মেয়রের নির্দেশে তিন মাদ্রাসা ছাত্রকে নির্যাতন

চুরির অপবাদে

শিক্ষাবার্তা ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে কথিত চুরির অভিযোগে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে হাত বেঁধে মারধর শেষে মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার সকালে উপজেলার গোপালদী পৌরসভার রামচন্দ্রদী গ্রামে মেয়র আবদুল হালিম শিকাদারের নির্দেশে ওই ৩ শিশুর ওপর এসব করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

আরও অভিযোগ উঠেছে, খবর পেয়ে শিশুদের অভিভাবকরা ঘটনাস্থলে এসে কান্নাকাটি করেও মেয়র ও তার অনুসারিদের মন গলাতে ব্যর্থ হয়। উল্টো এ বিষয়ে মুখ খোলায় এক শিশুর পরিবারকে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে মেয়রের পরিবার। অপর ২ শিশুর পরিবার মেয়রের লোকজনের ‘নির্যাতন’ থেকে মুক্ত হয়েই গা ঢাকা দিয়েছে।

মেয়র আবদুল হালিম শিকদার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। তার দাবি, শিশু ৩টি পেশাদার চোর। তারা ইতোপূর্বেও তার সাইজিং মিলে চুরি করেছে। আজ সোমবার চুরির প্রমাণ পেয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা চুরির কথা স্বীকার করে। শিশুদের অভিভাবকদের ডেকে পাঠালেও তারা না আসায় ভবিষ্যতে যেন তারা চুরি না করে সেজন্য তাদের চুল কেটে দেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সকালে গোপালদী মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী বায়েজিদ (১০), মো. হাসানের ছেলে ও রামচন্দ্রদী মাদ্রাসার হেফজ্ বিভাগের ছাত্র সিয়াম (৮) এবং জজ মিয়ার ছেলে একই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আফরীদ (৮) মক্তবে যাওয়ার পথে গোপালদী পৌরসভার মেয়র হালিম শিকদারের মালিকানাধীন শিকদার সাইজিং মিলের সামনে খেলছিল। সেসময় তারা মিলের বাইরে পড়ে থাকা কয়েকটি নাট-বোল্ট তুলে নিয়ে খেলা করছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, মেয়র লোকজন নিয়ে মিলের সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে ওই শিশুদের খেলতে দেখে শিশুরা সেখানে কী করছিল, তা জানতে চান। পরে ৩ শিশুকে চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ধরে নিয়ে গোপালদী বাসস্ট্যান্ডে যান। সেখানে শিশু ৩টিকে বেঁধে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে শিশু বায়োজিদের চাচা কালাম ও আল আমিনসহ অন্য শিশুদের অভিভাবকরা কাঁকুতি-মিনতি করে মেয়রকে শিশুদের ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু মেয়র ও তার অনুসারিদের এতে মন গলেনি। তারা শিশু ৩টিকে চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করে মাথার চুল কেটে দিয়ে ছেড়ে দেয়।

বায়েজিদের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই আমার ছেলেসহ তিন শিশুকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার দাবি করছি। অন্য ২ শিশুর পরিবার ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গোপালদী পৌরসভার মেয়র আবদুল হালিম শিকদার বলেন, ‘আমার মিলটি ভেঙে এর যন্ত্রাংশ সামনের মাঠে রেখেছি। রাতে পাহাদার থাকলেও দিনে থাকে না। এ সুযোগে এর আগেও বেশ কয়েকবার চুরির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকালেও ২ শিশু মিলের যন্ত্রাংশ চুরির সময় আমি সেটি দেখে ফেলি। তখন তাদের সঙ্গে আর কে আছে জানতে চাইলে ২ শিশু জানায় তাদের সঙ্গে আওর একজন রয়েছে। তখন ওই শিশুর বাড়িতে গেলে সেও ইতোপূর্বে চুরির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে।

মেয়র আরও বলেন, ‘শিশুরা চুরির মাল কোথায় বিক্রি করেছে জানতে চাইলে তারা গোপালদী বাসস্ট্যান্ডের কথা বলে। সেখানে গিয়ে সংশ্লিষ্ট দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ৩ শিশু ইতোপূর্বেও তার দোকানে মালামাল বিক্রি করেছে। তখন শিশুদের অভিভাবকদের খবর দিলে একজনের অভিভাবক এসে তার সন্তানকে নিয়ে যায়। কিন্তু অপর ২ জনের অভিভাবক না আসায় তারা যেন ভবিষ্যতে আর চুরি না করে সেজন্য তাদের চুল কেটে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

তবে শিশু ৩টিকে মারধরের কথা অস্বীকার করেন মেয়র।

এ বিষয়ে আড়াইহাজার থানার ওসি আজিজুল হক হাওলাদার বলেন, ‘এ ব্যপারে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৭/০২/২৩