দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯২ সালে। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০৪। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সময়সীমা অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ৫২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা ছিল। এর আগে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য কয়েক দফা সময় বাড়ানোও হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গত ২৭ বছরে মাত্র ২০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পেরেছে। বাকিরা টালবাহানা করেই সময় পার করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্র জানায়, স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া ৩২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ অবস্থা জানার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়াসংক্রান্ত কমিটির মুখোমুখি হতে হবে। আজ বৃহস্পতিবার মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভকে ডেকেছে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি। পর্যায়ক্রমে ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়কেই ডাকা হবে।
ইউজিসির করা সর্বশেষ তালিকানুযায়ী মাত্র ২০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পেরেছে। সেগুলো হলো—নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, গণবিশ্ববিদ্যালয়, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সিটি ইউনিভার্সিটি (তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আউটার ক্যাম্পাস আছে), পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বগুড়া, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (মিরপুর ২ নম্বরে একটি অস্থায়ী ক্যাম্পাস আছে), অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং লিডিং ইউনিভার্সিটি সিলেট।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার ব্যাপারে যাদের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই, তাদের ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নেব। তবে যারা স্থায়ী ক্যাম্পাস করেও যায়নি এবং যাদের কাজ চলমান আছে তাদের সঙ্গে আলোচনার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ঢাকা থেকে বেশ দূরে দৃষ্টিনন্দন স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তুলেছে। তবে এসব ক্যাম্পাসে তেমন কোনো শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে না। তা ব্যবহৃত হচ্ছে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, সমাবর্তনসহ বড় বড় অনুষ্ঠানের স্পট হিসেবে। এমনকি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেও গুরুত্ব পাচ্ছে না স্থায়ী ক্যাম্পাসের ঠিকানা।
সূত্র জানায়, মহাখালীতে অবস্থিত একটি স্বনামধন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকলেও তারা সেখানে পুরোপুরি না গিয়ে আউটার ক্যাম্পাসেই কার্যক্রম চালাচ্ছে। শুধু একটি সেমিস্টার শিক্ষার্থীদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে পড়তে হচ্ছে। বনানীতে অবস্থিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার বেশ দূরে দুটি স্থায়ী ক্যাম্পাস করলেও একটিতেও তারা যাচ্ছে না। ধানমণ্ডিতে অবস্থিত আরো একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিনন্দন স্থায়ী ক্যাম্পাস রয়েছে। কিন্তু তারা সেই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের দুই-একটি ক্লাস বা কোর্স পড়াচ্ছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য জায়গা কিনেছে, কেউ কেউ কাজও শুরু করেছে। দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ফাউন্ডেশনের জমিতে নির্মিত স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তবে সেটিও আইনসম্মত নয়। আর প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়সহ তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত জমির চেয়ে কম জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগাদা দিলেও শর্ত পূরণে খুব একটা অগ্রগতি নেই। বাকি ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে না গেলেও রাজধানী থেকে বেশ দূরে ছোট বা বড় স্থাপনাসহ ক্যাম্পাস নির্মাণ করেছে।