ভুল প্রশ্নে এইচএসসি পরীক্ষা চললো ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট

শরীয়তপুরঃ জেলার একটি কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নপত্রে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের পরীক্ষার সময় গতকাল মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে সদর উপজেলার ডোমসার জগৎচন্দ্র ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে।

২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের মধ্যে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটই ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেন ৪২ শিক্ষার্থী। বিষয়টি ধরা পড়ার পর ভুল প্রশ্ন পরিবর্তন করে বাকি সময় সঠিক প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হয়। তবে এ জন্য কোন সময় বাড়ানো হয়নি। অর্ধেকের কম সময়ে সব প্রশ্নের উত্তর লিখতে না পেরে ফলাফল খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন পরীক্ষার্থীরা।

ভুক্তভোগীরা নড়িয়া উপজেলার ইসমাইল হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনায় জড়িত দুই শিক্ষককে পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি পরীক্ষার আগে উপজেলা প্রশাসন পরীক্ষার্থীদের জন্য দুই সেট প্রশ্ন পাঠায়। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হল সুপারের ফোনে খুদে বার্তা দিয়ে জানিয়ে দেন কোন সেটের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে। ওই খুদে বার্তায় দেওয়া সেট নম্বর অনুযায়ী শিক্ষকেরা প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেন।

মঙ্গলবার ইউএনওর খুদে বার্তা অনুযায়ী ২ নম্বর সেটের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভুল করে ৪ নম্বর সেটের প্রশ্নপত্র শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হয়। এ ভুলটি পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট পর শিক্ষকদের নজরে আসে। তখন পরীক্ষার্থীদের পুনরায় ৪ নম্বর সেটের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয় এবং ওই প্রশ্ন অনুযায়ী পরীক্ষা দিতে বলা হয়। ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহ করায় পরীক্ষার্থীদের ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট সময় অপচয় হয়।

কিন্তু পরে আর তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়নি। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী ৭০ নম্বরের পুরো উত্তর লিখতে পারেননি। এমনকি ভুলের কথা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকেরা এড়িয়ে যান। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও শিক্ষা বিভাগকেও জানানো হয়নি।

পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা ঘটনাটি তাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জানান। তখন ইসমাইল হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকেরা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে যান। ওই শিক্ষার্থীরা এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের কাছে একটি অভিযোগ দেন। বিষয়টি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীরা জানান, সঠিক সেটে তাঁদের ১ ঘণ্টা ১০ মিনিটে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তারা এ সংক্ষিপ্ত সময়ে সব প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারেননি। এখন পরীক্ষার ফল খারাপ হলে এর দায়কে নেবে? আবার পরীক্ষা না নিলে এই বিষয়ে সকলেই ফেল করবেন বলছেন শিক্ষার্থীরা।

ইসমাইল হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক জি এম সামিউল ইসলাম বলেন, এই ৪২ জন শিক্ষার্থীর ভালো রেজাল্ট পাওয়ার সম্ভাবনা তো নেই, উল্টো তাঁদের ফল খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শিক্ষকদের এমন ভুলের কারণে শিক্ষার্থীদের ওপরে পড়বে খারাপ প্রভাব।

তবে ডোমসার জগৎচন্দ্র ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের হল সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, ভুল করে এমন ঘটনা ঘটেছে। তারা বুঝতে পেরে সঠিক প্রশ্নের সেট সরবরাহ করেছেন। তবে পরীক্ষার্থীদের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, কেন্দ্র সচিব ও হল সুপারের ভুলে এ ঘটনাটি ঘটেছে। এমন একটি ভুলের কথা তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাননি। আর এ ঘটনায় জড়িত শিক্ষক মনিরুল ইসলাম ও রতন চন্দ্র দাসকে পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৬/০৯/২০২৩     

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়