মক্তব শিক্ষা বেগবান করা জরুরি

মহিউদ্দিন প্রধান।।

মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মূলে রয়েছে শিক্ষা। মানুষ জন্মের পর শিক্ষার মাধ্যমে নিজেকে মানুষ হিসেবে উপযুক্ত করে তুলে। আর এ শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে মক্তবের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সাধারণত মক্তব বলতে আমরা কোরআন শিক্ষার স্থানকে বুঝি। যেখানে ইসলামের প্রাথমিক, মৌলিক ও অতীব প্রয়োজনীয় শিক্ষা দেওয়া হয়। মুসলিম সমাজে মক্তব শিক্ষা হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্য। কোরআন-হাদিসের প্রাথমিক বিষয়াদি পাঠদান করা হয় মক্তবে। সেই সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগি, অজু, গোসল, নামাজ, রোজা ইত্যাদির বিধিবিধানও শিক্ষা দেওয়া হয়।

মক্তব ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন আদব-কায়দা, শিষ্টাচার, সভ্যতা, ভদ্রতা, সৌজন্য, নম্রতা, বড়দের শ্রদ্ধা, ছোটদের স্নেহ করার শিক্ষা দেওয়া হয়। তাছাড়া হালাল-হারাম, পাক-পবিত্রতার মতো প্রয়োজনীয় বিষয়াদি খুব সহজে শিক্ষা দেওয়া হয়।

মক্তবে শিক্ষালাভ করা ইসলামের প্রথম দিকে শিশু-কিশোর, যুবক-বৃদ্ধ সব বয়সের সব জ্ঞানপিপাসুরা জ্ঞান আহরণ করতেন। মুসলিম বিশ্বের সর্বত্রই মসজিদের সঙ্গে মক্তব ও বিশাল পাঠাগার এবং গবেষণাগার গড়ে উঠেছিল। সময়ের পরিক্রমার সঙ্গে সঙ্গে এটা শুধু শিশুদের শিক্ষা পর্যন্ত এসে ঠেকেছে।

শিশুশিক্ষার প্রাথমিক ভিত্তি হলো- মক্তব। শিশুরা শৈশবে পিতা-মাতার কাছ থেকে কিছু শিক্ষালাভের পর মক্তবে শিক্ষালাভের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে। সেখানে তারা আদর্শ শিক্ষকদের দ্বারা আদর্শভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ পায়। মক্তব মসজিদকেন্দ্রিক হওয়াতে নিজ ঘর ছাড়া আল্লাহর ঘরে নির্ভয়ে ও নিঃসংকোচে প্রবেশ করতে পারে। কারণ সেখানে যেকোনো সময়ে কারও অনুমতির প্রয়োজন হয় না। মক্তব শিক্ষা শিশুকে নৈতিক ভিত্তি তৈরি করে। শিশুর শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক গুণাবলিগুলো শিক্ষা দেয়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আদর্শ ও নৈতিকতা দিকটি সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। আমরা প্রতিনিয়ত এর মারাত্মক পরিণতি চোখের সামনেই দেখছি। মক্তবপড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী বড় হয়ে স্রষ্টাকে অস্বীকার এবং অন্যায়-অবাধ্য ও সমাজবিরোধী কাজে লিপ্ত হয় না, কারণ মক্তব তার ভেতরে স্রষ্টার চেতনা সৃষ্টি করে। মক্তবের শিক্ষার মাধ্যমে শুধু শিক্ষক নয়, আদর্শ মানুষ সৃষ্টির দিকে শিক্ষকের লক্ষ্য থাকে।

কোরআন-হাদিসের জ্ঞানার্জন প্রত্যেকের ওপর ফরজ। আর মক্তব বিশুদ্ধ কোরআন-হাদিস শিক্ষার ক্ষেত্রে মক্তবের ভূমিকা প্রশংসনীয়। কোরআন শিক্ষা প্রসঙ্গে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই উত্তম, যে নিজে কোরআন শেখে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।’

কোরআন-হাদিসের প্রাথমিক জ্ঞান মক্তবে শিক্ষার মাধ্যমে শিশুকে পরবর্তী জীবনের ইসলামকেন্দ্রিক হিসেবে গড়ে তুলে। তাছাড়া মক্তবে যা শিক্ষা দেওয়া হয়, সেগুলো হলো- ইবাদতের প্রাথমিক মাসয়ালা-মাসায়েল, ইসলামের বুনিয়াদি শিক্ষা, শৃঙ্খলা ও নিয়ম-কানুন, মানবতা ও চেতনাবোধ জাগ্রত করা ও আদব-শিষ্টাচার ও নৈতিকতা শিক্ষা দান।

মক্তব গণশিক্ষার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হলেও বর্তমানে মসজিদকেন্দ্রিক এই শিক্ষা বিলুপ্তির পথে। এর অন্যতম কারণ- দিন দিন ধর্ম থেকে দূরে সরে যাওয়া ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুসরণ।

সেই সঙ্গে মানুষ দিন দিন শহরকেন্দ্রিক হচ্ছে ও আধুনিকতায় গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। যার ফলে মানুষ আগের মতো মক্তবে পাঠায় না। ফলে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ছে বর্তমান প্রজন্ম। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে করণীয় হলো- ব্যক্তি, সামাজিক পর্যায়ে জোর দেওয়া এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মক্তব শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা। তাছাড়া মক্তব শিক্ষা পরিচালনায় আর্থিক সহযোগিতাসহ, মক্তবকে সুসংগঠিত করা এবং এর কার্যক্রমকে বেগবান করা।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৭/১১/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়