মনিপুর স্কুলে পাল্টাপাল্টি অবস্থান প্রতিষ্ঠানটিতে অচলাবস্থা

নিউজ ডেস্ক।।

রাজধানীর মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের দায়িত্ব নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে রয়েছে দু’টি পক্ষ। ফলে দীর্ঘ দিন ধরেই শিক্ষা কার্যক্রম ও দাফতরিক কাজ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে দু’টি পক্ষকেই আদালতের রায় মেনে নেয়া আহ্বান জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি এবং শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। দীর্ঘ দিন থেকেই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন নিয়ে রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। বিবদমান দু’টি পক্ষ পাল্টাপাল্টি ছুটিও ঘোষণা করেছে।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আদালতের রায় মেনে নিয়ে জাকির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের কথা বলেছেন কামাল আহমেদ মজুমদার। মনিপুর স্কুলের রূপনগর শাখায় এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আদালত যে রায় দিয়েছেন আমরা তা পালন করব। আদালত স্কুলের প্রবীণ শিক্ষক জাকির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন।

তিনি বলেন, আমরা মনিপুর স্কুলের শিক্ষকদের এমপিও বাতিল করেছিলাম একটি মহৎ উদ্দেশ্যে। আমরা শিক্ষকদের বেতনের অংশ গরিব-দুঃখীদের বা কোনো একটি সংস্থায় দিয়ে দেয়ার জন্য বলেছিলাম। তবে এখন আমরা আমাদের শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি চাই।

মনিপুর স্কুলে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে টিউশন ফি আদায়ের অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, আমরা প্রথমে একটি ব্যাংক থেকে ১০ কোটি টাকা এবং পরবর্তী সময়ে আরো ৪০ কোটি টাকা নিয়ে বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ করেছি। কাজেই জিম্মি করে ফি আদায়ের কোনো প্রশ্নই আসে না। শিল্প প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় নিয়ে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ৮০০ শিক্ষক কর্মহীন হয়ে পড়ার আতঙ্কে রয়েছেন। এই অচলাবস্থা দূর করতে এবং মনিপুর স্কুল রক্ষায় সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে স্কুলের বিভিন্ন শাখার পরিচালনা পরিষদের সদস্য, থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্রমতে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) ২০২০ সালে তদন্ত করে বলেছিল মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ পদে মো: ফরহাদ হোসেনের নিয়োগ অবৈধ। এরপর ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আরেক তদন্তেও বেরিয়ে আসে অধ্যক্ষ পদে ফরহাদ হোসেনের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি বিধিসম্মত হয়নি। এ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেই বিষয়টি উচ্চ আদালতে গড়ায়। কারণ, প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির প্রভাবশালী একটি পক্ষ ফরহাদ হোসেনের পক্ষে।

এ অবস্থায় আদালতের নির্দেশে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক মো: জাকির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিতে নির্দেশ দেয় মাউশি। পরিচালনা কমিটির সভাপতির কাছে লেখা পত্রে তিন কর্মদিবসের মধ্যে এই ব্যবস্থা নিতে বলেছিল মাউশি। তবে পরিচালনা কমিটি এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এরপর গত সোমবার (৬ মার্চ) দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির মূল বালিকা বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যান জাকির হোসেন। তখন একদল শিক্ষক তাকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে গিয়ে আসনে বসান। পরে বিভিন্ন ক্যাম্পাসের শিক্ষকরা এসে তাকে অভিনন্দন জানান। এ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ওই দিন ক্যাম্পাসে পুলিশও আসে।

এ ঘটনার জের ধরে পরিস্থিতি আরো অস্থিতিশীল হয়। এ অবস্থায় গত বুধবার (৮ মার্চ) অস্থায়ী পরিচালনা কমিটির সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেন এক নোটিশে বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত শ্রেণী কার্যক্রমসহ সব দাফতরিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন। তবে ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক’ জাকির হোসেন একই দিন আরেক নোটিশে সভাপতির দেয়া ছুটির নোটিশটিকে ‘বিধিবহির্ভূত’ উল্লেখ করে প্রধান শিক্ষকের সংরক্ষিত তিন দিনের ছুটি (উল্লেখ্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা নির্ধারিত ছুটির বাইরেও বছরে তিন দিন ছুটি দিতে পারেন) থেকে শুধু বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) ছুটি ঘোষণা করেন।

নোটিশে এক দিনের ছুটি ঘোষণা করে তিনি বলেন, আজ রোববার থেকে যথারীতি শ্রেণী ও দাফতরিক কার্যক্রম চালু থাকবে। নোটিশে এ বিষয়ে সভাপতির সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
ওই দিন সন্ধ্যায় নিয়মবহির্ভূত পাঁচ দিন স্কুল বন্ধ রাখার নোটিশ দেয়ায় স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির অস্থায়ী সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় শিক্ষা বোর্ড। এতে তিন কর্মদিবসের মধ্যে কেন তাকে অব্যাহতি দেয়া হবে না এ মর্মে শোকজ করা হয়েছে।

কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর আবু তাহের মো: মোয়াজ্জেম হোসেন সই করা এ চিঠিতে এই শোকজ করা হয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব প্রদানে অবহেলা এবং এখতিয়ারবহির্ভূক্ত পাঁচ দিন ছুটি দেয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত নির্দেশনা সরাসরি অমান্য। তাকে সরকারের নির্দেশ অমান্য করে ছুটি ও অধ্যক্ষকে যোগদানের বাধা দেয়ার ব্যাখ্যা তিন কর্মদিবসের মধ্যে দিতে হবে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১২/০৩/২০২৩   

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়