শ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে আছে একঝাঁক দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক যারা শিক্ষকদের পাঠদানে মনের সুখ খুঁজে পান। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর ডিন ও বিভাগের চেয়ারম্যান ডক্টর এটিএম মাহবুবুর রহমান সরকার, জাহানারা আকতার, আনিসুর রহমান প্রাং, হাবিবুল্লাহ বেলালী, নাজমুস সাকিবসহ আরো অনেকে।
অধিকাংশ শিক্ষক যখন শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করে তাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে বের হয়ে গিয়ে অনেকটা ব্যবসায়িক রূপ দান করেছেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা উল্লেখযোগ্য শিক্ষক যেখানে ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে এসে এখানকার শিক্ষকগণ নিজেদের অনন্য করেছেন। শিক্ষকতা অন্যান্য পেশার মতো নয়, যে দিনের শুরুতে প্রতিষ্ঠানে গেলাম আবার দিন শেষে বাড়িতে ফিরে আসলাম এটা নয়। বরং শিক্ষকতা কী সেটার প্রমাণ দিয়েছেন সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটির নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক অ্যান হুইলেয়ার। ঘটনার প্রেক্ষাপট এমন ‘নোবেল প্রাইজ’ নামক ভ্যারিফাইড একটা পেজ থেকে বলা হয়। ঘটনা এমন ছিল যে, যখন অ্যান হুইলেয়ারকে নোবেল কমিটি থেকে ফোন দেওয়া হয়, তখন তিনি ক্লাসে ব্যস্ত। একাধিকবার ফোন দিয়েও তাকে পায়নি নোবেল কমিটি। ক্লাস বিরতিতে আবার কল এলে তিনি রিসিভ করেন। নোবেল কর্তৃপক্ষ থেকে অ্যাডাম স্মিথ নামের এক ব্যক্তি অপর প্রান্ত থেকে কথা বলার জন্য সময় চান। অ্যানি জানান, আমি একটু ব্যস্ত, শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছি।
ঘটনা প্রকাশের পরপরই বাংলাদেশে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। কেননা আমরা অনেক সামান্য কারণেও আমাদের দেশের স্যারদের ক্লাস বর্জন করতে দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সহকর্মীদের সাথে খোশগল্প করে কাটান কিন্তু ক্লাস নিতে আসেন না এটা তো নৈমিত্তিক ঘটনা। সেখানে অ্যান হুইলেয়ার সারা বিশ্বে নজির রেখে গিয়েছেন। একটিবার ভেবে দেখুন আমাদের দেশের কোনো শিক্ষকদের সাথে এমন হলে ঘটনা কী ঘটত?
আমি অধ্যাপক অ্যান হুইলেয়ারকে সাধুবাদ জানাই। শিক্ষকতা পেশা নয়, এটা একটা দায়িত্ববোধ। একজন শিক্ষকের মূল দায়িত্ব শিক্ষাদান করা। হ্যাঁ আমাকে প্রশ্ন করতেই পারেন যে ভাই গবেষণাও তো শিক্ষকের কাজ?। হ্যাঁ আমি আপনার সাথে দ্বিমত করব না। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট হিসাব করে দেখেন বছরে গড় গতগুলো রিসার্চ পেপার পাবলিশ হচ্ছে? কতটা নতুন নতুন আবিষ্কার হচ্ছে?
উত্তর পেলেন কিছু? আমার বিশ্বাস বলার মতো কিছুই পেলেন না। আর পাওয়ার কথাও নয়। তবে হ্যাঁ, হাজারো খারাপ শিক্ষকের মাঝে অনেক ভালো শিক্ষক আছেন। যারা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রদানেই মনের সুখ খুঁজে পান। যারা শিক্ষাপ্রদানের জন্য অনবরত নিজের শিক্ষা চালিয়ে যান। কিন্তু সেই সংখ্যাটা নেহাত কম। তবে আমরা আশা রাখব আমাদের শিক্ষকগণ তাদের নৈতিক আদর্শে ফিরে আসবেন।
পরিশেষে বলব- শিক্ষকতা পেশা নয়, এটা একটা দায়িত্ববোধ। প্রতিটি শিক্ষক যদি অ্যান হুইলেয়ারের আদর্শে আদর্শিত হতে পারেন তবেই আমরা সুশিক্ষিত জাতি গড়তে পারব। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের সজাগ দৃষ্টি কামনা করছি।
লেখক: প্রকৌশলী
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২১/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়