আমির আসহাব।।
মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের পাঠ্যপুস্তকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী লিখিতভাবে শিক্ষার্থীদের সচেতন ও যোগ্যতা অর্জনের আহব্বান করেছেন। তিনি লিখেছেন- ‘‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য যোগ্যতা অর্জন কর।’’ শিক্ষার্থীদের দক্ষ ও যোগ্য জনশক্তিতে রূপান্তরের জন্য দরকার যোগ্যতা (জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ) সমৃদ্ধ শিক্ষক। ঠিক অনুরূপ যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছিল বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কতৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
এনটিআরসিএ’র নীতিমালায় ছিল-শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন ব্যতিত কোনো ব্যক্তি কোনো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো পদে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের যোগ্য বিবেচিত হবে না। সুতরাং শিক্ষার্থীদের পথ পদর্শক হবেন যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নিবন্ধিত শিক্ষক।
স্নাতক-মাস্টার্স করা তরুণ-তরুণীরা নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে ‘নিবন্ধন সনদ’ অর্জন করেছে এবং শিক্ষক হিসেবে শুধু তাদেরকেই নিয়োগ দেওয়া হবে। কাজেই শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কাজটা স্বচ্ছ এবং সহজ হওয়ার কথা। কিন্তু যুগোপযোগী শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি এনটিআরসএি’র অব্যবস্থাপনায় এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
সঙগত কারণে এনটিআরসিএ’র অনিয়মের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা-মোকদ্দমা রয়েছে। কচিকাঁচা শিক্ষার্থীদের মডেল- সেই এনটিআরসিএ’র নিবন্ধিত শিক্ষক অধিকার বঞ্চিত হয়ে রাস্তায়। চরম বৈষম্য ছাড়া শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের সামনে নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দেয় না, না খেয়ে থাকলেও মুখ খুলে না। সেই শিক্ষকেরা দিনের পর দিন রাস্তায়, কারো কোনো দায়িত্ব নেই, দেখার কেউ নেই।
দায়িত্বশীল পর্যায়ের কারো কোনো সহমর্মিতা নেই। যারা যৌক্তিক দাবিকে অবজ্ঞা করে শিক্ষকদের আন্দোলনকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা একাংশের আবদার বলে চালিয়ে দিতে চায়, তারা হয়তো মুক্তিযুদ্ধ ভুলে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধে সামনের সারির যোদ্ধা কতজন ছিল সেটা বড় কথা না, বড় কথা হচ্ছে দাবিটি যৌক্তিক কিনা?
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকিস্তানের বৈষম্য থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি। দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীন দেশে যৌক্তিক দাবি নিয়ে শিক্ষকদের কেন সাতমাস রাস্তায় থাকতে হলো, কে দিবে এ প্রশ্নের জবাব?
এনটিআরসিএ’র শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে লেখক ও শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের লেখা ‘কমন-সেন্সের বাইরে’ হতে কয়েকটি উদ্ধৃতি দিতে চাই। লেখার শুরুতেই তিনি বলেছেন-‘‘আমি আমার দীর্ঘ জীবনে যে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখেছি তার মাঝে একটা হচ্ছে পৃথিবীর যে কোনো জটিল বিষয় আসলে কমন-সেন্স দিয়ে মোটামুটি বুঝে ফেলা যায়। একেবারে পুরোটা বোঝার জন্য হয়তো বড় বড় বিশেষজ্ঞ দরকার হয়। কিন্ত কাজ চালানোর মতো বোঝার জন্য কমন-সেন্সেই যথেষ্টে।’’
তিনি অত্যন্ত আক্ষেপ করে বলেন-‘‘একেকরার একেকটি পরীক্ষায় প্রার্থীরা একেক নম্বর পান। পদ্ধতির পরিবর্তন হলে মূল্যায়নের সবকিছুই ওলটপালট হয়ে যায়। তাই যদি সবাইকে নিয়ে মেধা তালিকা করা হয় তাহলে কোনো কোনো ব্যাচ লাভবান হবে এবং কোনো কোনো ব্যাচের একেবারে বিনা কারণে সর্বনাশ হয়ে যাবে। সেগুলো সমন্বয় করার বৈজ্ঞানিক পদ্বতিও আছে। সেগুলোর প্রয়োগ না করে চাকরি প্রার্থীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হলে সেটি হবে চূড়ান্ত নিষ্ঠুরতা। তবে যে শিক্ষকরা জাল সনদ নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছেন, তাঁরা ক্লাসে চুরি-ডাকাতি- প্রতারণা করানোর বাইরে আর কী পড়ান- আমার জানার খুব কৌতূহল। ’’ মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের সাথে আপনিও একমত হবে যে, কমন-সেন্স দিয়ে যদি কেউ উচিত-অনুচিত বুঝতে না চায় তাকে বোঝানোর চেষ্টা বৃথা।
এনটিআরসিএ’র বেশির ভাগ নিবন্ধিত শিক্ষকই সরকারি প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত, অভিজ্ঞ এবং নতুন কারিকুলামে কচিকাঁচা শিক্ষার্থীদের গুণগত ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করণে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অনুসারে প্রত্যেকেরই আছে পিডিএস আইডি। এছাড়াও নিবন্ধিত শিক্ষক, শিক্ষকতা পেশাকে ব্রত হিসেবে নিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্নাতক-মাস্টার্স, এমনকি এমএড-বিএড করেও নামেমাত্র পারিশ্রমিকে (প্রতিষ্ঠানের শাখা অনুমোদন না থাকায়) হচ্ছেন বৈষম্যের শিকার। এই সব নিবন্ধিত শিক্ষকদের স্ব স্ব নীতিমালায় নিয়োগ দিলে জাতি ক্ষতিগ্রস্থ’ হবে না, বরং লাভবান হবে।
নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণি পর্যন্ত থাকছে একমূখী শিক্ষাব্যবস্থা এবং এইচএসসি লেভেলে থাকছে গ্রুপ ভিত্তিক পড়াশোনার সুযোগ। সুতরাং এইচএসসি লেভেলে প্রত্যেকটি কলেজে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখা থাকবে বাধ্যতামূলক। ফলে নতুন করে কলেজে নিয়োগ হবে অনেক নিবন্ধনধারীর। যাদের স্কুল ও কলেজ উভয় নিবন্ধন আছে, তাদের অনেকেই সুযোগ নিবে কলেজ নিবন্ধনের বিপরীতে চাকরির।
ফলে এখন যে কৃত্রিম শিক্ষক সংকট আছে তা আরও তীব্র হবে। অথচ এনটিআরসিএ গণবিজ্ঞপ্তিতে যাদের সুপারিশ করছে তাদের বেশিরভাগ চাকরি প্রত্যাশী নয়, বদলি প্রত্যাশী (বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বদলির সিষ্টেম চালু না থাকায় একাধিক অর্জিত সনদের সাহায্যে তারা সুপারিশের সুযোগ গ্রহণ করে), ফলে শূন্য পদ শূন্যই থাকে।
যারা বদলি প্রত্যাশী তাদের মিউচুয়াল ট্রান্সফার বা বদলি ব্যবস্থা হলে প্যানেল প্রত্যাশীদের কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। যারা ইতোমধ্যে সুপারিশ পেয়েছেন তারা আমাদেরই ভাই-বোন। তাদেরও দুঃখ কষ্টের কাহিনী আছে। মিউচুয়াল ট্রান্সফার বা বদলি ব্যবস্থা হলে তাদের দুঃখ-কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে। হয়তো নিজ জেলা বা উপজেলায় একটু ভালো থাকবেন। যারা যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যোগ্য শিক্ষকদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারছে না, ব্যর্থতা তো তাদের, ক্ষতি তো তারা করছে। যারা বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না পেয়ে পদ ফাঁকা রাখছেন, কিন্তু পত্র-পত্রিকায় সাক্ষাৎকারের সময় বলছেন- যোগ্য শিক্ষক পাইনি। যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সকলেরই অপমানবোধ হয়। আর হবেই বা না কেন- যোগ্যতার পরিমাপ এখন নিছক নম্বর যা পূর্ব নির্ধারিত নয়। ১-১২তমদের (গেজেটে নম্বর ভিত্তিক এগিয়ে থাকার কোনো পূর্ভাবাস না থাকায়) নব্বই ভাগের অব¯’ানই তালিকার শেষাংশে। এনটিআরসিএ’র নিবন্ধিত শিক্ষকদের চাওয়া সরকারের সদি”ছার পরিপন্থি নয়। শূন্য পদের বিপরীতে সরকারের বাজেট থাকে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক শূন্যতায় ভুগছে, নিবন্ধিত শিক্ষকের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে তবু আন্দোলনকারীরা এটা বলছে না যে, তাদের ডেকে ডেকে চাকরি দিন। তারা এটা বলছে যে, এনটিআরসিএ’র ২৫% এরও কম সুপারিশ দক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন প্রজ্ঞাপণ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত নিবন্ধিতরা যাবে কার কাছে? বছরে প্রতি পরীক্ষায় ২০/৩০ হাজার যোগ হবে আর ফেস নিয়োগ হবে ১০/১২ হাজার, বাকীরা কেন অযোগ্য হবে? এনটিআরসিএ’র নিবন্ধিত শিক্ষকেরা নির্মম রসিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ৫ ই জুন, ২০২২ শুরু করেন গণঅনশন। এমপি-মন্ত্রী দাবির পক্ষে কথা বলেন, শিক্ষাবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ কথা বলেন, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে দপ্তরে পাঠানো হয় স্মারকলিপি। জাতীয় সংসদে বিষয়টি দুইবার উত্থাপিত হওয়ার পরও কোনো সুরাহা হলো না। গণঅনশনে শিক্ষকেরা রাস্তার ধুলাবালি, রোদ-বৃষ্টি-ঝড়, সিত্রাং-এর মাঝে গড়াগড়ি করেও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারল না। অধিকার বঞ্চিত চাকরি প্রত্যাশীদের কান্না কেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছালো না তা দুঃখ জনক। এনটিআরসিএ’র নিবন্ধন সনদ, চাকরির সনদ, একাডেমিক সনদ নয়। শিক্ষকতা ছাড়া এ সনদ আর কোনো কাজে আসবে না। স্কুল- কলেজ ছাড়াও অনেকের একাধিক নিবন্ধনের বিপরীতে একাধিক সনদ আছে। কারো তো একাধিক পদে, একাধিক সনদে চাকরি করার সুযোগ নেই।
সুতরাং সনদ যার, চাকরি তার- এমনটিই হওয়া উচিত। জটিলতা এড়াতে সুপারিশ প্রাপ্তদের তালিকা থেকে সরিয়ে আলাদা করুন এবং বৈধ্য সনদধারীদের নিজ নিজ নীতিমালায় নিয়োগ সুপারিশ করুন। অন্যথায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে, আমরা আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হবো। এভাবে অব্যবস্থাপনা চলতে থাকলে অদূরভবিষ্যৎ-এ যোগ্য শিক্ষক বাইরের কোন দেশ থেকে আমদানি করতে হবে। আর যদি শিক্ষার গুণগত মান অক্ষুন্ন রাখতে চান, তাহলে ঐসকল জাল সনদধারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে, এনটিআরসিএ’র সকল অনিয়ম তদন্ত করতে হবে, বৈধ সনদধারীদের নিয়োগ দান করতে হবে।
চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতেও কাটছে না কৃত্রিম শিক্ষক সংকট। এনটিআরসিএ এতদিন পর এসে এখন বলছেন- খালি থাকা পদগুলোর জন্য বিষয়ভিত্তিক প্রার্থী নেই। যে বিষয়ে এরকম সমস্যা সে বিষয়গুলোর পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষক ঘাটতি পূরণ করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেন যোগ্য প্রার্থীর তালিকা থাকা সত্বেও বছরে একবার (দুইবার গেজেট পরিপন্থি) পরীক্ষা নিয়ে প্রতিবার একটু একটু করে সকল বিষয়ের প্রার্থীদের তালিকার পিছনে দিকে ঠেলে দিচ্ছেন? চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে বেশ কিছু বিষয়ে ৪০ মার্কেও সুপারিশ করা হয়েছে। অথচ তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৫ হাজার পদে কোনো সুপারিশ করা হয়নি। এনটিআরসিএ বলেছিল কোনো আবেদন পড়েনি, কিন্তু আবেদনকারীর তথ্য উপস্থাপন করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নিবন্ধিত শিক্ষকের মধ্যে এত বৈষম্য, এত বিভেদ, এত পার্থক্য এর আসল উদ্দেশ্য কি?
এনটিআরসিএ’র ওয়েবসাইটে এযাবৎ নিবন্ধিত বিষয়ভিত্তিক প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় ছয় লক্ষাধিক। এতএত নিবন্ধিত শিক্ষক থাকতে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ৫৪ হাজারেরও অধিক পদের বিপরীতে মাত্র ১২ হাজার, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ৬৮ হাজার পদের বিপরীতে মাত্র ২৮ হাজার শিক্ষক সুপারিশ কেন? বাকী পদগুলোর জন্য কী শিক্ষক পাওয়া গেল না, নাকি সুপারিশ করা হলো না? আসলে প্রকৃত নিবন্ধনধারী চাকরি প্রত্যাশীর সংখ্যাটা মাত্র ৮১ হাজার। গণবিজ্ঞপ্তি নামক প্রহসনে বারবার পদ ফাঁকা থেকে যাচ্ছে আর তৈরি হচ্ছেন কৃত্রিম শিক্ষক সংকট। শিক্ষক সংকট থাকার কারণে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভালো ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের এমপিও বন্ধ হচ্ছে, নিবন্ধিত প্রকৃত চাকরি প্রত্যাশীরা অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে, কচিকাঁচা শিক্ষার্থীদের গুণগত ও মানসম্মত শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে এবং সর্বোপরি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
শাহবাগে প্যানেল প্রত্যাশীদের আন্দোলন চলাকালিন বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত হয় এনটিআরসিএ’র এক চঞ্চল্যকর তথ্য। এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যানের ড্রাইভার, এ্যানালাইসিস টাকার বিনিময়ে উচ্চ মার্কের সনদ প্রদান করে, আবার চাকরিও পাইয়ে দেয়। বৈধ সনদধারীর পাশাপাশি উচ্চ মার্কের এই অনৈতিক সনদের বৈধতা যাচাই করার কোনো পদ্ধতি আছে কী? এভাবে চলতে থাকলে প্রকৃত যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ সাধারন নিবন্ধনধারীর ভাগ্য কোনো দিনই ফিরবে না। বৈধ সনদধারীরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে আর অবৈধরা চাকরি করছে। কেউ কেউ হয়তো বলবেন- কেন চাকরির পিছনে ছুটছেন, আত্মনির্ভরশীল হন। কথাটা আপাতত সুন্দর হলেও- পাল্টা প্রশ্ন আসতেই পারে- চাকরি তাহলে কারা করবে? শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি- মুজিববর্ষে কেউ বেকার থাকবে না, ঘরে ঘরে চাকরি দিবেন। এসব কি কথার কথা, নাকি বাস্তবতাও আছে? জাল সনদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হলেও প্রতিকারের ব্যাপারে এত উদাসীনতা কেন? সেই অসাধু ড্রাইভার ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদৌও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কী?।
যে দিতে পারে, তার কাছেই চাওয়া উচিত। সে হিসেবে এনটিআরসিএ’র নিবন্ধিত শিক্ষকেরা কোনো ভুলে নেই। শিক্ষকেরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন, আশা ভরসা শেষ আশ্রয়স্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষাবান্ধব সরকার অবশ্যই শিক্ষাক্ষেত্রের শিক্ষক নিয়োগ জটিলতা দূরীকরণ ও অধিকার বঞ্চিত শিক্ষকদের পাশে দাঁড়াবেন বলে বিশ্বাস রাখেন।
এনটিআরসিএ’র তথ্যমতে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে স্কুল-কলেজে প্রকৃত চাকরি প্রত্যাশীর সংখ্যা হিসেবে আবেদন পড়েছে মাত্র ৮১ হাজার। যেহেতু এনটিআরসিএ’র অনিয়মের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা-মোকদ্দমা রয়েছে এবং এনটিআরসিএ বিলুপ্ত করে বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন (এনটিএসসি) নামে পিএসির আদলে কমিশন গঠনের চিন্ত ভাবনা চলছে। কৃত্রিম শিক্ষক সংকট দূরীকরণ ও নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে নিবন্ধিত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যোগ্য শিক্ষকদের মূল্যায়নের বিকল্প নেই।
সুতরাং ১-১২তম (মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের ৩৯০০/২০১৯ নং মামলার রায় অনুযায়ী বলা- ১২.০৬.২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ তারিখের পূর্বে যারা শিক্ষক নিবন্ধন সনদ লাভ করেছে তাদের ক্ষেত্রে বয়সীমা শিথিলযোগ্য অর্থাৎ নিবন্ধিত শিক্ষকেরা চাকরির বয়সসীমার মেয়াদ শেষ হবার একদিন আগেও সুপারিশ পেলে আইনগত নিয়োগে কোনো বাধা নেই) যাদের আবেদন ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে গ্রহণ করা হয়নি, তাদের ডেমো আবেদন নিয়ে (১৩-১৬তম পর্যন্ত যাদের সনদের মেয়াদ নির্দিষ্ট) সমন্বয় করে নিবন্ধিত শিক্ষকদের আইনগত অধিকার এবং লালিত স্বপ্ন ফিরিয়ে দিতে প্যানেল (ব্যাচভিত্তিক) নিয়োগই একমাত্র সহজ সমাধান।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমলমতি-কঁচিকাঁচা শিক্ষার্থীর স্বপ্নের লেখাপড়া বাস্তবায়নে এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে- সরকারের একটু সুনজর ও সদি”ছায় শিক্ষাক্ষেত্র বিড়ম্বনাময় ব্যর্থ অধ্যায় না হয়ে, হতে পারে সাফল্যগাথা ও গৌরবের ইতিহাস।