নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহঃ জেলার নান্দাইল উপজেলায় মৃত নারীকে জীবিত বানিয়ে দলিল রেজিস্ট্রির ঘটনা ঘটেছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারির এমন এক ঘটনা সম্প্রতি সামনে এসেছে।
জানা গেছে, উপজেলার গাংগাইল ইউনিয়নের অরণ্যপাশা গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের স্ত্রী ফুলবানু বিবি মারা গেছেন ২০১৬ সালে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি ফুলবানুকে জমিদাতা হিসেবে জীবিত দেখিয়ে নান্দাইল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে একটি হেবা (দানপত্র) দলিল নিবন্ধিত হয়। দলিল নম্বর-১৩০৩। এ দলিলটি সম্পাদনা করেছেন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সদস্য মো. নজরুল ইসলাম।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ফুলবানু মৃত্যুর আগে একমাত্র মেয়ে মিনাকে নিয়ে বিক্রি হওয়া ওই জমিতে বসবাস করতেন। মা মারা গেলে মেয়ে মিনা চলে যান শ্বশুরবাড়িতে। বর্তমানে ঢাকায় স্বামীর সঙ্গে বসবাস করছেন। ফুলবানুর কোনো ছেলে নেই। অথচ আব্দুল বারেক নামে এক ব্যক্তি মৃত ফুলবানুর ছেলে পরিচয় দিয়ে তার নামে ৪৯ শতক জমির হেবা (দানপত্র) দলিল নিবন্ধন করে নেন। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে জানা যায়, নাম এক হলেও তারা ভিন্ন মানুষ। মৃত ফুলবানু বিবির স্বামী মৃত আব্দুল জলিল, মা মৃত তালজান, বাবার নাম দেওয়া নেই, জন্ম তারিখ ১৯২৯ সালের ৯ জুলাই। অন্যদিকে বারেকের মায়ের নামও ফুলবানু, তার স্বামী হাবিবুর রহমান, মা জরিজস বানু, বাবা তালে হোসেন ও জন্ম তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯।
সরেজমিন জানা যায়, ওই ফুলবানুকে দেখাশোনা করতেন হাবিবুর রহমানের স্ত্রী মজিদা খাতুন। হাবিবুরের কাছে ফুলবানু বৈধভাবে ২৩ শতক জমি বিক্রি করেছিলেন। অন্যদিকে ১৭ শতক জমির মালিক মতিউর রহমান ও বাকি ৯ শতক জমির মালিক সামছুদ্দিন মাস্টার। তারা জমি দখলে রেখে চাষাবাদ করছেন। উক্ত বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর থেকে কথিত জমির মালিক বনে যাওয়া বারেক এলাকা ছেড়ে লাপাত্তা। তবে প্রতিবেশী বারেকের মায়ের নাম একই হওয়ায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। মায়ের নাম ঠিক রেখে বাবার নামের সঙ্গে ওরফে আব্দুল জলিল (মৃত ফুলবানু বিবির স্বামীর নাম) বসিয়ে মাকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে হেবামূলে জমি রেজিস্ট্রি করে নেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আব্দুল বারেকের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে দলিল লেখক নজরুল ইসলাম ওরফে ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘আমি কাগজপত্র সঠিক পেয়েই হেবার কাগজপত্র করে দিয়েছি। এতে দোষের কী! দীর্ঘ কর্মজীবনে এই এক ধরা খাইলাম। আপনারা যেভাবেই হোক মীমাংসা কইরা দেন।’
নান্দাইল উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মীর ইমরুল কায়েস আলী বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। তারপরও যারা দলিল লেখক, তাদের বিশ্বাস করেই দলিল রেজিস্ট্রি করি। তারাই আমার সামনে ক্রেতা-বিক্রেতাদের চেনেন বলে ঘোষণা দেন। এখন তারাই যদি প্রতারণার আশ্রয় নেন, তাহলে কী বলার আছে। এ বিষয়ে ওই অভিযুক্ত দলিল লেখকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৪/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়