নিজস্ব প্রতিবেদক।।
মানসম্মত শিক্ষক তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ খুব জরুরি। এক্ষেত্রে সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের পাশাপাশি বর্তমানে বেসরকারি কলেজগুলোতেও পাঠদান করা হচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে মানসম্মত শিক্ষার ঘাটতি দেখা দিলে তাতে শিক্ষকতার কোনো উন্নতি হবে না। এজন্য বেসরকারি কলেজগুলোর শিক্ষাদান যেন সনদ প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে, সেটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান ২০১৮ ও ২০২২-এর তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। এর বিপরীতে বেসরকারি কলেজগুলোয় শিক্ষার্থী বেড়েছে। পরিসংখ্যানের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে দেশে ১৪টি সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ৩ হাজার ৯৫১ এবং ১০৪টি বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ৫ হাজার ১৭৬ শিক্ষার্থী ছিলেন। পরবর্তী সময়ে বেশকিছু বেসরকারি কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ২০২২ সালে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সংখ্যা নেমে আসে ৯০-তে। তবে কলেজ সংখ্যা কমলেও এ সময় শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি কলেজের সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকলেও শিক্ষার্থী সংখ্যা কমেছে। কিন্তু গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোর বড় একটি অংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, এগুলোয় নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে ভর্তি এবং ফরম পূরণ করে পরীক্ষা দিলেই সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। যে কারণে স্কুলশিক্ষকদের বড় একটি অংশ এখন বেসরকারি কলেজগুলোর দিকে ঝুঁকছেন।
বস্তুত শিক্ষার মান নিশ্চিতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে ঘাটতি থেকে গেলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্য সরকারি কলেজগুলোয় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়কে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু বেসরকারি কলেজগুলোর ক্ষেত্রে ক্লাস না করেই সনদ প্রদানের অভিযোগ রয়েছে এমন দাবি সংশ্লিষ্টদের। এজন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। অভিযুক্ত কলেজগুলোর ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়ার আইনি জটিলতাকে দূর করতে হবে। এছাড়া কলেজগুলো নিজেদের অর্থে কার্যক্রম পরিচালনা করে। যে কারণে সরকারি কিছু সহযোগিতার ব্যবস্থা থাকলে মান নিশ্চিত করার বিষয়টি সহজ হতো বলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মত দিয়েছেন। এজন্য জনবলের ঘাটতি থাকলে সেটিও দূর করা প্রয়োজন।
অন্যদিকে শিক্ষকরা নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি পান না, এটিও বড় একটি কারণ। এক্ষেত্রে বিএড সম্পন্ন করার জন্য স্কুলশিক্ষকদের ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ শিক্ষকস্বল্পতার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের সহজে ছুটি দিতে চায় না।
শিক্ষকতার মতো পেশায় ভালো করতে হলে এবং শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। অথচ এ প্রশিক্ষণই এখন সবচেয়ে অবহেলিত হচ্ছে। ফলে দেশের বেহাল শিক্ষা ব্যবস্থা সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়। তাই শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির স্বার্থে শিক্ষকরা যেন উন্নত প্রশিক্ষণ পান তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষেরও প্রয়োজনে ছাড় দেয়ার মানসিকতা থাকা প্রয়োজন।
উন্নত দেশের শিক্ষকদের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এজন্য রাষ্ট্র কর্তৃক শিক্ষা খাতে বরাদ্দসহ যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ গুরুত্ব পায়। তাই শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে গড়ে তোলার জন্য মানসম্মত শিক্ষক প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।
এমনিতেই বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় অনেকে আসতে চান না। তার ওপর এ পেশার প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ পেতে যদি ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয়া হয়, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না মেলে, তাহলে এর প্রভাব সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর পড়বে। কারণ স্কুল পর্যায়েই যদি শিক্ষার্থীদের ভিত তৈরি করে দেয়া না যায়, তার প্রভাব পরবর্তী সময়েও দেখা যাবে। যার প্রমাণ বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে পাওয়া যায়।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৪/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়