ভোলাঃ জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় রাতের আঁধারে একটি বিদ্যালয়ের টিনশেড ঘরসহ আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের পরিচালনাকারী সংস্থা কো-অপারেশন ইন ডেভেলপম্যান্ট অস্ট্রেলিয়ার (কো-ইড) চরফ্যাশন উপজেলার পরিদর্শক এন এম আলমগীর বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো দু-তিনজনের নামে চরফ্যাশনের দক্ষিণ আইচা থানায় মামলা করেছেন। এ ছাড়া গত রবিবার (২৭ আগস্ট) স্কুলঘরসহ আসবাবপত্র ফিরে পেতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মানববন্ধন করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন- চরমানিকা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চর আইচা গ্রামের বাসিন্দা ও মধ্য চর আইচা কো-ইড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. বশির উল্লাহ মিয়া (৭০) ও তার ছেলে এমদাদুল হক বাকের (৩৫), একই উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়ন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল হোসেন মুন্সীর ছেলে মাহাবুব (৪০), রসুলপুর ইউনিয়ন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. রুহুল আমিনের ছেলে মো. সোহাগ (৩২), চর আইচা ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নসু হাওলাদার (৫৫)।
স্থানীয় লোকজন ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার (২৫ আগস্ট) ভোররাতে মধ্য চর আইচা কো-ইড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনশেড ঘরটি ভাঙচুর করে ঘরসহ বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র নিয়ে যায় ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি ও তার লোকজন। এমনকি সেখানে তারা সুপারিগাছের চারা রোপণ করে দেয়। এ ঘটনার তিন দিন পর ২৭ আগস্ট (রবিবার) সকাল ১০টার দিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়ে স্থানীয় চরমানিকা ৮ নম্বর ওয়ার্ড স্লুইস গেট এলাকায় স্কুলটি ফিরে পেতে মানববন্ধন করেন। এরপর ওই দিন রাতেই দক্ষিণ আইচা থানায় মামলা দায়ের করেন বিদ্যালয়ের অডিটর এন এম আলমগীর।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাফিকুল ইসলামসহ অন্য শিক্ষকরা জানান, ২০০৬ সাল থেকে মধ্য চর আইচা কো-ইড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দেশের বাইরের অস্ট্রেলিয়ান সংস্থার অর্থায়নে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে পাঠদান চলে আসছে। এই বিদ্যালয়ের জমিদাতা ও সভাপতি চর আইচা গ্রামের বশির উল্লাহ। এরই মধ্যে এ বিদ্যালয়ের পাশে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি আশ্রয়কেন্দ্রের ভবনের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। ওই নির্মাণাধীন আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে বশির উল্লাহ তার ছেলেসহ চারজন শিক্ষক দিয়ে নামমাত্র একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলার পাঁয়তারা করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে বশির উল্লাহ কো-ইড প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের দায়িত্বরত শিক্ষকদের চাপ দিতে থাকেন। বিষয়টি শিক্ষকরা কো-ইড সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করেন। এরই মধ্যে গত ২৫ আগস্ট শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে স্থানীয় লোকজন বিদ্যালয়ের টিনশেড ঘরটি নেই বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে মুঠোফোনে অবগত করেন। ঘটনার পরপরই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, বিদ্যালয়টির টিনশেড ঘর, ২৪টি বেঞ্চ, ৪টি টেবিল, একটি স্টিলের আলমারিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কোনো কিছুই সেখানে নেই। পরে বিষয়টি তারা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আরো জানান, বিদ্যালয়ের ঘরটি ভেঙে ফেলায় তারা বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে রাস্তায় অবস্থান করছেন। পাঠদানও চালাতে পারছেন না।
চরফ্যাশন কো-ইড সংস্থার বিদ্যালয় পরিদর্শক এন এম আলমগীর জানান, ২০০৬ সালের দিকে বশির উল্লাহ ও তার মা ফাতেমা খাতুনের দেওয়া ৪৮ শতাংশ জমির ওপর মধ্য চর আইচা কো-ইড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি বিদ্যালয় গড়ে তোলেন। গত ১৭ বছর ধরেই চারজন শিক্ষক দিয়ে কো-ইড সংস্থার অর্থায়নে এ বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। গত ২০২২ সালের দিকে বিদ্যালয়ের জায়গায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে তিনতলাবিশিষ্ট স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ শুরু হয়। তখন পার্শ্ববর্তী একটি জায়গায় একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আর সাইক্লোন শেল্টারটির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। গত ২০২২ সালের শেষের দিকে বিদ্যালয়ের সভাপতি বশির উল্লাহ মিয়া নির্মাণাধীন সাইক্লোন শেল্টারের মধ্যে পূর্ব চর আইচা নামের একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। সে থেকেই কো-ইড বিদ্যালয়টি সেখান থেকে সরানোর জন্য নানাভাবে অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন। এর সূত্র ধরেই তিনিসহ তার ছেলে ও অন্য লোকজন নিয়ে ভোররাতের দিকে স্কুলের টিনশেড ঘর ভাঙচুর করে আসবাবপত্রসহ অন্যান্য মালামাল লুট করে নিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।
এ বিষয়ে মধ্য চর আইচা কো-ইড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. বশির উল্লাহ মিয়া ও তার ছেলে এমদাদুল হক বাকের স্কুলঘর ভাঙচুরের কথা অস্বীকার করেন।
দক্ষিণ আইচা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাখাওয়াত হোসেন মামলার ঘটনা নিশ্চিত করে জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। খুব দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৯/০৮/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়