শিক্ষাবার্তা ডেস্কঃ যানজট বাধলেই চারপাশ থেকে হর্ন বাজানো শুরু হয় যানবাহনের। মনে হয়, শুধু হর্ন বাজালেই যানজট কেটে যাবে। মাঝে জটে আটকে থাকা মানুষের কান ঝালাপালা হওয়ার দশা হয় বলছিলেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ মজনু। তিনি বলেন কার আগে কে যাবে এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে চালকরা বিকট শব্দে হর্ন বাজানোর অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ও লিপ্ত হন।
এ অবস্থার মধ্যে ‘সবার জন্য কানের ও শোনার যত্ন’ স্লোগান নিয়ে শুক্রবার (৩ মার্চ) পালিত হচ্ছে বিশ্ব শ্রবণ দিবস।
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ইউএনইপির প্রকাশ করা গত বছরের এক বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুয়ায়ী ঢাকা বিশ্বের শব্দ দূষণের শীর্ষ নগরী, এবং রাজশাহী ৪র্থ। প্রতিবেদনে শব্দদূষণে ঢাকার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ভারতের উত্তর প্রদেশের মুরাদাবাদ ও পাকিস্তানের ইসলামাবাদ।
শব্দদূষণ নিয়ে ‘ফ্রন্টিয়ার্স ২০২২: নয়েজ, ব্লেজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে শব্দদূষণ কীভাবে মানুষের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা প্রভাবিত করছে, সে বিষয়েও তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, শব্দদূষণে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পাঁচ শহরের ৪টির অবস্থানই দক্ষিণ এশিয়ায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গাইডলাইন বা নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষের জন্য ঘরের ভেতর শব্দের গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৫৫ ডেসিবেল। আর ঘরের বাইরে বাণিজ্যিক এলাকার জন্য ৭০ ডেসিবেল। অথচ ঢাকায় এই মাত্রা ১১৯ ডেসিবেল ও রাজশাহীতে ১০৩ ডেসিবেল।
শব্দদূষণের প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে সড়কে যানজটকালে যানবাহন থেকে নির্গত শব্দ, উড়োজাহাজ, ট্রেন, শিল্পকারখানা ও বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে সৃষ্ট শব্দ। এসব শব্দ মানমাত্রার চেয়ে বেশি হলে তা মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে বিপদে ফেলে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল বলেন, শব্দ দূষণ বন্ধে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। কেবল আইন করে রাখলে হবে না, আইনের বাস্তবায়নের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্ণ নিষিদ্ধ হওয়ার পরও বাজারে বিক্রি হচ্ছে, যানবাহনে ব্যবহার করা হচ্ছে। মানুষ আইন মানবে না যদি, যদি আইনের বাস্তবায়নে পদক্ষেপ না নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের এক জরিপে শব্দ দূষণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৪২ শতাংশ রিকশাচালকের শ্রবণজনিত সমস্যায় ভোগার তথ্য উঠে এসেছে। এছাড়াও তাদের জরিপে ৪২ শতাংশ রিকশাচালক, ৩১ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশ, ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ অটোরিকশা চালক, ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ দোকানদার, ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ বাস-ট্রাক চালক, ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ প্রাইভেটকার চালক এবং ১২ দশমিক ৫ শতাংশ মোটরসাইকেল চালকও শ্রবণজনিত সমস্যায় ভুগছেন বলে উঠে এসেছে।
ঢাকার কারওয়ান বাজার এলাকায় কথা হয় বাস চালক মতিহার মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, ঢাকায় গাড়ি চালাতে হলে হর্ণ দিতেই হয়। মানুষ, জ্যাম, গাড়ীর প্রতিযোগিতা, মাঝেমধ্যে নিজের ই বিরক্ত লাগে।
রিকশাচালক সোনাহর আলী বলেন, বেল না বাজালে তো কেউ সাইড দিতে চায়না। যাত্রীরা দ্রুত যেতে চায়, আমাদের ও তাড়া থাকে, ট্রিপ ফেলে আরেকটা ধরতে হবে।
রাজধানীতে গাড়ীর অসুস্থ প্রতিযোগিতা, প্রয়োজন ছাড়া হর্ন বাজানো, উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে ওয়াজ,রাজনৈতিক স্ব সামাজিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য, কনসার্ট, বিভিন্ন দিবস ও বিশেষ বিশেষ দিনে আতশবাজি আমাদের দৈনন্দিন ঘটনা। এছাড়াও ঢাকায় পর্যাপ্ত ফুটপাত না থাকায় মানুষ চলাচলের জন্য রাস্তা ব্যবহার, ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহার না করে ও ক্রসিং না মেনে রাস্তা পারাপার করার ফলে যানবাহনে অধিক মাত্রায় হর্ন ব্যবহার করতে বাধ্য হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ময়মনসিংহের রাহাত লিখেন, প্রতি সপ্তাহেই এলাকায় ওয়াজের অনুষ্ঠান হয়। এতে মানুষের হেদায়েত হোক বা না হোক, আমার বিরক্তি হয়। বাসায় অসুস্থ মা, যারা ওয়াজ আয়োজন করে তাদের তো এটুকু বোঝা উচিত, আবাসিক এলাকায় নানা ধরনের মানুষ থাকে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৪/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়