শিক্ষাবার্তা ডেস্কঃ সাদা অ্যাপ্রোনের আবেদন অন্য রকম। নীরবে নিভৃতে এক ‘যুদ্ধের’ জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার তরুণ-তরুণী। এই যুদ্ধের নাম মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা। ৪ হাজার ৩৫০টি আসনের প্রতিটির বিপরীতে লড়বে প্রায় ৩২ জন। কেন্দ্রে এক ঘণ্টার মেধার যুদ্ধে যারা জয়ী হবে, তারা পাবে স্বপ্ন ছোঁয়ার সুযোগ। অনেক সময় ভালো প্রস্তুতি থাকার পরেও পরীক্ষার হলে চাপের কারণে জানা প্রশ্নের উত্তর কেউ কেউ ভুল করে আসে। তুমি যদি এই ৬০ মিনিট মাথা ঠান্ডা রেখে পর্যাপ্ত প্রশ্নের উত্তর করে আসতে পারো, তাহলে নিশ্চিত, সেই সাদা অ্যাপ্রোনটা তোমারই হবে।
বিগত বছরগুলো অ্যানালাইসিস করলে দেখতে পাবে—৭০ থেকে ৭৫ মার্কস পেলে একটা সিট নিশ্চিত করা যায়। তুমি হয়তো বায়োলজির একটা অধ্যায় পড়েছ। তারপর প্রশ্নব্যাংক থেকে শেষ ১০ বছরের প্রশ্ন সলভ করবে। দেখবে বেশির ভাগই পারছ। প্রশ্ন কিন্তু অত কঠিন হয় না। কঠিন লাগে কেন তাহলে? এর কারণ হলো, একসঙ্গে সব বিষয়ের পরীক্ষা দিতে হয়, তা-ও আবার আলাদা থাকে প্রশ্ন। ৬০ মিনিটে ১০০টি উত্তরের বৃত্ত ভরাট করতে হয়। তাই প্রশ্ন সহজ হলেও আমাদের কাছে কঠিন হয়ে যায়। এর জন্য চাই অনুশীলন আর সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা। বিগত সালের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন সচরাচর নিম্নোক্ত কয়েক জায়গা থেকে করা হয়।
সব রাইটারের বইয়ের চ্যাপ্টারের পেছনের MCQ প্রশ্ন ডাইরেক্ট বা ইনডাইরেক্ট। (২০২১-২২ সালেও এসেছে)
বিগত MAT-এর প্রশ্ন হুবহু
বিগত MAT-এ আসা প্রশ্নের ধরন/ওই টপিক রিলেটেড
HSC-এর বেসিক টপিক/প্রশ্ন, যা সৃজনশীল শেখার মাধ্যমে আয়ত্ত হয়।
বইয়ের বোল্ড লাইন ও সংজ্ঞা
পারসেন্টেজ, অনুপাত, পরিমাণ।
গত কয়েক বছরের এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন।
আবিষ্কারকের নামের সঙ্গে রিলেটেড টপিক।
সাম্প্রতিক বেশ আলোচিত টপিক (যেমন—ভ্যাকসিন)
জীবনে বইয়ের কোনো এক চ্যাপ্টার যখন একবার রিডিং পড়েছিলে, তখন দু-এক লাইন চোখে পড়েছিল। পরে আর কখনো সেই লাইনগুলো পড়া হয়নি। ওই লাইনগুলোই তুলে দেওয়া হবে পরীক্ষায়। তোমার চেনা চেনা লাগবে, তবুও অচেনা থাকবে। আন্দাজে উত্তর করবে। অনেকের মিলবে, আবার অনেকের মিলবে না।
জীবনে দেখা হয়নি এমন প্রশ্ন (১, ২ বা ৩টা)
সাধারণ জ্ঞানের জন্য যা পড়বে
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক তথ্য ও বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কিত তথ্য। এতটুকু পড়লে ৫-৭ মার্কস বা ৮ মার্কস পেতে পারো।
বাকি মার্কস আসবে সাম্প্রতিক (মেট্রোরেল), পুরস্কার/পদক, খেলাধুলা, অর্জন, বিশেষ ঘটনা, মহামারি, উন্নয়ন প্রকল্প ইত্যাদি থেকে।
ইংরেজির জন্য মেডিকেল ভর্তির বিশ্লেষণ (Most Important To Least Important):
Correction, parts of speech identification.
Translation
Appropriate Preposition
Synonym Antonym (BCS, MAT, VARSITY, JOBS)
Tense
Spelling
Group Verb
Phrase and Idioms, Clause
Right Form of verbs, Verbs
Noun, Gerund, Verbals
Number, Voice, Narration
Adverb, Adjective, Pronoun
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিটি বিষয় ভালো করে রিভিশন দেওয়া জরুরি। কারণ, একমাত্র ভালো রিভিশনই পারে পরীক্ষায় সঠিকভাবে প্রশ্নের উত্তর দিতে সহায়তা করতে। মনে রাখতে হবে, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অনেক জটিল কিংবা প্যাঁচানো ইকুয়েশন অথবা মাথা ঘোরানো রিঅ্যাকশন খুব একটা থাকে না। ভালো প্রস্তুতি থাকলে খুব সহজেই সব প্রশ্নের উত্তর করা যায়। একে একে সব বিষয় নিয়ে কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে, সেটা বিস্তারিত নিচে তুলে ধরা হলো:
প্রথমে বায়োলজি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের পূর্ণ দখল থাকতে হবে। তারপরও বায়োলজির ক্ষেত্রে সব চ্যাপ্টার থেকেই প্রশ্ন হতে পারে। নার্ভাস সিস্টেম, ইমিউনিটি, কোষ রসায়ন চ্যাপ্টারগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যায়, জুওলজিতে মোটামুটি সবাই একই রকম মার্কস পায়। জুওলজিতে হিউম্যান বডি রিলেটেড চ্যাপ্টারগুলো বারবার ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। কিছু চ্যাপ্টার স্যারদের অনেক পছন্দের। যেমন: রক্ত, বোনস। এসব চ্যাপ্টার দিয়ে যেহেতু বেশি প্রশ্ন আসে, তাই এসব চ্যাপ্টারকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। মানব জীবনে ধারাবাহিকতা, প্রাণীর আচরণ—এগুলো যতটুকু না পড়লে নয়, সেটুকু পড়লেই চলবে। বোটানিতে শুধু হাসান স্যারের বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ চ্যাপ্টারগুলো বারবার পড়তে হবে। অধ্যায় ১, ৪, ৯ থেকে একাধিক প্রশ্ন আসতে পারে। প্রচুর প্রশ্ন সমাধান করতে হবে এবং যে টপিকে সমস্যা, সেটি বই থেকে পড়ে ফেলতে হবে।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে রসায়ন অংশে নম্বর তোলাটাই বেশ কঠিন। প্রতিটি অধ্যায়ের পেছনের MCQ এবং বোর্ড প্রশ্নগুলো বারবার পড়তে হবে। এ ক্ষেত্রেও শর্ট সিলেবাসকে প্রাধান্য দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। জৈব যৌগ এবং পর্যাপ্ত ধর্ম পারলেই মোটামুটি ১০-১১ নম্বর পাওয়া সম্ভব।
প্রথম পত্রের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ অধ্যায় থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। আর দ্বিতীয় পত্রের ১ম, ৪র্থ, ৫ম অধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় পত্রের ৩য় অধ্যায়ের ছোট ছোট অঙ্কগুলো প্রায়ই আসে। রসায়ন অংশে ভালো করতে হলে রসায়ন দ্বিতীয় পত্রকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত, এই অংশে জৈব যৌগ আছে, যাতে অনেকেরই সমস্যা থাকে। বিভিন্ন নামধারী বিক্রিয়া, শনাক্তকারী বিক্রিয়া, অ্যালকোহল, এলডল ক্যানিজারো, ইলেকট্রোফাইল নিউকোফাইল, শেষ দিকের কিছু মুখস্থ তথ্য বারবার চর্চা করতে হবে। মেডিকেলে ভর্তির জন্য ফিজিকসের পড়া তুলনামূলক কম হয়ে থাকে। ফিজিকসের ক্ষেত্রে শর্ট সিলেবাস পড়াই উত্তম। ১৫টা চ্যাপ্টার থেকে ২০টা প্রশ্ন আসবে। এর জন্য সূত্র, একক, মাত্রা, ছক, বৈশিষ্ট্য, কিছু ছোট ফর্মুলা ম্যাথ পড়লেই চলবে।
সাধারণ জ্ঞান ও ইংরেজির জন্য আসলে শেষ সময় তেমন পড়ার কিছু নেই। এত দিন যা পড়ে এসেছ তার ওপরে আস্থা রাখতে হবে। প্রতিদিন এক-দুই ঘণ্টা সময় দিলেই প্রস্তুতি হয়ে যাবে।
তানভীর তাসওয়ার তপু, চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।