ঢাকাঃ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর রোববার ও সোমবার হরতাল কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। অবরোধসহ রাজনৈতিক নানা কর্মসূচিতে সপ্তাহ পার হচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে যাত্রীবাহী বাস, ব্যক্তিগত পরিবহনে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনায় উদ্বেগ বিরাজ করছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে। কমেছে রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও।
এবার নভেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব ক্লাসের সমাপনী পরীক্ষা নেওয়ার কথা থাকলেও তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। হরতাল অবরোধে বছর শেষের বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। পরীক্ষাসূচি পরিবর্তন করে শুক্র ও শনিবার নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
লাগাতার হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচিতে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শেষ প্রান্তিকের মূল্যায়নও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৫ নভেম্বরের পরিবর্তে এই দুটি শ্রেণির নতুন শিক্ষাক্রমের বার্ষিক মূল্যায়ন ৯ নভেম্বর ধার্য করা হয়। তবে নতুন সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছে না। আবারো পেছাতে হবে পরীক্ষা।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে জানানো হয়েছে, যেসব শিক্ষার্থী হরতাল কিংবা অবরোধে স্কুলে আসতে পারছে না তাদেরকে স্কুলে অনুপস্থিত দেখানো যাবে না। বরং ক্লাসে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস করাতে হবে।
অবরোধকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের স্কুল-কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল নগণ্য। কোথাও কোথাও ক্লাস হলেও শিক্ষার্থী ছিল কম। অনেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের উপস্থিতিও ছিল হতাশাজনক। এতে সন্তানদের স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় পাঠানো নিয়ে দোটানায় পড়েন অভিভাবকরা।
আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না থাকলেও রুটিনমাফিক স্কুল-কলেজে আসা-যাওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। পরীক্ষাগুলো সময়মতো না হলে সন্তানদের শিক্ষাজীবন এলোমেলো হয়ে যাবে এমন আশঙ্কার কথা জানান অভিভাবকরা।
করোনার কারণে টানা দেড় বছর স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে। দেশের পুরো শিক্ষাসূচি লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। সেই শিক্ষাসূচি এখনো এলোমেলো রয়েছে। করোনাকালে ঝরে পড়ে অনেক শিক্ষার্থী।
সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীর বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে। ভয়ে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাই না। বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হলে তো স্কুলে আসতেই হবে।
এ অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে না। আমাদের শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের ভবিষ্যত। সহিংসতা শিশু কিশোরদের মনে প্রভাব ফেলে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আতঙ্ক ও উদ্বিগ্ন। রাজনৈতিক দলগুলোর সহনশীল হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
গত সপ্তাহে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। দেশের মেয়েদের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক পরীক্ষাসূচি অনুযায়ী গত ১৩ নভেম্বর থেকে দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণির পরীক্ষা শুরু হয়। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চলতি মাসের ৩০ নভেম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হরতালের কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পরীক্ষা শুক্রবার ও শনিবার নেওয়া হবে বলে জানান জানান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেয়া রায় চৌধুরী।
কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের চলমান বার্ষিক পরীক্ষা শুক্র ও শনিবার বন্ধের দিন নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ.এন.এম শামসুল আলম খান। তিনি বলেন, অভিভাবকরা রাজনৈতিক অস্থিরতায় তাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পান। সবাই উপস্থিত না হলে পরীক্ষা নেওয়া যায় না। পরীক্ষা গ্রহণে সমস্যার কারনে পরীক্ষাসূচি পরিবর্তন করে শুক্র ও শনিবার নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৬/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়