স্কুল জীবনে বাংলা মাধ্যম থেকে ইংরেজিতে মাধ্যমে রূপান্তর হয়েছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এ কাজে প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভূমিকা রেখেছে চট্টগ্রামের স্থানীয় সানশাইন গ্রামার স্কুল অ্যান্ড কলেজ। আর ব্যক্তি হিসেবে স্কুলটির অধ্যক্ষ গাজী সাফিয়া রহমান শিক্ষা উপমন্ত্রীকে সহায়তা দিয়েছিলেন। স্কুলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) নিজের ফেসবুক পেজে স্কুলটির ছবি ও অধ্যক্ষ গাজী সাফিয়া রহমানের ছবি যুক্ত করে স্মীতিচারণ করেছেন।
শিক্ষাবার্তার পাঠকদের জন্য উপমন্ত্রীর স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘‘কিছুদিন আগে ছিলো আমার এসএসসি সমমান শেষ করা (ও-লেভেল) বিদ্যালয় সানশাইন গ্রামার স্কুলের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ছাত্র হিসেবে আমি এই সানশাইন স্কুলের কাছে কৃতজ্ঞ। এই স্কুলে আমি পড়েছি শুধুই চার বছরের মতো।
ছবিতে দেখা যায় আমার সাফিয়া মেডামকে। যিনি মাতৃস্নেহে আমাকে বাংলা মাধ্যমের এক ছাত্র থেকে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীতে রূপান্তর করতে তার বাসায় নিয়ে গিয়ে বিনামূল্যে, উল্টো নিজের বাসায় বিকালের নাস্তা খাইয়ে ভাষা শেখাতেন! ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়গুলো হয় সাধারণত ধনীদের, বেশ সম্পদশালী। কিন্তু সানশাইন সে ধরনের ছিলো না।
আমাদের ছাদের উপরে বেড়ার ঘরে, বাথরুম কনভার্ট করে ক্লাসরুম বানিয়েও ক্লাস হয়েছে। নাসিরাবাদ স্কুল, কলেজিয়েটের রাজকীয় অবকাঠামো ছেড়ে সানশাইনের অবস্থা দেখে আমি রীতিমতো হতাশ ছিলাম প্রথমে! কিন্তু আমার ভ্রম ভাঙতে শুরু করে কিছুদিনের মধ্যেই।
স্কুল মানে শুধুই সুন্দর বিল্ডিং না! পড়াশুনার অতিমাত্রায় চাপ না থাকায়, স্কুল জীবনের শেষের দিকে আমার নানান ধরনের বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ইংরেজি সাহিত্যের প্রাইড এন্ড প্রেজুডিস থেকে রিটার্ণ অফ দ্যা নেটিভ, বিজ্ঞানের ফিজিক্স কেমিস্ট্রি, অর্থনীতি, হিসাবরক্ষন, হরেকরকম বিষয় যখন তখন পড়ার ইচ্ছা হতো। এবং মজার ব্যাপার হলো স্কুলের শিক্ষকরা নিরুৎসাহিত করার বদলে উৎসাহ দিতেন।
কখনই বলেনি বাংলা মিডিয়াম থেকে এসে ফিজিক্স কেমিস্ট্রি ম্যাথস এই ছেলে পারবে না। বিরক্ত হতেন দুষ্টামির জন্যে, কিন্তু উল্টো বলতেন চেষ্টা করলে তুমি বাবা সব পারবে। ভাষায় আমি দুর্বল যেহেতু ছিলাম তাই বইগুলো গল্প বইয়ের মতো পড়া শুরু করতে বলতেন। বিশেষ করে আমার ফিজিক্স-এর টিচার ছিলেন প্রবীর বিশ্বাস, পড়াতেন কম, কিন্তু নিজে থেকে বই পড়তে বেশি বলতেন।
আর বলতেন আটকে গেলে আমি আছি। আমি তাই করতাম। পড়াশোনায় মোটামুটি মনোযোগী হলাম। বাংলা মাধ্যম থেকে এসে, ও-লেভেল শেষ করে, এ-লেভেল পড়তে লন্ডন যাওয়ার সাহস করেছিলাম। সেটিও সানশাইনের কারণেই। আর সেই সাহস থেকেই এ-লেভেল শেষ করে লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিকস, কলেজ অফ ল’ ইত্যাদি।
সবকিছুর ভিত্তিতে ছিলো সানশাইন স্কুলে অবাধ্য ছেলের মতো যা ইচ্ছা পড়ার স্বাধীনতা, ‘‘আন-রেজিমেন্টেড পড়াশুনা’’, যার থেকে পাঠ্যক্রমের পড়ার উপরে নিজেই উৎসাহী হই। তার আগে শুধুই সংবাদপত্র পড়তাম, পাঠ্যবইয়ে উৎসাহ পেতাম না। আরো মজার ব্যাপার এই সানশাইন স্কুলে বেশ সম্ভ্রান্ত সন্তানরা যেমনি আসতো, আবার এতো সম্ভ্রান্ত নয়, তেমন ঘড়ের ছাত্ররাও আসতো।
ম্যাডাম সাফিয়া রহমান অনেককেই বিনামূল্যে পড়াতেন। কিন্তু কেউ জানতো না কে বিনামূল্যের শিক্ষার্থী আর কে ফিস দেয়া শিক্ষার্থী। স্কুলটি এখনো আছে। সাধারণভাবেই আছে। বিলাসবহুলতা, ধর্মীয় উগ্রতা, জড়তার মানসিকতা এসব এখনো নেই যা অনেক ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলকে ইদানীং গ্রাস করে ফেলছে।
সাফিয়া রহমানের পরিবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছিলেন। স্কুলের অনেক অনুষ্ঠান শুরুর সময়ে সুরা ফাতেহা পড়ার পরে, আরতীর মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানোর সাথে নৃত্য, এইভাবে শুরু হতো। এটি বাকি সব বিদ্যালয় থেকে ভিন্ন ছিলো। আমি বেশকিছু স্কুলে পড়েছিলাম। বাওয়া, নাসিরাবাদ, কলেজিয়েট, ভারতে পশ্চিমবঙ্গে কিছুদিন। কিন্তু আসলে মূলত পড়াশুনাটা এইখানে এসেই শুরু করেছিলাম, কারণ এই স্কুল আমাকে জোড় করে কিছুই চাপিয়ে দেয়নি।’’
সানশাইন গ্রামার স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১৪ জানুয়ারি ১৯৮৫ সালে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয় হিসেবে সাফিয়া গাজী রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি চট্টগ্রামের প্রথম বিদ্যালয় যেটি ইন্টারন্যাশনাল জেনারেল সার্টিফিকেট অব সেকেন্ডারি এডুকেশন ও জেনারেল সার্টিফিকেট অব এডুকেশন-এর জন্য এডএক্সেল ও কেমব্রিজ অ্যাসিসমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের নিয়মে ব্রিটিশ শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদানের সুযোগ প্রদান করে থাকে। এটি ব্রিটিশ শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান করা চট্টগ্রাম শহরের প্রথম বিদ্যালয়।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০১/২৭/২৩