মা হিসাব বুঝেনা
জাহাঙ্গীর বাবু
মা আমার লেখা পড়া জানে না
হিসাব বুঝেনা, মাপতে জানেনা
এক চামচ ভাত চাইলে প্লেট ভরে দেয়,
এক টাকা চাইলে দশ টাকা,
একশ টাকা দেয়,
মা আমার হিসাব বুঝেনা।আমার কষ্ট দেখলেই
মায়ের গচ্ছিত টাকা পয়সা
হাতে তুলে দেয় হিসাব ছাড়া
এই ছেলের আড়ালে ওই ছেলেকে
ওই ছেলের আড়ালে ওই মেয়েকে
আহ,
হাতের চুড়ি,গলার হার কিছুই দিতে বাকী রাখে না
আমার মা অশিক্ষিত,আমার মা হিসাব জানেনা।
আমার মা হিসাব বুঝে না।আমার মায়ের বিবেক নেই,
আমার মায়ের জ্ঞান নেই
অতচ এই মা আমাকে শিক্ষা দিয়েছে,
এই মা আমাকে
নিজে আধাপেট থেকে এক কাপড়ে পরে
নিজের শখ আহ্লাদ পুরণ না করে
আমাকে মানুষ করেছে।
কারন আমার মা হিসাব বুঝেনা।জান্নাত সেতো পরকালে
জান্নাতের সুখ পেয়েছি ইহকালে
যখন কোলে তুলে আদর করেছিলো,
তার আঁচলে আমার ঘাম মুছেছিল
আমার প্রস্রাব পায়খানা
মায়ের ঘায়ে মেখে আদর করেছিলো।
আমারতো সে দিনই
দুনিয়াতেই জান্নাত পাওয়া হয়েছিলো।আমার এ বৃদ্ধ বয়সেও
মা যখন মাথায় হাত বুলায়
জান্নাতের সুখ আমি পাই।মা দিবস নামে পাশ্চ্যাতে দেশে সৃষ্টি মা দিবস
আমরাও সোশ্যাল মিডিয়া,ভিজুয়াল মিডিয়া করছি সরগরম,আজ মা দিবস, মা দিবস
আমি বলি,
এমন কোন দিন আছে মা দিবস নয়
আমার যে প্রতি দিন মা দিবস হয়।মা কে দেখেই মন খুশি হয়,
মায়ের শাসনে শিক্ষা রয়
মায়ের শাসনে সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যত রয়।
মা কে দেখে হাসি দাও ভাই-বোন, বন্ধু,
কে জানে নসীবে তোমার হজ্ব আছে কি নেই?
মৃত্যুর জন্যতো কত উসিলা আছে বন্ধু
জন্মের জন্য মায়ের গর্ভই চাই,মা ই চাই।
কষ্টের হিসাব না করা একটা মা চাই।মাকে নিয়ে কি লিখব এই অধম আমি
মা ই যে লিখেছে আমায়!
অসুস্থ্য হলেই জায়নামাজে বসে যায়
আল্লাহকে বলে
আমায় রোগ দাওগো আল্লাহ, সন্তানকে নয়,
ওষুধে কাজ না হলে দোয়া পড়ে ফুক দেয়।
মা যে শুধুই মা, যতক্ষন না সন্তান সুস্থ্য হয়
হার মানানো দায়,সিজদায় পড়ে রয়।সে মা যখন বৃদ্ধ হয়,মায়ের সেবা যত্নে ভাগ হয়
কে পারবে, কে পারবে না,কে রাখবে,কে রাখবে না।
কার আয় বেশি কার আয় কম,কার ঘরে কয় দিন খাবে,
হিসাব চলে কড়া হিসাব।
ছেলের বউয়েরা সেবা করবে
নাকি ছেলে করবে হাদিস দলিলে ব্যাখ্যা হয়।যে মা আমাদের মেধা বুদ্ধি বিকাশে
ক্ষেতে খামারে মাঠে খেলা করায়
পুকুরে সাঁতার শিখায়,মেলা নিয়ে যায়,
রেষ্টুরেন্টে বসে খাওয়ায়
সে মাকেই আমরা আমাদের সন্তানের পাহারাদার বানাই
সে মাকেই চার দেয়ালে বন্ধি করি।
মা বন্দি খাঁচায় ছটফট করে,
বারান্দায় দাঁড়িয়ে পড়শী বাড়ি দেখে, আকাশ দেখে।
সে মাকে কোন কোন কুলাঙ্গার বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায়!কখনো মা কাঁদে,কখনো হাসে,
চোখের জলে মায়ের বুক ভাসে,
মা অভিমান করে বলে,
তোরা সুখে থাক বাবা,আমি ভালো আছি।
কারন আমার মা হিসাব বুঝেনা।সংসার জ্বালায় একদিকে
মা তার জান্নাতি আঁচলে নিজের চোখ মোছে।
অন্য দিকে,ছেলে সন্তান যদি কুলাঙ্গার না হয়,
ছেলে নিজের সংসার বাঁচাতে আড়ালে চোখ মোছে!বউয়েরা হিসাব করে,
কোন বউয়ের আদর বেশি,কোন বউয়ের কদর বেশি
মা কখন কোন বউকে ছাড় দিয়েছে?
কোন ছেলের বউকে অতিরিক্ত শাসন করেছে!
কোন ছেলেকে গালি দিয়েছে,
কোন ছেলেকে বেশি আদর করেছে!
কোন নাতিকে আদর করেছে! পাল্লায় তুলে মাপা হয়!
আমার বলতে ইচ্ছা হয়
ছেলের বউয়েরা, যেন মা নয়,
ওরা কোন দিন যেন বৃদ্ধ না হয়!
ছেলেরা, বউয়েরা,মেয়েরা,নাতিরা হিসাব বুঝে,
আমার মা হিসাব বুঝেনা।মা আমার হিসাব বুঝেনা।ছেলের ঘর,গাড়ি বাড়ি,ব্যাবসা সব হয়,
মায়ের খরচেই টান পড়ে!
মা অসুস্থ্য হলে,
হাসপাতালের খরচের ভাগ বাটোয়ারা হয়
মা থাকতেও মৃত্যুর পরে ও মায়ের হাড়ি,পাতিল,
লেপ তোষক বাটোয়ারা হয়।
ছেলে – বউ,কন্যা -জামাই গুনতে জানে
অসিয়ত নিয়ে টাল বাহানা,হিসাব বুঝে কড়া গন্ডায়
মা, হিসাব বুঝেনা,মা বলে, তোরাই ভাগ করে নে
তোরা সবাই সমান,আমি কম বেশি বুঝি না।এ বন্ধুরা,
আমার মা অশিক্ষিত,আমার মা হিসাব জানেনা।
আমার মা হিসাব বুঝে না।
এই ছেলে বউয়েরা,
এই ছেলেরাই বৃদ্ধ বয়সে
তার সন্তানদের কাছে সেবা যত্ন আশা করে।
কি সত্যি বলছি না।মাকে নিয়ে কি লিখব এই অধম আমি
মা ই যে লিখেছে আমায়!
শুধু বলব-
মা ই যে লিখেছে আমায়!
আমার মা হিসাব জানেনা।
আমার মা হিসাব বুঝে না।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৮/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়